ইউজিসির প্রশ্নের মুখে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর প্রশ্ন, হাই কোর্টের নির্দেশ, ইসরোর বিজ্ঞানীদের পরিদর্শন— প্রথম বর্ষের এক পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুতে প্রশ্নের মুখে যাদবপুর কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যেই র্যা গিং রুখতে একাধিক কড়া পদক্ষেপের সুপারিশ করল বিশ্ববিদ্যালয়েরই তৈরি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি। ছাত্রদের বহিষ্কার থেকে প্রাক্তনীদের হস্টেল থেকে বার করে দেওয়ার সুপারিশও রয়েছে তার মধ্যে। ফলে সব মিলিয়ে ঘরে ও বাইরে প্রবল চাপের মুখে পড়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
গত ৯ অগস্ট প্রথম বর্ষের এক ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর থেকেই প্রশ্নের মুখে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। র্যািগিং রুখতে তারা কী কী পদক্ষেপ করেছেন, তা নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠেছে। উঠেছে গাফিলতির অভিযোগ। এ বার র্যািগিং নিয়ে কর্তৃপক্ষের দিকেই আঙুল তুলল ইউজিসি। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইউজিসির নির্দেশিকা মেনে র্যা গিং-বিরোধী কমিটি থাকলেও কেন তা সক্রিয় নয়, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মঙ্গলবার বৈঠকে বসে সেই প্রশ্নই তুলেছেন প্রতিনিধিরা। প্রথম বর্ষের ছাত্রদের থাকা নিয়ে কী কী ব্যবস্থা করা হয়েছে, তা নিয়েও একের পর এক প্রশ্ন তুলেছে ইউজিসি।
প্রথম বর্ষের এক পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর থেকেই আতশকাচের নীচে রয়েছে যাদবপুরের হস্টেল। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের একটি ব্লকের তিন তলা থেকে রহস্যজনক ভাবে পড়ে গিয়েছিলেন ওই ছাত্র। অভিযোগ ওঠে, হস্টেলে বেআইনি ভাবে থেকে যান কিছু প্রাক্তনী। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করলেও তাঁরা হস্টেল ছাড়তে চান না। অভিযোগ, তাঁরাই ইন্ধন জোগান র্যা গিংয়ে। ওই ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় ১৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তনীরাও। এর পর থেকেই শিক্ষক এবং ছাত্রদের একটা বড় অংশ দাবি তুলেছিলেন, হস্টেল থেকে এই প্রাক্তনীদের বার করে দেওয়া হোক। এ বার একই নির্দেশ দিল আদালত। কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম মঙ্গলবার জানান, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন পড়ুয়াদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হস্টেল ছাড়তে হবে। এই নিয়ে পদক্ষেপ করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই। হাই কোর্ট আরও নির্দেশ দিয়েছে, কর্তৃপক্ষকে হস্টেলের প্রতিটি ঘরে গিয়ে তা কালি করার কথা বলতে হবে। এই নির্দেশের পরেই প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি এত কিছুর মধ্যে হস্টেলে এখনও থাকছিলেন প্রাক্তনীরা?
শুধু আদালত নয়, ওই প্রাক্তনীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থার সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তৈরি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটিও। কয়েক জন প্রাক্তনীর বিরুদ্ধে এফআইআর করার সুপারিশ করেছে তারা। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৯ অগস্ট, ওই ছাত্রের পড়ে যাওয়ার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের এ-২ ব্লকে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের অনেকেই ঘটনার বিষয়ে সঠিক বর্ণনা দেননি। ঘটনার মোড় অন্য দিকে ঘোরানোর চেষ্টা করেছেন তাঁরা। কেউ কেউ তদন্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টাও করেছেন বলে ওই কমিটির অভিযোগ। তাঁদের সকলকে হস্টেল থেকে বার করে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে রিপোর্টে। পাশাপাশি, ওই রিপোর্টে চার বর্তমান পড়ুয়াকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে বলেও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
এ সবের মধ্যেই রাজ্যপালের কথা মেনে মঙ্গলবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে এসেছেন ইসরোর দুই বিজ্ঞানী। র্যা গিং রোখার জন্য কী ভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার করা যায়, সেটাই দেখতে এসেছেন তাঁরা। প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রমৃত্যুর পর র্যা গিং মোকাবিলায় ইসরোর প্রযুক্তি ব্যবহার করার জন্য সংস্থার চেয়ারম্যান এস সোমনাথের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রাজ্যপালের পাশাপাশি র্যাসগিং রুখতে তৎপর কলকাতা হাই কোর্টও। হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছে, কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি র্যা গিং-বিরোধী কমিটি না থাকে, তা হলে তা গঠন করতে হবে। পাশাপাশি, যে বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রভোট হয়নি, সেখানে সব দিক খতিয়ে দেখে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার নির্দেশও দেন বিচারপতি।
অন্য দিকে, র্যা গিং রুখতে কলকাতা পুলিশের সদর দফতর লালবাজারে গিয়ে মঙ্গলবার আর্জি জানালেন মৃত ছাত্রের বাবা-মা। লালবাজারের পুলিশ কর্তা ও হোমিসাইড শাখার কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। তাঁদের কাছে আর্জি জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্ধ হোক র্যা গিং। তার আগে মৃত পড়ুয়ার মা গোপন জবানবন্দি দেন আলিপুর আদালতে। প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি মতো মঙ্গলবারই কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের উপস্থিতিতে মৃত ওই পড়ুয়ার মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের নিয়োগপত্র।
কমিটির সুপারিশ
প্রথম বর্ষের এক পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউয়ের কাছে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দিল সেখানকার অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি। প্রথম বর্ষের ছাত্রের মৃত্যুর পর ওই কমিটি তৈরি করেছিলেন কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কমিটির রিপোর্টে র্যা গিং রুখতে বেশ কিছু কড়া পদক্ষেপের সুপারিশ করা হয়েছে। র্যা গিংয়ে জড়িত চার বর্তমান পড়ুয়াকে আজীবন বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে রিপোর্টে। পাশাপাশি, কয়েক জন প্রাক্তনীর বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করা হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, গত ৯ অগস্ট, ওই ছাত্রের পড়ে যাওয়ার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের এ-২ ব্লকে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের অনেকেই ঘটনার বিষয়ে সঠিক বর্ণনা দেননি। ঘটনার মোড় অন্য দিকে ঘোরানোর চেষ্টা করেছেন তাঁরা। কেউ কেউ তদন্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টাও করেছেন বলে ওই কমিটির অভিযোগ। তাঁদের সকলকে হস্টেল থেকে বার করে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র বলছে, কমিটির রিপোর্টে সুপারিশ করা হয়েছে, সেই রাতে হস্টেলে যে প্রাক্তনীরা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছ’জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হোক। অভ্যন্তরীণ কমিটির রিপোর্টের সুপারিশ মেনে সিনিয়রদের একাংশকে হস্টেল ছাড়তে হতে পারে। ঘটনার দিন সিনিয়র হয়েও কেন চুপ ছিলেন তাঁরা, প্রশ্ন তুলেছেন খোদ উপাচার্য। ফলে তাঁরা আর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে থাকতে পারবেন না বলেই মনে করা হচ্ছে। এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিল (ইসি)-এর বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, র্যা গিংয়ে জড়িত রয়েছেন এমন ১৫ জন পড়ুয়াকে একটি সেমেস্টার, ১১ জন পড়ুয়াকে দু’টি সেমেস্টার, পাঁচ জনকে চারটি সেমেস্টারে সাসপেন্ড করা হতে পারে। এমনকি, গবেষণা শেষের পর এক গবেষক ছাত্রকে আর ঢুকতে দেওয়া হবে না ক্যাম্পাসে, এমন সিদ্ধান্তও নেওয়া হতে পারে।
ইউজিসির প্রশ্নের মুখে যাদবপুর
যাদবপুরে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় ইউজিসির একগুচ্ছ প্রশ্নের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সোমবারই ইউজিসির চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল যাদবপুরে এসেছেন। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন। সূত্রের খবর, সেখানেই ইউজিসির একাধিক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় কর্তৃপক্ষকে। যার কোনওটিরই সদুত্তর মেলেনি বলে ইউজিসি সূত্রে খবর। ইউজিসির নিয়ম অনুযায়ী, প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি করে র্যা গিং-বিরোধী কমিটি থাকা আবশ্যিক। যাদবপুরে সেই কমিটি ছিল কি না, থাকলে তার কী ভূমিকা, কমিটিতে কে কে ছিলেন, জানতে চাওয়া হয়েছে ইউজিসির তরফে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, র্যা গিং-বিরোধী কমিটি যাদবপুরে কেন সক্রিয় নয়, সে বিষয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের থাকার জন্য হস্টেলে কী কী বন্দোবস্ত করেছেন কর্তৃপক্ষ, জানতে চান ইউজিসি প্রতিনিধি দলের সদস্যেরা। প্রথম বর্ষের ছাত্রদের আলাদা হস্টেলে কেন রাখা হত না? সকলের পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হত কি? ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে কি র্যা গিং-বিরোধী ফর্ম পূরণ করানো হয়? খুঁটিয়ে এ সব তথ্য জিজ্ঞাসা করেন ইউজিসির প্রতিনিধিরা। ইউজিসি সূত্রে খবর, কর্তৃপক্ষের জবাবে তারা সন্তুষ্ট হতে পারছে না। যাদবপুরেই থাকছেন ইউজিসি-র প্রতিনিধিরা। তাঁরা মেন হস্টেল, হস্টেল এবং ক্যাম্পাস পরিদর্শন করবেন বলে খবর। পড়ুয়াদের সঙ্গে কথাও বলতে পারেন।
ঘর খালির নির্দেশ
প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রের মৃত্যুর পরেই অভিযোগ উঠেছিল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে বর্তমান পড়ুয়াদের সঙ্গে থাকেন বেশ কয়েক জন প্রাক্তনী। ওই ছাত্রের মৃত্যুতে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতারও করা হয়েছে কয়েক জন প্রাক্তনীকে, যাঁরা সেই রাতে মেন হস্টেলেই ছিলেন। এ বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ করল কলকাতা হাই কোর্ট। কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম মঙ্গলবার নির্দেশ দেন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন পড়ুয়াদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হস্টেল ছাড়তে হবে। এই নিয়ে পদক্ষেপ করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই। হাই কোর্ট জানিয়েছে, কর্তৃপক্ষকে হস্টেলের প্রতিটি ঘরে গিয়ে তা খালি করার বিষয়ে বলতে হবে। ছাত্রদের জানাতে হবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হস্টেল খালি করার কথা। যাদবপুর নিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা সুদীপ রাহা। সেই মামলার শুনানিতেই হস্টেল খালি করা নিয়ে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি।
র্যা গিং বিরোধী ব্যবস্থা
যাদবপুরে ছাত্রমৃত্যুর নেপথ্যে র্যা গিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে র্যা গিং রুখতে তৎপর কলকাতা হাই কোর্ট। হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের বেঞ্চ জানিয়েছে, কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি র্যা গিং-বিরোধী কমিটি না থাকে, তা হলে তা গঠন করতে হবে। পাশাপাশি জানানো হয়েছে, যে বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রভোট হয়নি, সেখানে সব দিক খতিয়ে দেখে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে সময় মতো নির্বাচন করানোর জন্য কোনও নির্দেশিকা কি রাজ্যের তরফে জারি করা হয়েছে? হলফনামা দিয়ে তা রাজ্যকে জানাতে বলেছে আদালত। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে র্যা গিং-বিরোধী কমিটি বা র্যা গিং-বিরোধী স্কোয়াড গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কি না, তা-ও জানাতে হবে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার পর পরই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে র্যা গিং সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগ তুলে হাই কোর্টে মামলা দায়ের হয়েছিল। প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটি করেছিলেন আইনজীবী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে র্যা গিং, জুনিয়র ছাত্রছাত্রীদের উপর অত্যাচার ঠেকাতে প্রাক্তন সিবিআই ডিরেক্টর আর কে রাঘবনের নামে যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল, ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্ট কমিশন (ইউজিসি)-এর অনুমোদিত কোনও বিশ্ববিদ্যালয়েই সেই নির্দেশিকা সঠিক ভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। ওই মামলার সূত্রেই মঙ্গলবার রাজ্যকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্রভোট করানো এবং র্যালগিং-বিরোধী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গোপন জবানবন্দি
মঙ্গলবার যাদবপুরের মৃত পড়ুয়ার মা জবানবন্দি দেন আদালতে। আলিপুর আদালতে মৃত পড়ুয়ার মায়ের গোপন জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। তার পর কলকাতা পুলিশের সদর দফতর লালবাজারে যান মৃতের মা ও বাবা। সেখানেই কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের উপস্থিতিতে মৃত পড়ুয়ার মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের নিয়োগপত্র। সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন মৃত ছাত্রের বাবা-মা। নবান্ন সূত্রের খবর, তখনই ছাত্রীর মাকে চাকরি দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। তার এক দিনের মধ্যেই চাকরি পেলেন তিনি। মৃত ছাত্রের বাবা জানিয়েছেন, সোমবারই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, নিয়োগপত্র দেবেন। মঙ্গলবার তা হাতে এল। এত দ্রুত সবটা করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি। লালবাজারে পুলিশ কর্তা ও হোমিসাইড শাখার কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন যাদবপুরের মৃত পড়ুয়ার বাবা-মা। তাঁরা দু’জনেই আর্জি জানান, যাতে তাঁদের সন্তান যেন বিচার পায় এবং শিক্ষাঙ্গনে র্যা গিং বন্ধ হয়।
যাদবপুরে ইসরোর বিজ্ঞানী
মঙ্গলবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছেন ইসরোর দুই বিজ্ঞানী। তাঁরা ঘুরে দেখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গেট, ওপেন এয়ার থিয়েটার। র্যা গিং রুখতে প্রযুক্তির ব্যবহারের জন্য কী ধরনের ব্যবস্থা প্রয়োজন, তা খতিয়ে দেখেন তাঁরা। বুধবারও তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন তাঁরা। প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রের মৃত্যুর পর র্যা গিং মোকাবিলায় ইসরোর প্রযুক্তি ব্যবহার করার জন্য সংস্থার চেয়ারম্যান এস সোমনাথের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন রাজ্যপাল বোস। গত ২৪ অগস্ট রাতে একটি বিবৃতি দিয়ে এই কথা জানানো হয়েছিল রাজভবনের তরফে। রাজভবনের ওই বিবৃতিতে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে র্যা্গিং রুখতে উপযুক্ত প্রযুক্তিকে যাতে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে ইসরোর চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন রাজ্যপাল। এ নিয়ে হায়দরাবাদে অ্যাডভান্সড ডেটা প্রসেসিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এডিআরআইএন)-এর সঙ্গেও আলোচনা করেছেন তিনি। এই বিষয়টি ফলপ্রসূ করতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য বুদ্ধদেবকে।
হাসপাতালের নামবদল
যাদবপুরের মৃত ছাত্রের মা-বাবা সোমবার নবান্নে গিয়ে দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। সেখানে মমতা তাঁদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বগুলা গ্রামীণ হাসপাতালের নাম হবে মৃত পড়ুয়ার নামে। তার অব্যবহিত পরেই নদিয়ার বগুলা গ্রামীণ হাসপাতালের নামবদলের সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। মঙ্গলবার সকালে সেই বিজ্ঞপ্তি পৌঁছেছে নদিয়ার জেলা স্বাস্থ্য দফতরে। আশা করা হচ্ছে, দু’এক দিনের মধ্যেই নতুন নাম পাবে হাসপাতালটি। ছাত্রের মায়ের ইচ্ছা, দাদার নামাঙ্কিত হাসপাতালে চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করবে তাঁর ছোট ছেলে। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের প্রিয় মমতাদিদি আমার বড় ছেলেকে চির অমর করে দিলেন। আমি চাই, আমার ছোট ছেলে দিদির আশীর্বাদে ওই হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা করার সুযোগ পাক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy