Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Facebook

সন্তানহারাদের ভরসা জোগাচ্ছে ফেসবুক গ্রুপ

মায়েদের এই গ্রুপের বহু সদস্য ভারতীয়। কেউ কেউ বিদেশে থাকেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মধুমিতা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২০ ০৩:০০
Share: Save:

এঁদের কারও সন্তানকে কেড়েছে ডেঙ্গি, কারও সন্তানকে জঙ্গি হামলা। কারও সন্তান আবার নিজেই নিজের জীবনে ইতি টেনেছেন। তার পরে সেই ছেলেমেয়েকে হারানোর বেদনা বুকে বয়ে চলার পথে একে অপরের সহায় হয়ে উঠেছেন ওই সন্তানহারা মায়েরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের মতো অনেক মায়েদের নিয়ে তৈরি হয়েছে একটি গ্রুপ— ‘ইন আওয়ার হার্টস ফরএভার’। ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের ওই গ্রুপে একে অন্যের সঙ্গে হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে নিয়ে কথা বলেই মনের ভার খানিকটা লাঘব করছেন তাঁরা।

গুরুগ্রামের বাসিন্দা সীমা তেজস্বী রাওয়ের মেয়ে কলেজের প্রথম বর্ষেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। আর সুস্থ হননি। মেয়ে তেজস্বীর চলে যাওয়ার পরে ২০১৪ সালে ফেসবুকে এই গ্রুপ তৈরি করেন সীমা। তেজস্বীকে বাঁচিয়ে রাখতে নিজের নামের মাঝে জুড়ে নেন মেয়ের নামও। সীমা জানাচ্ছেন, মেয়ে চলে যাওয়ার পরে অন্য কেউ সান্ত্বনা, পরামর্শ দিতে এলেও তা এক রকমের শাস্তি বলে মনে হত। সীমার কথায়, ‘‘এর পরে দিল্লিতে আমার মতো আরও কয়েক জনের সঙ্গে আলাপ হয়। পরিচয় বাড়তে বাড়তে অন্য শহরের অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ হয়। তখনই তৈরি করি এই গ্রুপ।’’

মায়েদের এই গ্রুপের বহু সদস্য ভারতীয়। কেউ কেউ বিদেশে থাকেন। ২০১৬ সালে ঢাকার হোলি আর্টিজ়ান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত তারিশি জৈনের মা তুলিকা জৈন এই গ্রুপের এক জন সক্রিয় সদস্য। সীমার মতো অনেকে আবার নিজের নামের মাঝে জুড়ে নিয়েছেন অকালে হারিয়ে যাওয়া সন্তানের নাম। গ্রুপের সদস্যেরা এখন অনেক সময়েই একসঙ্গে বেড়াতে যান। একে অপরের পাশে থাকতে অন্য শহরে পাড়ি দেন।

এঁদেরই এক জন বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা রুমি বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৬ সালের জুনে রুমির বছর চোদ্দোর ছেলে নিজেই নিজের জীবন ইতি টানে। সহপাঠীদের বিদ্রুপ সহ্য করতে না পেরে ওই কাজ করেছিল নবম শ্রেণির ছাত্রটি। রুমি জানাচ্ছেন, তার পরে যখন ক্রমশ দুঃখের সমুদ্রে ডুবে যাচ্ছিলেন, তখন এক বন্ধুর পরামর্শে ফেসবুকে এই গ্রুপের খোঁজ পান। সেখানে আর পাঁচ জন সন্তানহারা মায়ের কাছে নিজের দুঃখের কথা বলতে অসুবিধা হয়নি তাঁর। তাই মনের সব কথাই এখন তাঁরা একে অপরের সঙ্গে ভাগ করে নেন। চলে যাওয়া সন্তানদের জন্মমাসে তাঁরা ওই গ্রুপে তাঁদের নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। রুমি বলেন, ‘‘এই গ্রুপের আমরা সকলেই জানি, সন্তানদের নিয়ে লিখলে কেউ বিরক্ত হবে না। কারণ প্রত্যেকেরই ব্যথাটা এক।’’ অন্য শহরে থাকা এই গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গেও রুমি ইতিমধ্যে দেখা করেছেন। এমনকি, সিঙ্গাপুরে গিয়েও দেখা করেছেন এই গ্রুপের এক বন্ধুর সঙ্গে।

দক্ষিণ ভারতের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তে গিয়ে ২০১৩ সালে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিলেন এ শহরেরই এক তরুণ। তাঁর মা-ও রয়েছেন এই গ্রুপে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মা বলছেন, ‘‘আমাদের যে দুঃখের পথ চলা, তা খুবই ব্যক্তিগত। বাইরের লোকে সেটা বুঝতে না পারলে তাঁদের দোষ দেওয়া যায় না।’’ এই গ্রুপের সদস্যেরা কেউ কারও সমালোচনা করেন না, একে অপরের বিশ্বাসে আঘাত দেন না, কারও সঙ্গে সহমত না হলেও তর্ক করেন না। মনের কথা সহজেই খুলে বলা যায়। সন্তানহারা ওই মায়ের কথায়, ‘‘হারানো সন্তানের বিষয়ে আমরা কথা বলছি, এটাও হয়তো অনেকের ভাল লাগে না। তাঁরা এ বিষয়ে হয়তো কথা বলতে চান না। কিন্তু আমরা তো আমাদের মধ্যে সেই সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই। এই গ্রুপে এসে তাই মন খুলে তার কথা বলতে পারি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Facebook Facebook Group
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy