Advertisement
E-Paper
BB_2025_Lead Zero Banner

KMC Elections 2021: ‘সুতোর মতো জল ধরতেই ভোট পেরিয়ে যাবে’

পুর প্রতিনিধি বা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েও সুরাহা হয় না। কারণ, কোনও অজ্ঞাত কারণে নির্দিষ্ট সময় অন্তর এমন বাড়ি তৈরির অনুমতি পেয়ে যান প্রোমোটারেরা।

তিন নম্বর বরোর কোথাও পুরসভার কল থেকে সুতোর গতিতে জল পড়ছে।

তিন নম্বর বরোর কোথাও পুরসভার কল থেকে সুতোর গতিতে জল পড়ছে। নিজস্ব চিত্র।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়, নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২১ ০৭:১০
Share
Save

ছিল টালির বাড়ি। তাতেই ১০ ফুট বাই ১৪ ফুটের এক-একটি ঘরে বাড়িওয়ালা-ভাড়াটে মিলিয়ে থাকত ছ’টি পরিবার। বাড়িতে আলাদা করে কোনও জলের কলের ব্যবস্থা ছিল না। ভরসা শুধুই রাস্তার ধারের পুরসভার পানীয় জলের কল। শৌচালয় বলতে ছিল একটিই ঘর!

সেই বাড়িই এখন রাতারাতি পাঁচতলা ‘বিল্ডিং’। ছ’টি পরিবারের মধ্যে পাঁচটি রয়ে গিয়েছে একতলায়, আগে যেমন ভাড়া ছিল তেমনই। বাড়িওয়ালা উঠে গিয়েছেন দোতলার একটি দু’কামরার ফ্ল্যাটে। বাকিগুলিতে এসেছে আরও ন’টি পরিবার। প্রতিটি ফ্ল্যাটে আলাদা শৌচাগার থাকলেও পুরসভার থেকে জলের সংযোগ নেওয়া হয়নি। এমন বাড়ি করলে সংযোগ পাওয়ার অবশ্য কথাও নয়। কারণ, ওই জমিতে একতলার বেশি বাড়ি করার কোনও অনুমতিই নেই। পুরোটাই হয়েছে পুর বিধি উড়িয়ে বেআইনি ভাবে। সহজ সমাধান হিসাবে পাম্প বসিয়ে পুরসভার পাইপলাইন থেকে জল তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন প্রোমোটার!

এমনই একাধিক বাড়ির জন্য তিন নম্বর বরোর কোথাও পুরসভার কল থেকে সুতোর গতিতে জল পড়ছে, কোথাও বালতি, গামলা বসিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন দিয়ে থাকলেও জল মিলছে না। সমাধান খুঁজতে কেউ ছুটছেন পুরসভায়, কেউ স্থানীয় পুর প্রতিনিধির দফতরে। কাজ কিছুই হচ্ছে না। তিন নম্বর বরোয় এটাই সব চেয়ে বড় সমস্যা বলে জানান স্থানীয়েরা। তাঁদের অভিযোগ, অবৈধ ভাবে বাড়ি করার এই রোগ বরোর সর্বত্র। পুর প্রতিনিধি বা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েও সুরাহা হয় না। কারণ, কোনও অজ্ঞাত কারণে নির্দিষ্ট সময় অন্তর এমন বাড়ি তৈরির অনুমতি পেয়ে যান প্রোমোটারেরা। যা তৈরি করে জলের এই সমস্যা।

তিন নম্বর বরোর বাসিন্দা, আইনজীবী রাজা ধর বললেন, ‘‘পাঁচটি পরিবার আগে যে পরিমাণ জল ব্যবহার করত, তা দিয়ে তো ১২টা পরিবারের চাহিদা মিটবে না। ফলে বেশি পরিমাণ জল টানতে গিয়ে যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে। ভোটের দিনেও মনে হয়, ওই জল ধরতেই সময় পেরিয়ে যাবে।’’

আরও এক জলের সমস্যার কথা জানালেন বরোর ১৩, ২৯, ৩০ এবং ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, এই এলাকার বহু রাস্তায় বৃষ্টি হলেই জল জমে যায়। বছরের পর বছর নিকাশির উন্নতি হয় না। খাল নিয়েও রয়েছে সমস্যা। অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার জন্য তো বটেই, সাম্প্রতিক কালে করোনার জন্যও খালের আবর্জনার উপরে দায় চাপাতে দেখা গিয়েছে এলাকার জনপ্রতিনিধিদের। খালপাড়ের সৌন্দর্যায়নের নামে একাধিক মূর্তি বসলেও পলি নিষ্কাশন ব্যবস্থাই হয়নি।

এই বরোর বেশ কিছু এলাকা বেআইনি পার্কিংয়ের অভিযোগে বিদ্ধ। পুরসভার নির্বাচিত সংস্থা খালধারের রাস্তায় পার্কিং ব্যবসা শুরু করেও তা চালাতে পারে না। তাদের দাবি, বিধি উড়িয়ে প্রায়ই এলাকার দাদার ফরমান আসে কোন গাড়ির পার্কিং নেওয়া যাবে না, তা জানিয়ে। দেখা যায়, চালকল, ডালকলের কয়েকশো গাড়িকে প্রতি মাসে ছেড়ে দিতে বলা হয়। এ ভাবে ব্যবসা শুধুই লোকসান।

অধিক মাত্রায় রাসায়নিক ব্যবহার হয়, এমন কারখানা জনবসতির মধ্যে চালানোর অভিযোগও রয়েছে ৩ নম্বর বরোর বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে। বসতির মধ্যে কোনও রকম অগ্নি-বিধি না মেনে গুদাম চালানোর অভিযোগও রয়েছে। এলাকার দাদার স্নেহধন্য হওয়ায় সেই সব গুদাম-মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাই নেওয়া হয় না বলে দাবি স্থানীয়দের।

এত অভিযোগের পরেও অবশ্য গত বিধানসভা নির্বাচনে এই বরোর সব ক’টি ওয়ার্ড থেকে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। ২০১৫ সালের পুর ভোটে শুধুমাত্র ২৯ নম্বর ওয়ার্ড হাতছাড়া হয়েছিল তাদের। এ বার অবশ্য সব ওয়ার্ডেই জয়ের স্বপ্ন দেখছে তৃণমূল। বরোর কোঅর্ডিনেটর অনিন্দ্য রাউত বললেন, ‘‘জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী কারণ, কিছু সমস্যা থাকলেও জলের বিরাট হাহাকার কোথাও তেমন নেই। তবে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার নিরিখে জল সরবরাহ বাড়ানো প্রয়োজন। বেলেঘাটার চাউলপট্টি এলাকায় পাম্পিং স্টেশন তৈরির পরে জলসঙ্কটের সিংহভাগ মিটেছিল। বিধান শিশু উদ্যানে বুস্টার পাম্পিং স্টেশন তৈরির পরিকল্পনা হয়েছে।’’ বেআইনি প্রোমোটিং নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘অভিযোগ পেলে পুরসভার বিল্ডিং বিভাগকে জানাই। কড়া পদক্ষেপ করার অধিকার আমার নেই।’’ ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কোঅর্ডিনেটর অমল চক্রবর্তী বললেন, ‘‘কিছু অভিযোগ থাকলেও গত কয়েক বছরে মানুষ যা পরিষেবা পেয়েছেন, তাতে খুশি।’’ বরোর একমাত্র কংগ্রেস কোঅর্ডিনেটর প্রকাশ উপাধ্যায়ের যদিও দাবি, ‘‘শুধু নিজের ওয়ার্ডের কাজই নয়, এই পুর বোর্ডের ব্যর্থতাও তুলে ধরছি। অতীতের সব কথা ভুলে যান, মানুষ নতুন ফলাফল তৈরি করবেন।’’

বছর দুই আগে ডেঙ্গিতে মৃত এই বরোর স্কুলপড়ুয়া তনয়া ঘোষের মা বললেন, ‘‘বহু ওয়ার্ডে দলাদলি আছে। যেখানে বিধায়কের সমর্থন বেশি, সেখানে কাজ করেন না বিধায়কের বিরোধী গোষ্ঠীর বলে পরিচিত কোঅর্ডিনেটর। মেয়ের বেলায় যা দেখেছি, এখন যখন ডেঙ্গি বাড়তে শুরু করেছে, দেখছি ফের একই অবস্থা।’’

KMC elections 2021 water problem Borough Office

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।