(বাঁ দিক থেকে) সুহৃতা পাল, বুলবুল মুখোপাধ্যায়, অরুণাভ দত্ত চৌধুরী এবং সন্দীপ ঘোষ। —ফাইল চিত্র।
আরজি কর থেকে যে প্রশাসনিক মাথাদের সরানোর দাবি তুলেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা, তার সব ক'টিকেই মেনে নিল রাজ্য সরকার। এর পাশাপাশি, আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে ন্যাশনাল মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের সার্কুলার প্রত্যাহার চেয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। সেই দাবিও মেনে নিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। তবে এতেও কর্মবিরতি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেননি জুনিয়র ডাক্তাররা। আরও কিছু দাবি রয়েছে তাঁদের।
বুধবার সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্স থেকে মিছিল করে স্বাস্থ্য ভবন গিয়েছিলেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা। সেখানে নিজেদের দাবিদাওয়া জানিয়ে এসেছিলেন তাঁরা। সেই দাবি মেনে রাতেই আরজি করের নতুন অধ্যক্ষ, নতুন সুপার, অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার এবং চেস্ট মেডিসিন বিভাগের প্রধানকে সরিয়ে দেওয়া হল। সেই সঙ্গে সন্দীপকে ন্যাশনাল মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পদ থেকেও সরানো হয়েছে। বুধবার রাতে এ কথা জানিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম।
রাজ্য সরকার আন্দোলনকারীদের দাবি মানলেও এখনই কর্মবিরতি তোলা হবে না বলে জানাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের বক্তব্য, সন্দীপকে নিয়ে নির্দেশিকায় কী লেখা থাকছে, তার উপর সব কিছু নির্ভর করছে। আন্দোলনকারী পড়ুয়া মহম্মদ আহমেদ লস্কর বলেন, ‘‘আমাদের দাবি, সন্দীপ ঘোষ যাতে ভবিষ্যতে কোনও প্রশাসনিক কাজে যোগ দিতে না পারেন সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের দাবি যত ক্ষণ না পূরণ হচ্ছে, তত ক্ষণ কর্মবিরতি চলবে। দাবি পূরণ হওয়ার পর আমাদের জিবি বৈঠক বসবে। সেখানেই যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পরেই হাসপাতালের অধ্যক্ষ পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন সন্দীপ। স্বাস্থ্য ভবনে গিয়ে ইস্তফাপত্র জমা দিয়ে এসেছিলেন। ছাড়তে চেয়েছিলেন সরকারি চাকরিও। কিন্তু তা গ্রহণ না করে সেই দিনই স্বাস্থ্য দফতর সন্দীপকে ন্যাশনাল মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পদে বসায়। তা নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয় বিভিন্ন মহলে। যাঁর আমলে আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের মতো ঘটনা ঘটেছে, তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না করে কেন তাঁকে উল্টে ‘পুরস্কৃত’ করা হচ্ছে, তা নিয়ে আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা প্রশ্ন তুলেছিলেন। ন্যাশনাল মেডিক্যালের চিকিৎসকেরাও সন্দীপকে কাজে যোগ দিতে বাধা দেন। এর পর আরজি করের মামলা কলকাতা হাই কোর্টে উঠলে তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় সন্দীপকে। কোর্টের নির্দেশে ছুটিতেও চলে যান সন্দীপ। এ বার আন্দোলনকারীদের চাপে তাঁকে ন্যাশনাল মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পদ থেকেও সরাল রাজ্য।
বুধবার সিজিও কমপ্লেক্স থেকে স্বাস্থ্য ভবন অভিযান করেছিলেন আরজি করের আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা। তাঁদের প্রতিনিধিরা স্বাস্থ্য ভবনে দিয়ে স্মারকলিপিও জমা দেন। আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল, আরজি করের বর্তমান অধ্যক্ষ সুহৃতা পাল এবং সুপার বুলবুল মুখোপাধ্যায়-সহ চার আধিকারিককে সরাতে হবে। সেই সঙ্গে সন্দীপকে ন্যাশনাল মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পদ থেকে সরানোরও দাবি জানিয়েছিলেন তাঁরা। পাশাপাশিই পড়ুয়াদের দাবি ছিল, সন্দীপকে যাতে আর কখনও কোনও প্রশাসনিক পদে না বসানো হয়। আন্দোলনকারীদের এই দাবি মেনে নিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। বুধবার রাতেই হাসপাতালের চার কর্তাকে বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন হাসপাতালের সুপার, অতিরিক্ত সুপার, সদ্য দায়িত্বে আসা অধ্যক্ষ এবং চেস্ট মেডিসিনের প্রধান। সেই সঙ্গে সন্দীপকেও ন্যাশনাল মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পদ থেকে সরানোর কথা ঘোষণা করেন স্বাস্থ্যসচিব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy