স্বাস্থ্য মন্ত্রক প্রতিটি রাজ্যকে অক্সিজেন পরিকাঠামো, বিশেষত, এলএমও এবংপিএসএ প্লান্ট রক্ষণাবেক্ষণের উপরে জোর দিতে বলেছে। ফাইল চিত্র।
পরিস্থিতি তেমন হলে ‘প্রাণবায়ু’র জোগানে যেন টান না পড়ে।তার জন্য করে রাখতে হবে আগাম ব্যবস্থা। এ দেশে ফেরকরোনা-ঝড়ের আশঙ্কা দেখা দিতেই এ বিষয়ে প্রতিটি রাজ্যকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে। নির্দেশিকা জারি করে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, অক্সিজেনের জোগান ঠিক রাখতে এখন থেকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে। শনিবার কেন্দ্রের সেই নির্দেশিকা পাওয়ার পরে রাজ্য সরকারের অবশ্য দাবি, সমস্তজায়গায় অক্সিজেনের পরিকাঠামো প্রস্তুত রয়েছে।
করোনা অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে এ রাজ্য তথাগোটা দেশ দেখেছে অক্সিজেনের হাহাকারের করুণ ছবি। সে সময়ে প্রবল শ্বাসকষ্টে ভোগা একের পরএক রোগী শুধুমাত্র অক্সিজেনের অভাবে চোখের সামনে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েছেন। অসহায় স্বাস্থ্যকর্মীদেরও কার্যত দাঁড়িয়ে দেখতে হয়েছে সেই সব দৃশ্য। কারণ,তাঁদেরও কার্যত বিশেষ কিছু করার ছিল না। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের লোকজন নিজেদের সাধ্য মতো অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে ময়দানে নেমে পড়েছিলেন। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি যে সর্বত্র সামাল দেওয়া গিয়েছিল, তেমনটা নয়।
অতীতের সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের সময়ে নড়েচড়ে বসেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। সমস্ত রাজ্যের সব স্তরের হাসপাতালে অক্সিজেনের পর্যাপ্ত জোগানযাতে থাকে, তার জন্য এলএমও (লিকুইড মেডিক্যাল অক্সিজেন) ট্যাঙ্ক এবং পিএসএ অক্সিজেনপ্লান্ট বসানোর পরিকল্পনা করা হয়। আবার, অক্সিজেনের সঠিক ব্যবহার না হওয়ার জন্যও ঘাটতির বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে কেন্দ্র সমস্তরাজ্যকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়। এর পরে অন্যান্য রাজ্যের মতো এ রাজ্যেও অক্সিজেন ব্যবহারের ‘প্রোটোকল’ জারি করা হয়। শহরের এক প্রবীণ চিকিৎসকের কথায়, “সব মিলিয়ে করোনারদ্বিতীয় ঢেউ চোখে আঙুল দিয়ে আমাদের দেখিয়ে দিয়েছিল,অক্সিজেন কতটা মহার্ঘ হতে পারে। তাই, আবার করোনা আসছে কি না, সেই সংক্রান্ত বিতর্কের আগেঅন্যান্য পরিকাঠামোর পাশাপাশি অক্সিজেনের ব্যবস্থাও দেখে রাখতে হবে আমাদের।”
এ দিন স্বাস্থ্য মন্ত্রক প্রতিটি রাজ্যকে অক্সিজেন পরিকাঠামো, বিশেষত, এলএমও এবংপিএসএ প্লান্ট রক্ষণাবেক্ষণের উপরে জোর দিতে বলেছে। রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, “আমাদের অক্সিজেনের ব্যবস্থা ঠিকঠাকই রয়েছে। মকড্রিল করেও সেগুলি দেখে নেওয়া হবে। সব রকমের পরিকাঠামোপ্রস্তুত রয়েছে রাজ্যের।” স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যে এই মুহূর্তে ২০টি এলএমও এবং ৭৯টি পিএসএ প্লান্ট রয়েছে। করোনার চিকিৎসার জন্য সরকারি স্তরে চিহ্নিত ৩২ হাজার ২৬৮টি শয্যার মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার এই মুহূর্তে অক্সিজেনযুক্ত। পাশাপাশি,প্রতিটি হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার ঠিক মতো সরবরাহ করার বিষয়টিতেও জোর দেওয়া হয়েছেবলে খবর। করোনার চিকিৎসা ব্যবস্থা ঠিক মতো প্রস্তুত রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন স্বাস্থ্যকর্তারাও। এ দিন ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্যজেলায় এ জন্য পরিদর্শনে যান স্বাস্থ্য-অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অক্সিজেনের হাহাকার হয়েছিল করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে। কারণ, প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ে করোনাভাইরাস শরীরে প্রবেশকরলে সরাসরি ফুসফুসে সংক্রমণ হচ্ছিল। তাতে রোগীর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা দ্রুত কমতে শুরু করছিল। অতিমারির ওই দু’টিপর্বে যত মানুষ কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের বড় অংশেরই সংক্রমণ ছড়িয়েছিল ফুসফুসে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায় তৃতীয় ঢেউয়ের সময়ে। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে শ্বাসনালির উপরিভাগসংক্রমিত হয়েছে। ফলে, ফুসফুস সরাসরি আক্রান্ত না হওয়ায় অক্সিজেনেরও প্রয়োজন তত পড়েনি। এ বার চিনে যে নতুন ভ্যারিয়েন্ট বিএফ.৭ পাওয়া গিয়েছে,সেটি ওমিক্রনেরই উপপ্রজাতি বলে খবর। তাই মনে করা হচ্ছে, ওই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হলেও তা ফুসফুসকে ততটা সমস্যায় ফেলবে না। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তারকথায়, “নতুন ভ্যারিয়েন্টের চরিত্র সম্পর্কে বিশদ তথ্য এখনওজানা যায়নি। তাই, সেটি সমস্যার ধরে নিয়েই আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখা প্রয়োজন। যাতে অক্সিজেনের অভাবে কারও প্রাণ না যায়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy