E-Paper

ব্যাঙ্কে হঠাৎ জমা পড়ল ১২ লক্ষ! ফেরত দিতে দৌড়ঝাঁপ দমদমের ব্যবসায়ীর

দমদম স্টেশনের পাশে এমসি গার্ডেনে ছোট্ট একটা মুদিখানার দোকান রয়েছে তাঁর। গত শনিবার অ্যাকাউন্টে যখন লক্ষ লক্ষ টাকা ঢুকে গিয়েছে, তখন মুড়ি, আলু মাপতে মাপতে কপালের ঘাম মুছতে থাকেন বুবাই।

দমদমে নিজের মুদিখানার দোকানে সুখেন ঘোষ।

দমদমে নিজের মুদিখানার দোকানে সুখেন ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:১২
Share
Save

টাকা ঘরে এলেও যে ‘বিপত্তি’ হতে পারে, তা হাড়ে হাড়ে টের পেলেন বুবাই।

ব্যাঙ্কে ছিল সর্বসাকুল্যে হাজার ছয়েক টাকা। হঠাৎ বুবাই দেখেন, অ্যাকাউন্টে ৪ লক্ষ টাকা বেশি দেখাচ্ছে। ব্যাপার কী, বুঝতে না বুঝতেই মেসেজের আওয়াজ জানান দিতে থাকে যে, বার বার টাকা জমা পড়ছে তাঁর অ্যাকাউন্টে। কিছুটা ভয়ই পেয়ে যান রাতারাতি লক্ষপতি হওয়া বুবাই।

দমদম স্টেশনের পাশে এমসি গার্ডেনে ছোট্ট একটা মুদিখানার দোকান রয়েছে তাঁর। গত
শনিবার অ্যাকাউন্টে যখন লক্ষ লক্ষ টাকা ঢুকে গিয়েছে, তখন মুড়ি, আলু মাপতে মাপতে কপালের ঘাম মুছতে থাকেন বুবাই। দ্বিধা-ভয় নিয়ে দু’-এক জন দাদা-বন্ধুকে ঘটনাটা জানান তিনি। কেউ জানান, তাঁর এক চেনা জনেরও এমন হয়েছিল। সেই ব্যক্তি সব টাকা তুলে নিয়ে অ্যাকাউন্টই বন্ধ করে দিয়েছেন। কারও আবার মত, দোকানে কেউ ২০ টাকা বেশি দিয়ে গেলেও ডেকে ফেরত দেন বুবাই। পুজোর আগে পড়ে পাওয়া এই টাকা তিনি রেখে দেওয়ার লোকই নন। কেউ জানান, এমন ‘এসএমএস’ হয়তো ভুল করে এসেছে। ব্যাঙ্কে গেলে দেখা যাবে, সব ঠিকই আছে। এ কথা শুনে দ্রুত দোকান ফেলে রেখে এটিএমে যান বুবাই। গিয়ে দেখেন, না সত্যি সত্যিই অ্যাকাউন্টে রয়েছে বাড়তি ১২ লক্ষ টাকা।

দুশ্চিন্তায় পড়েন বুবাই। সে দিনই ছোটেন তাঁর ব্যাঙ্কের নাগেরবাজার শাখায়। কিন্তু সেখানে আর এক সমস্যা। ফর্ম ভরে টাকা অ্যাকাউন্ট থেকে তোলা-জমা করা যায়। কিন্তু টাকা যে তাঁর নয়, তা জানানোর জন্য তো আর ফর্ম হয় না। সে কথা মুখে জানিয়ে, লিখে দিয়েও সুরাহা হয় না। অ্যাকাউন্ট আপডেট করলে বাড়তি টাকা দেখাতেই থাকে।

বছর চল্লিশের বুবাইয়ের ভাল নাম সুখেন ঘোষ। থাকেন বারাসতের নতুনপুকুরে। বাধ্য হয়েই
পরের দিন বারাসত থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে সমস্ত কথা খুলে বলেন তিনি। অভিযোগ করতেও চান। কিন্তু অচেনা কোনও এক ‘গৌরী সেন’-এর নামে তো আর লক্ষ লক্ষ টাকা
এমনিই দেওয়ার অভিযোগে এফআইআর হয় না। বারাসত থানার পুলিশ গোটা ঘটনা লিখিয়ে নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেয়। আরও একটা গোটা দিন টাকা পড়ে থাকে তাঁর অ্যাকাউন্টে। বুবাইয়ের মা, স্ত্রী, বাড়ির লোকেরা জানতে পেরে প্রশ্ন তোলেন, অন্যের টাকা কেন এ ভাবে অ্যাকাউন্টে ঢুকে থেকে যাবে?

অবশেষে দু’দিন পরে, সোমবার রাতের দিকে দেখা যায়, অ্যাকাউন্টে আর লক্ষ লক্ষ টাকা নেই। পড়ে রয়েছে কেবল নিজের টাকাটুকুই। মঙ্গলবার সকালে নিশ্চিন্ত মনে দোকান খোলেন বুবাই। টাকা ফেরত দেওয়ার চেষ্টায় দোকানের কাজে সামান্য ক্ষতি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কী আর করা যাবে। যাঁর টাকা, যেখানকার টাকা, সেখানে ফিরে গিয়েছে, তাতেই শান্তি বুবাইয়ের। এক ক্রেতাকে বলেন, ‘‘আর এক টাকা দিন, ৬১ টাকা দাম যে।’’

ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কেরই এক কর্মী জানান, ব্যাঙ্কের কর্মীদের ভুল কিংবা ইন্টারনেটে সমস্যার জন্য এমনটা হয়ে থাকে। অনেক সময়ে আবার কৃষি ঋণ, শস্য বিমার সরকারি টাকা অন্যের অ্যাকাউন্টেও ঢুকে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। ওই কর্মী বলেন, ‘‘তার পরিমাণ হয়তো লক্ষ লক্ষ টাকা নয়। কিন্তু যাঁর অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকছে, তিনি যদি টাকা তুলে নেন, তা হলে সেই টাকাও ফেরত পেতে অনেক সময়ে কালঘাম ছুটে যায়।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bank

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।