বার্তা: আর জি কর-কাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবাদী স্লোগান-সহ তৈরি হচ্ছে কালো রঙের ঘুড়ি। লেবুতলা পার্ক এলাকায়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে এত দিন শহরের রাস্তা মুখরিত হয়েছে স্লোগানে, গানে, কবিতায়। প্রতিবাদীরা রাত থেকে ভোর পর্যন্ত রাস্তায় অবস্থান-বিক্ষোভ করেছেন। এ বার সেই প্রতিবাদই পৌঁছে যাবে মহানগরের আকাশে। বিশ্বকর্মা পুজোয় যে ঘুড়ি উড়বে, তাতেও লেখা থাকবে ‘জাস্টিস ফর আর জি কর’। আকাশে এই প্রতিবাদের ঘুড়ি ওড়ানোর প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে পাড়ায় পাড়ায়।
লেবুতলা পার্কের কাছে বহু পুরনো ঘুড়ির দোকান অজিত দত্তের। তাঁর দোকানে রাখা ঘুড়ির মধ্যে
সিংহভাগই দখল করে আছে কালো রঙের ঘুড়ি। কোনওটির উপরে লেখা ‘জাস্টিস ফর আর জি কর’, কোনওটিতে আবার লেখা ‘বিচার পাক অভয়া’। লেখার পাশে একটি মোমবাতি। অজিত জানান, ঘুড়ি অনেক উঁচু পর্যন্ত উঠলেও এই লেখা মানুষ দেখতে পাবেন। আর জি করের ঘটনা সকলের মনকে ব্যথিত করেছে। তাই বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে দোকানে রাখা বেশির ভাগ ঘুড়ির রংই কালো।
অজিত জানান, প্রথমে তিনি বুঝতে পারেননি যে, এই ঘুড়ির এত চাহিদা হবে। স্বাধীনতা দিবসের
পরে প্রথমে ১০০টি ঘুড়ি বানিয়েছিলেন। সেগুলি খুব দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়। শহরের বিভিন্ন ঘুড়ির দোকানের তরফে যেমন পাইকারি দরে ওই ঘুড়ি কেনা হয়েছে, তেমনই অনেকে ব্যক্তিগত ভাবেও দোকানে এসেছেন।
ঘুড়ির কারিগর সাদেক শেখ এক মনে এই প্রতিবাদের ঘুড়ি তৈরি করে যাচ্ছিলেন। বহু বছর ধরে তিনি এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। সাদেক বলেন, ‘‘ক্রিকেট বিশ্বকাপের আগে বিশ্বকাপের ঘুড়ি তৈরি হয়েছে। লোকসভা, বিধানসভা ভোটের আগে রাজনৈতিক দলগুলি তাদের দলীয় পতাকার রঙে ঘুড়ির বরাত দেয়। কিন্তু প্রতিবাদের ঘুড়ি কোনও দিন তৈরি করিনি। এ যেন একটা অন্য রকম আবেগ। এমন প্রতিবাদ আগে দেখিনি।’’
ডানকুনি থেকে ছেলে উজানকে নিয়ে প্রতিবাদের ঘুড়ি কিনতে এসেছিলেন দীপক ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছি। রাত দখল করেছি। এ বার প্রতিবাদে ঘুড়ি ওড়াব। প্রতি বার বিশ্বকর্মা পুজোর দিন ঘুড়ি ওড়াই। কিন্তু এ বার বিশ্বকর্মা
পুজোটা অনেকটাই আলাদা।’’ দীপক জানান, সমাজমাধ্যমে তাঁদের ঘুড়ি ওড়ানোর গ্রুপ আছে। সেই গ্রুপে আলোচনা চলছে, এ বার কী ভাবে, কখন, কোথায় ঘুড়ি ওড়ানো হবে। শ্যামবাজারের একটি ঘুড়ির দোকানে এমন ঘুড়ি কিনতে এসেছিলেন শ্যামল দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘এ বার ঘুড়ি উড়বে, কিন্তু ঘুড়ির লড়াই হবে না। সবাই আকাশে স্বাধীন ভাবে ঘুড়ি ওড়াবে।’’ শ্যামল, দীপকদের মতে, দৈনন্দিন যাপনের মধ্যেই প্রতিবাদকে জুড়ে নিতে চান তাঁরা।
শহরের বিভিন্ন ক্লাবও বিশ্বকর্মা পুজোয় প্রতিবাদী বার্তা লেখা ঘুড়ি ওড়ানোর আয়োজন করেছে।
যেমন, পাটুলির কিশোর বাহিনীর
তরফে সুবোধ রায় জানালেন, তাঁরা ১০০০টি এমন ঘুড়ির বরাত দিয়েছেন। সুবোধ বলেন, ‘‘ক্লাবের কিশোর-কিশোরী সদস্যেরাই শুধু নয়, যে কোনও বয়সের মানুষই এই ঘুড়ি ওড়াতে পারবেন। শুধু পাটুলির আকাশেই নয়, বিজয়গড়, গাঙ্গুলিবাগান, গড়িয়ার আকাশেও এই ঘুড়ি উড়বে।’’ সুবোধ জানান, এত সংখ্যক ঘুড়ির উপরে যদি ‘জাস্টিস ফর আর জি কর’ লেখার সময় না থাকে, তা হলে ঘুড়ির উপরে ‘জাস্টিস ফর আর জি কর’ স্টিকার সাঁটানো হবে।
বিশ্বকর্মা পুজো যত সামনে আসছে, ততই এ ভাবে প্রতিবাদে যোগদানের উৎসাহ বাড়ছে। সুবোধ জানান, এমনও অনেকে আছেন, যাঁরা কোনও দিন লাটাই ধরেননি। তাঁরাও এই কয়েক দিনের মধ্যে ঘুড়ি ওড়ানো শিখে নিতে চান। ঘুড়ি ওড়াতে পারলেই যে তাঁরাও
আকাশে প্রতিবাদের নিশান এঁকে
দিতে পারবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy