অপেক্ষা: মহিলাদের নমাজ পড়ার জমায়েতে এক খুদে। শনিবার, নিউ টাউন কমিউনিটি হলে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
নমাজ শেষ হতেই পরস্পরকে জড়িয়ে ধরলেন তরুণী সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সোফিয়া কাজি, প্রৌঢ়া স্কুলশিক্ষিকা রোশেনারা এবং গৃহবধূ আঞ্জুরা দফাদার! চোখে চিকচিক করছে আনন্দাশ্রু! তাঁদের মধ্যে একমাত্র সোফিয়া কর্মসূত্রে সিঙ্গাপুরে, অস্ট্রেলিয়ায় মসজিদে মেয়েদের দলে নমাজ পড়েছেন। নিউ টাউনের বাসিন্দা রোশেনারা, আঞ্জুরারা তাই বলে উঠলেন, ‘‘কখনও ভাবিনি, বাড়ির বাইরে অন্য মেয়েদের সঙ্গে জামাতে (জমায়েত) নমাজ পড়ব।’’
শনিবার, ইদের সকালে কলকাতার আর এক প্রান্তে মোমিনপুরের সাফিনা আহমেদের অভিজ্ঞতাও এক রকম। এত দিন বাড়িতে নানি বা মায়ের নেতৃত্বে ইদের নমাজ পড়া হয়েছে। কিন্তু এই প্রথম খোলা মাঠে দল বেঁধে নমাজ হল। খুশির ইদে ওই মেয়েদের কোলাকুলিতেও তাই বাড়তি আবেগ। মোমিনপুরের হুসেন শাহ পার্কের মাঠের একাংশে এবং নিউ টাউন-কলকাতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রকাণ্ড হলঘরে এ বারই প্রথম ইদের নমাজে মেয়েরাও যোগ দিয়েছিলেন। বীরভূমের মুরারইয়ের মতো গ্রামবাংলার কোনও কোনও অংশে যদিও ইদে মেয়েদের নমাজের জামাতে দেখা যায়। কলকাতা ময়দানে কালীঘাট ক্লাবের কাছের মাঠে মেয়েদের নমাজ পড়ার একটি ছোট জমায়েত বসে। কিন্তু ইদানীং কলকাতার আরও অনেক মহিলাই যে বাড়ির চৌহদ্দির বাইরে নমাজ পড়তে মুখিয়ে আছেন, তা এ দিন স্পষ্ট হয়ে গেল। সোফিয়ার কথায়, ‘‘আমাদের দেশের বেশির ভাগ মসজিদেই পরিকাঠামোর অভাব। নইলে মেয়েরা আরও নানা জায়গায় এমন সুযোগ পেতেন।’’ কয়েক জন বয়স্কা অশক্ত চেয়ারে বসেছিলেন। নিউ টাউনে শতাধিক মহিলাকে ঠাঁই দিতে ঠাসাঠাসি ভিড় উপচে পড়ল।
একই প্রাঙ্গণে মাঝে পর্দার বিভাজন রেখা। ইমামসাহেব মাইকে পুরুষ, মহিলা সবার নমাজই পরিচালনা করলেন। নিউ টাউনের জমায়েতে ‘বাংলায় বলুন’ আওয়াজ উঠতে নমাজের আগের খুতবা বা উপদেশমূলক বক্তৃতার অংশ বাংলাতেই বললেন বালিগড়ির বাসিন্দা হাফেজ় (কোরান বিশারদ) কুতুবুদ্দিন মোল্লা। হুসেন শাহ পার্কে এত দিন বরাবর বাংলাতেই নমাজ পরিচালনা করেছেন ক্যানিংয়ের জীবনতলার একটি মসজিদের ইমাম ক্বারি জিয়াউর রহমান। মেয়েদের এবং ছেলেদের নমাজ পড়ার ভঙ্গির সূক্ষ্ম ফারাক, হাত জড়ো করে রাখার আলাদা ভঙ্গিগুলি ইমাম রহমান সহজ করে বোঝালেন। ইদের খুশি হিন্দু, খ্রিস্টান, জৈন, বৌদ্ধ সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে বলছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে দেশ বা সমাজ পাল্টে দিতে মেয়েদের বিশেষ ভূমিকার কথা বার বার উল্লেখ করলেন।
নিউ টাউনের মুসলিম বাসিন্দারা এত দিন ইদের নমাজ পড়তে আশপাশের কোনও গ্রামের মসজিদ বা কলকাতায় যেতে বাধ্য হতেন। নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের হস্তক্ষেপে এ বার প্রথম তাঁরা নিউ টাউনেই নমাজ পড়ার সুযোগ পেলেন। স্থানীয় মেলার মাঠ বা সার্ভিস রোডে প্রথমে নমাজ পড়ার কথা হলেও শেষে কমিউনিটি হলেই এই সুযোগ মিলল। পুরুষদের পাশাপাশি মেয়েরাও জামাতের অধিকার পাওয়ায় খুশি আল-আমিন মিশন কর্তা দিলদার হোসেন। বললেন, “সপরিবার নমাজ পড়তে পারছি বলে ইদের খুশি ডবল হয়ে গেল!” মুম্বইবাসী দম্পতি জ়াকির হোসেন মোল্লা, সাইমা মোল্লাদের জন্য এই প্রথম পাশাপাশি মেয়ে, পুরুষের জামাতে নমাজ পড়ার অভিজ্ঞতা।
নিউ টাউনে লুৎফুল আলম, সৈয়দ হুমায়ুন সিরাজ, আবু সঈদদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উদ্যোগটির শরিক সমীর গুপ্ত, বৈজয়ন্তী বাউড়, দীপক বিশ্বাসেরাও। সমীরের কথায়, ‘‘ইদের নমাজ এত কাছ থেকে এই প্রথম দেখলাম!” নমাজ শেষে সিমুই, শরবতে হালকা মিষ্টিমুখের আনন্দে মুসলিম, অমুসলিম কেউই বাদ পড়লেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy