Advertisement
E-Paper

‘মেয়র ঠিকই জানেন, হকারের তোলা যায় থানা পর্যন্ত’

গড়িয়াহাটের ফুটপাতে ব্যাগের দোকান পাততে গিয়ে নিজের প্রথম দিনের এমনই অভিজ্ঞতার কথা শোনাচ্ছিলেন এক হকার। আশপাশে দাঁড়ানো অন্যেরাও জানালেন, তাঁদের অভিজ্ঞতাও আলাদা নয়।

বেহাত: গড়িয়াহাটের ফুটপাত আছে হকারদের দখলেই।

বেহাত: গড়িয়াহাটের ফুটপাত আছে হকারদের দখলেই। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২২ ০৭:১২
Share
Save

‘‘ট্রেড লাইসেন্স আছে?’’

উত্তর ছিল, ‘‘না।’’

‘‘দোকান করার অন্য কোনও লাইসেন্স আছে? সরকারকে ট্যাক্স দেন?’’

এ বারও উত্তর, ‘‘না।’’

‘‘চাইলেই লাইসেন্স বার করে আনতে পারবেন?’’

উত্তর নেই বুঝে ‘থানা থেকে আসছি’ বলে কথা শুরু করা ব্যক্তি বললেন, ‘‘কাউকেই যখন টাকা দিতে হয় না, তা হলে পুলিশকে দিতে হবে। পুলিশকে টাকা দেওয়া মানেই ফুটপাতে দোকান করার লাইসেন্স!’’

গড়িয়াহাটের ফুটপাতে ব্যাগের দোকান পাততে গিয়ে নিজের প্রথম দিনের এমনই অভিজ্ঞতার কথা শোনাচ্ছিলেন এক হকার। আশপাশে দাঁড়ানো অন্যেরাও জানালেন, তাঁদের অভিজ্ঞতাও আলাদা নয়। গত ছ’বছর ধরে দোকান চালানো এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘মন্ত্রীরা যা-ই বলুন, এ সব বন্ধ হয় না। বছর বছর তোলার রেট বাড়ে। আমরাও চুপ থাকি, কারণ, পুলিশ দোকান পাতার যে নিশ্চয়তা দেয়, সেটা আর কে দেবে?’’

শুক্রবারই শহরের দখলদারির হকার-চিত্র নিয়ে পুলিশের উপরে দায় চাপিয়েছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। বলেছেন, ‘‘অনিয়ন্ত্রিত ভাবে হকারদের বসার পিছনে কিছু ক্ষেত্রে থানার মদত আছে। আমি শুনেছি, কিছু হকার সংগঠন এবং পুলিশ মাসিক ব্যবস্থা করে নেয়।’’ পুলিশের উপরে অবশ্য এ নিয়ে আগেও দোষ চাপিয়েছেন ফিরহাদ। গত পুরভোটের আগেও তিনি বলেছিলেন, ‘‘রাজনৈতিক দল হকার বসায় না। হকার বসায় এক শ্রেণির পুলিশ, রোজগারের জন্য।’’ স্বাভাবিক ভাবেই নতুন করে তাঁর এমন বক্তব্যে নানা মহলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। বিরোধীরা ‘সবটাই নাটক, ভিতরে ভিতরে সেটিং রয়েছে’ বলে মন্তব্য করলেও পুলিশের বড় অংশই ক্ষুব্ধ। কারণ, এতে নাকি তাঁদের ভাবমূর্তিতে ধাক্কা লেগেছে।

শনিবার এ নিয়ে খোঁজ নেওয়া গেল গড়িয়াহাট, হাতিবাগান, শ্যামবাজার এবং নিউ মার্কেটে। গড়িয়াহাটের হকারদের বড় অংশ পুলিশের সঙ্গে টাকার সেটিংয়ের কথা মেনে নিলেও সেখানকার ‘বালিগঞ্জ হকার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক রবি সাহার অর্থপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘টাকা নেয় কি না, বলতে পারব না। মেয়র যখন বলেছেন, তাঁর কাছে নিশ্চয়ই ঠিক খবরই আছে।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হকার জানালেন, গড়িয়াহাটে মাসিক ১২০০ টাকার এবং দৈনিক ৫০ টাকার দু’রকম ‘সেটিং’ চলে। থানা থেকে আসছেন জানিয়ে এক যুবক সন্ধ্যায় টাকা নিয়ে যান। তাঁর দাবি, ‘‘ওই টাকায় ফুটপাতে যেমন খুশি বসাও যায়, রাস্তায় সামগ্রী ফেলেও রাখা যায়। সংগঠনের কিছু সদস্য বাড়তি সুবিধা পান। তাঁদের থেকে নেওয়া হয় সপ্তাহে ২০ টাকা করে।’’

নিউ মার্কেটে ‘সেটিং’ চলে সাপ্তাহিক হিসাবে। পুরভবন চত্বরের ‘রেট’ সপ্তাহে ৩০০ টাকা। বাকি নিউ মার্কেটে দোকান করার জন্য দিতে হয় সপ্তাহে ৫০০ টাকা করে। এক দোকানি বললেন, ‘‘গোটা এলাকা পাঁচ ভাগে ভাগ করে আলাদা আলাদা লোক থানার নাম করে টাকা তোলেন। রাস্তার উপরে দোকান পাতার রেট কিন্তু আরও বেশি।’’ হাতিবাগান ও শ্যামবাজার চত্বর মূলত কলকাতা পুলিশের দু’টি থানা এলাকার মধ্যে পড়ে। একটি শ্যামপুকুর, অন্যটি বড়তলা। থানা আলাদা হলেও এখানেও সাপ্তাহিক হিসাবেই টাকা তোলা হয় বলে অভিযোগ। ‘হাতিবাগান বাজার মার্চেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক রঞ্জন রায়ের দাবি, ‘‘মেয়র ঠিকই জানেন, হকারের তোলা যায় থানা পর্যন্ত। রাস্তায় পার্কিংয়ের দায়িত্বে আছেন যাঁরা, তাঁরা কিছু কম সংখ্যক গাড়ি পার্কিং করান। বদলে সেই জায়গা কোনও না কোনও হকারকে ভাড়ায় দিয়ে দেন। প্রতিদিনের সেই ভাড়া বেশ কয়েকশো টাকা। নানা হাত ঘুরে এই তোলা যায় থানা পর্যন্ত। উৎসবের মরসুমে এটা সব চেয়ে বেশি হয়। ফুটপাতেও এ রকম কিছু আলাদা হিসাব আছে। মূলত রাস্তার হকারের থেকে টাকা তোলার ব্যাপারেই পুলিশের নজর থাকে বেশি।’’

কলকাতা পুলিশের কোনও শীর্ষ কর্তাই এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাননি। লালবাজারের এক অতিরিক্ত কমিশনারের দাবি, ‘‘শহরের বাজার এলাকাগুলিতে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে পুরসভা হকার-সমীক্ষা চালাচ্ছে। থানাগুলিকে এ ব্যাপারে সব রকম সাহায্য করার নির্দেশ দেওয়া রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রকাশ্যে গঠনমূলক নয়, এমন কোনও মন্তব্য করা অনুচিত। অন্যেরা করতে পারেন, বাহিনীর কেউ করবেন না।’’

Street hawkers Trade License Gariahat

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।