সাংবাদিক বৈঠক করছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। — নিজস্ব চিত্র।
জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে ‘কালিমালিপ্ত’ করার চেষ্টা করছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুক্রবার স্বাস্থ্য ভবনের সামনের ধর্নাস্থলে দাঁড়িয়ে এমনটাই জানিয়ে দিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। পাশাপাশি এ-ও জানালেন, তাঁদের আন্দোলনকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চাইলে তাঁরা আগের মতোই প্রতিক্রিয়া জানাবেন। বৃহস্পতিবার নবান্নের বৈঠক ভেস্তে যাওয়ায় তাঁরা যে হতাশ হয়েছেন, সে কথাও জানিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। পাশাপাশি তাঁরা আবারও জানালেন, ‘চেয়ার’কে সম্মান করেন। মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ তাঁরা চাননি। সেই সঙ্গেই আরও এক বার মনে করিয়ে দিলেন তাঁদের পাঁচ দফা দাবি।
স্বাস্থ্যভবনের কাছে মঙ্গলবার থেকে অবস্থান বিক্ষোভ করছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। অভিযোগ, সেখানে বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল উপস্থিত হলে তাঁকে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দেওয়া হয়। অগ্নিমিত্রা যদিও দাবি করেছিলেন, তিনি ওই পথ ধরে বিজেপির দফতরে যাচ্ছিলেন। এর আগে ফিয়ার্স লেনে চিকিৎসকদের আন্দোলনে বিজেপি সাংসদ তথা প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় গেলে তাঁকে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দেওয়া হয়েছিল। এই প্রসঙ্গে শুভেন্দু দাবি করেন, জুনিয়র ডাক্তারেরা এই স্লোগান দেননি। কিছু ‘বহিরাগত’ এই স্লোগান দিয়েছেন, যাঁরা মদ, গাঁজা খান। এ বার এই নিয়ে শুভেন্দুকে কটাক্ষ করলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। শুক্রবার তাঁরা জানান, ওই ‘গো ব্যাক’ স্লোগান তাঁদের তরফেই তোলা হয়েছিল। আন্দোলনকারীদের কথায়, ‘‘যাঁরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আমাদের আন্দোলনকে ব্যবহার করতে চেয়েছেন, প্রথম থেকেই আমরা তাঁদের বিরোধিতা করেছি। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বা অগ্নিমিত্রা পালের মতো নেতা-নেত্রীকেও আন্দোলনের মঞ্চ থেকে গো ব্যাক স্লোগান শুনতে হয়েছে।’’ এর পরেই আন্দোলনকারীরা সরাসরি আঙুল তোলেন শুভেন্দুর দিকে। তাঁদের কথায়, ‘‘বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আমাদের আন্দোলনকেই কালিমালিপ্ত করতে নেমেছেন। এই ঘটনা (গো ব্যাক স্লোগান) নাকি দুশ্চরিত্র বহিরাগতের ষড়যন্ত্রের ফলে ঘটেছে। আমরা সুস্পষ্ট ভাবে তাঁকে এবং অন্য যাঁরা আমাদের আমাদের আন্দোলনকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে ব্যবহার করতে চান, তাঁদের বলতে চাই, এই নিয়ে আগেও যা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলাম, আবার একই জানাব।’’
বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে নবান্নে বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও তা ভেস্তে যায়। এই প্রসঙ্গে শুক্রবার আন্দোলনকারীরা জানান, আগের দিনের বৈঠক নিয়ে তাঁরা যথেষ্ট আশাবাদী ছিলেন। তাঁদের এই আন্দোলন এখন শুধু চিকিৎসকদের নয়, সাধারণ মানুষের আন্দোলন হয়ে উঠেছে। নবান্নের তরফে ৫টায় বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা সেখানে দেরি করে পৌঁছন। সেই নিয়ে শুক্রবার ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের কথায়, ‘‘৪৫ মিনিট দেরিতে গিয়েছিলাম আমরা। তার জন্য ক্ষমা চাইছি। আমরা ৩৪ দিন ধরে রাস্তায় রয়েছি। তাই আশা করছি, ওই দেরি ক্ষমা করে দেবেন।’’ আন্দোলনকারীরা বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচারের দাবিতে অনড় ছিলেন। সে কারণে শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যায় বৈঠক। সেই প্রসঙ্গে আন্দোলনকারীরা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজে প্রশাসনিক বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচার করেন। তাই এ ক্ষেত্রেও আইনভঙ্গের কিছু দেখিনি। আমরা যে পাঁচ দফা দাবি নিয়ে গিয়েছিলাম, তার মধ্যে সব বিচারাধীন নয়। আমাদের নিরাপত্তার বিষয়টি তো বিচারাধীন নয়! তা ছাড়া, সরাসরি সম্প্রচার হলে নির্যাতিতার বাবা-মাও তা দেখতে পেতেন।’’
বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে জানিয়েছিলেন, তিনি ইস্তফা দিতে রাজি। কিন্তু বিচার নয়, আসলে চেয়ার চাওয়া হচ্ছে। এই প্রসঙ্গেই আন্দোলনকারীরা বললেন, ‘‘আমরা চেয়ারকে সম্মান করি। পদত্যাগ আমরা চাইনি। আমাদের একটাই চেয়ার, হাসপাতালের ওপিডির চেয়ার।’’ তাঁরা এ-ও স্পষ্ট করে দেন যে, বৈঠক ভেস্তে যাওয়ায় তাঁরা হতাশ হলেও তার পরে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দেননি। বৃহস্পতিবার সকালে, নবান্নে যাওয়ার অনেক আগেই তাঁরা আরজি কর-কাণ্ডে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়েছিলেন। যে ভাবে এর আগে সুপ্রিম কোর্টে চিঠি দিয়েছিলেন তাঁরা। হতাশ হয়ে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দেওয়ার দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন তাঁরা। শুক্রবারের বৈঠকে আবারও নিজেদের পাঁচ দফা দাবি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। কী সেই দাবি? প্রথমত, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সমস্ত দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত করা, অপরাধের উদ্দেশ্য সামনে আনা এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। দ্বিতীয়ত, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচার। তৃতীয়ত, সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে ‘ব্যর্থ প্রমাণিত’ কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েলের ইস্তফা। চতুর্থত, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। পঞ্চমত, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভয়মুক্ত পরিবেশ গড়া এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুনিশ্চিত করা। শুক্রবার চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিলেন, ৩৪ দিন ধরে তাঁরা রাস্তায়। তাঁরা ‘মরসুমি প্রতিবাদী’ নন। দাবি না মেটা পর্যন্ত অবস্থান বিক্ষোভ চলবে তাঁদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy