নিউ মার্কেট এলাকায় ফুটপাত এখনও হকারদেরই দখলে। রাস্তার উপরে বসে দেদার বিকিকিনি চলছে হকারদের!
শহরের ফুটপাতে হকারদের দৌরাত্ম্য কমাতে গত বছরের জুলাইয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠক করেছিলেন। সেই বৈঠকে নিউ মার্কেটে পুরসভার সদর দফতরের আশপাশের রাস্তা ও ফুটপাত হকারদের দখলে চলে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। এর পরেই শহরের ফুটপাত যাতায়াতের উপযুক্ত করে তুলতে পুলিশকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলেন মমতা। কিন্তু অভিযোগ, সেই বৈঠকের কয়েক মাস পর থেকেই নিউ মার্কেট চত্বরের একাধিক রাস্তা ও ফুটপাত ফের হকারদের দখলে চলে যেতে থাকে। বিষয়টি নিয়ে গত সোমবার হকার সংগ্রাম কমিটি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে অভিযোগ জানায়। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ রয়েছে, কলকাতা পুরসভার আশপাশে রাস্তার উপরে হকারেরা বসতে পারবেন না। অথচ, সেই নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই এক শ্রেণির হকার রাস্তা দখল করে পসরা সাজিয়ে বসছেন বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, পুলিশকে জানিয়েও লাভ হয়নি। উল্টে বেআইনি হকারদের রমরমা বেড়েছে। তাই আগামী শুক্রবার, নিউ মার্কেট থানা ঘেরাওয়ের ডাক দিয়েছে হকার সংগ্রাম কমিটি।
বুধবার নিউ মার্কেট চত্বরের বিভিন্ন রাস্তা ও ফুটপাত ঘুরে দেখা গেল, হকারদের দাপটে দুর্ভোগ বেড়েছে সাধারণ মানুষের। এসপ্লানেড মেট্রো স্টেশনের ছ’নম্বর গেটের (নিউ মার্কেটের দিকে) সামনে হকারেরা এমন ভাবে পসরা নিয়ে বসেছেন যে, যাত্রীদের স্টেশনে ঢুকতে-বেরোতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। গ্র্যান্ড হোটেলের সামনে পুলিশ ও পুরসভার তরফে হলুদ দাগ কেটে দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ, হলুদ দাগের বাইরে ফুটপাতের উপরে হকারেরা কোনও সামগ্রী রাখতে পারবেন না। এ দিন সেখানে গিয়ে দেখা গেল, সেই নিয়ম মানার বালাই নেই। গ্র্যান্ড হোটেলের নীচে যে দিকে হকারদের ব্যবসা করতে বারণ করা হয়েছিল, এখন সেখানেও দাঁড়িয়ে জিনিস বিক্রি করতে দেখা গেল তাঁদের।
এসপ্লানেড মেট্রো স্টেশনের ছ’নম্বর প্রবেশপথ থেকে বেরিয়ে চৌরঙ্গি প্লেস ধরে সোজা এগোলে কলকাতা পুরসভার সদর দফতর। গত বছর মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে চৌরঙ্গি প্লেসের এক দিকের ফুটপাত হকারমুক্ত করা হয়। কিন্তু বর্তমানে সেখানে পরিস্থিতি ফের যে কে সে-ই। ফলে পথচারীদের ফুটপাত ছেড়ে হাঁটতে হচ্ছে রাস্তা দিয়ে। পুর সদর দফতরের সামনে বাট্রাম স্ট্রিট ধরে নিউ মার্কেটে ঢোকার রাস্তাতেও পসরা সাজিয়ে বসছেন হকারেরা।
কেন নিয়ম মানছেন না তাঁরা? ব্যাগের পসরা নিয়ে বাট্রাম স্ট্রিটে বসা, রিপন স্ট্রিটের বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন প্রৌঢ় বাবাকে দেখিয়ে বললেন, ‘‘বাবার বয়স ৬৫। তিনি এখানে ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যবসা করছেন। ওঁর হাত ধরেই আমি এই পথে এসেছি। পুলিশ আমাদের এখান থেকে উঠে যেতে বলেছিল। কিন্তু উঠে গেলে সংসারটা চলবে কী ভাবে?’’ বাট্রাম স্ট্রিটে বসা একাধিক হকারই বললেন, ‘‘আমাদেরও সরে যেতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সরে যাব কোথায়?’’ হকার সংগ্রাম কমিটির তরফে অভিযোগ, হকারদের জন্য নিউ মার্কেটের ভিতরের দোকানিদের ক্ষতি হচ্ছে। এ নিয়ে অতীতে হকার ও দোকানিদের মধ্যে সংঘাতও বেধেছিল। সেই অবস্থার যে বিশেষ পরিবর্তন হয়নি, তা স্বীকার করে এস এস হগ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি অশোক গুপ্তের অভিযোগ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী রাস্তা ও ফুটপাতের হকারদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ-প্রশাসনকে কঠোর হতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেও হকারদের অত্যাচারে আমাদের ব্যবসা মার খাচ্ছে। ক্রেতাদের দোকানে ঢুকতে-বেরোতে সমস্যা হচ্ছে।’’
মেয়র পারিষদ (হকার পুনর্বাসন) দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘রাস্তার উপরে যে হকারেরা বসছেন, তাঁরা খুব অন্যায় করছেন। আমরা পুলিশকে বলে ফের রাস্তা হকারমুক্ত করব।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)