ময়দানের ক্রিকেট খেলা।
কমলালেবু, ক্রিকেট, চিড়িয়াখানা। আজ যাঁরা প্রৌঢ় এ শহরে, তাঁদের ছোটবেলার স্মৃতিধার্য এই সবই। এমনিতে কলকাতার প্রাণের খেলা ফুটবল, তারই দুই অর্ধের বিরতির মতো ফাঁকটুকুই যেন ক্ষণস্থায়ী শীতের দিনগুলো। বেড়াতে যাওয়ার জন্য আলাদা করে দাগিয়ে রাখা ক্যালেন্ডারে। কলকাতার শীত মানে পাড়ায় কি ভিক্টোরিয়ায় চড়ুইভাতি-পিকনিক, বা বাক্সপ্যাঁটরা-হোল্ডঅল বেঁধে মধুপুর।
উনিশ শতক থেকেই ক্রমশ তীর্থ বা কাজের প্রয়োজন বাদেও বেড়ানোয় আগ্রহী হয় বাঙালি। ছোটদের সেই বেড়ানোয় অংশী করে কিছু শেখানোর চেষ্টারও গোড়াপত্তন হয়। ১৮৮৮ সালে শিবনাথ শাস্ত্রী ইংল্যান্ডে গিয়ে কিন্ডারগার্টেন স্কুল দেখে প্রাণিত হন শিশুদের বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষাদানের ধারণায়। ফিরে এসে ১৩ কর্নওয়ালিস স্ট্রিটের ঠিকানায় শুরু করলেন ‘ব্রাহ্ম বালিকা শিক্ষালয়’। নামে ‘বালিকা’ থাকলেও, সুকুমার রায় বা যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের মতো অনেকেরই পড়াশোনা শুরু এই স্কুলে। শীতে পিকনিক আয়োজনের পাশাপাশি পড়ুয়াদের দল বেঁধে নিয়ে যাওয়া হত চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন বা জাদুঘরে। পশুপাখি, গাছপালার পাশাপাশি পুরাবস্তুর সঙ্গেও তাদের পরিচয় করানোর উৎসাহী ছিলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী।
শীতের কলকাতায় কেক আর কমলালেবুর সুবাস, ও দিকে গঙ্গার হাওয়ায় সুইং করত ক্রিকেট বল। সারদারঞ্জন রায়ের সূত্রে বাঙালির ক্রিকেট-দীক্ষার পাশাপাশি এই তথ্যটিও জানা থাক, ঢের আগে থেকেই কলকাতার শীতের সঙ্গে এই খেলাটির সম্পর্ক। ভারতের মাটিতে প্রথম ‘অফিশিয়াল’ ক্রিকেট ম্যাচটি সেই কবেই সারা কলকাতায়, ১৮০৪-এর ১৮-১৯ জানুয়ারি। এক দিকে ইটন থেকে পাশ করা সিভিলিয়ানরা, বিপক্ষে কোম্পানির বাকি সিভিলিয়ানদের নিয়ে গড়া একাদশ। ইটনিয়ানরা প্রথম ব্যাট করে ২৩২ রান তোলে, বিপক্ষ দু’বার ব্যাট করে মোট ৮০ রানের বেশি তুলতে পারেনি। ইটনিয়ানদের হয়ে রবার্ট ভ্যান্সিটার্ট সেঞ্চুরি করেছিলেন সেই ম্যাচে।
তবে শীতে বাঙালির বরাবরই জমিয়ে খাওয়াদাওয়ার অভ্যাস। অশোক মিত্র বড়দিনের ছুটিতে ছোটকাকির হাতে রান্না ফুলকপি দিয়ে পারশে-ট্যাংরার ঝোল খাওয়ার কথা লিখে গেছেন স্মৃতিকথায়। এই খাঁটি বাঙালি রেওয়াজের পাশে সাহেবি ঘনিষ্ঠতার সূত্রে বরাবরই জেগে থেকেছে অন্যতর ভোজন-অভ্যাসও। আশাপূর্ণা দেবীর বাবা হরেন্দ্রনাথ গুপ্ত সাহেব কোম্পানিতে কমার্শিয়াল আর্টিস্ট ছিলেন, বড়দিনে বাড়িতে আনতেন একটি হৃষ্টপুষ্ট কেক। তবে ডিম আছে বলে সেই কেক খেয়ে হাত-মুখ ধোওয়া আর মাথায় গঙ্গাজল ছিটানো ছিল বাধ্যতামূলক। কেকও খাওয়া হল, জাতিধর্মও রইল!
বিবর্তনের ছন্দে অনেকটাই বদলে গেছে কলকাতার শীতযাপন। এখন পৌষ-ভোরে স্মার্টফোন বেয়ে আসে আবহাওয়া-বার্তা, শঙ্কার ‘একিউআই’-পরিমাপ: বাইরে হাঁটতে না বেরিয়ে ঘরে থাকা ভাল! গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে মর্নিং ওয়াকে যান অনেকে, পার্কিংয়ের ঝঞ্ঝাটে অনেকে ধুত্তোর বলে পা বাড়ান জিমে। পাড়ায় মাঠই বা কোথায় তেমন! অলিগলি-রাজপথেই ঠাঁই খুঁজে নেয় জগিং, কপালভাতি আর লাফিং ক্লাব। অতঃপর এক ভাঁড় চা! ছবিতে শীতের ময়দানে বাচ্চাদের ক্রিকেট, নব্বই দশকে।
ছবিতে কণিকা
“অণিমার নাম পরিবর্ত্তন করে কণিকা নাম দেওয়া হয়েছে, তার পিতারও সম্মতি আছে। আপিসের খাতায় এই নাম চালানো যেতে পারে।” লিখে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, একেবারে সই করে। এক দিকে এই, অন্য দিকে অবীন্দ্রনাথের বলা ‘মোহর’, দুই-ই গড়েছে মানুষ ও শিল্পী হিসেবে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অখণ্ড অচ্ছেদ্য সত্তা। তার কত না ছবি: শান্তিনিকেতনের উদার প্রান্তরে সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে (ছবি), অথবা সুচিত্রা মিত্র করুণা বন্দ্যোপাধ্যায় দেবব্রত বিশ্বাস হেমন্ত মুখোপাধ্যায় লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে নানা সময়ে, কখনও সবান্ধব ও সপরিবার, কখনও বা ৭ পৌষের উপাসনায় ছাতিমতলায়। অনন্য জীবনের এমন কতকগুলি মুহূর্ত দিয়েই নতুন বছরের ‘মোহর শতক বর্ষপঞ্জি’ সাজিয়ে তুলেছে বৈ-চিত্র প্রকাশন ও কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। এক দিকে ক্যালেন্ডার, অন্য দিকে রয়েছে ছবিগুলি: কণিকা-শতবর্ষে শ্রদ্ধার্ঘ্যও। আনুষ্ঠানিক প্রকাশ হল সম্প্রতি।
যুদ্ধকালীন
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছে। তার রসদ জোগাড়ে কলকাতা বোম্বাই মাদ্রাজের মধ্যে ‘ওয়ার বন্ড’ কেনার টক্কর। তিন শহরের বন্ড কেনার অঙ্ক জানাতে তিনটি ঘড়ি বসানো হল কলকাতায়, জিপিও-র মাথায়। এক কোটি টাকার ব্যবধানে কলকাতাকে হারিয়ে দিচ্ছে বোম্বাই, এই অবস্থায় খেলা ঘুরিয়ে দিলেন প্রখ্যাত ধনী কেশরাম পোদ্দার, একাই এক কোটি এক লক্ষ টাকার বন্ড কিনে: অতুল সুর লিখেছেন শতাব্দীর প্রতিধ্বনি-তে। যুদ্ধের সময় প্রভাবিত এলাকার নানা শহরে ঘটে কত ঘটনা, বিশ্বযুদ্ধের কলকাতাও ব্যতিক্রম নয়। ‘প্রথম মহাযুদ্ধকালীন প্রতিদিনের কলকাতা’ নিয়ে ২৩ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় এশিয়াটিক সোসাইটির বিদ্যাসাগর হল-এ বলবেন সুচেতনা চট্টোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদ ও এশিয়াটিক সোসাইটির যৌথ উদ্যোগ।
ঐতিহাসিক
কৃষ্ণা বসুর ৯৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে, আগামী ২৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় নেতাজি ভবনের শরৎ বসু হল-এ শুরু হচ্ছে বিশেষ প্রদর্শনী, আটটি ঐতিহাসিক প্রতিকৃতি নিয়ে। নেচাজি রিসার্চ ব্যুরোর সংগ্রহশালা থেকে দেখানো হবে শিল্পী অতুল বসুর আঁকা সুভাষচন্দ্রের ছবি। থাকছে সরণীন্দ্রনাথ ও মিতা ঠাকুরের সৌজন্যে অবনীন্দ্রনাথের তিনটি অমূল্য প্রতিকৃতিচিত্র: একটি বিশ শতকের প্রথম দশকে প্যাস্টেলে আঁকা আত্মপ্রতিকৃতি, অন্য দু’টি স্ত্রী ও পুত্র, সুহাসিনী দেবী ও অলোকেন্দ্রনাথ ঠাকুরের। আছে মুকুল দে’র আঁকা রবীন্দ্র-প্রতিকৃতিও। সুগত বসু ও সুমন্ত্র বসুর সংগ্রহ থেকে অতুল বসু অঙ্কিত কৃষ্ণা বসুর প্রতিকৃতি ছাড়াও, শিশিরকুমার বসুর দু’টি ছবি: চিন্তামণি কর ও ফ্র্যাঙ্ক বেনসিং-এর আঁকা। দেখা যাবে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত।
নারীর মঞ্চ
খেয়াল করলে চোখে পড়বে, কলকাতা, বাংলা এমনকি দেশেরও সার্বিক থিয়েটার-আবহটি মুখ্যত পুরুষ-পরিচালিত। মেয়েরা আছেন নিশ্চয়ই, তবে যে গুরুত্ব ও গৌরবে থাকার কথা, ততটা নিয়ে কি? এরই মধ্যে ব্যতিক্রম মানিকতলা দলছুট-এর মতো নাট্যদল, গত সাত বছর ধরে জাতীয় পর্যায়ে ‘উদীয়মান নারীর মঞ্চ নাট্যোৎসব’ আয়োজন করে আসছে তারা। নারী হিংসার বিরুদ্ধে, নারী অধিকারের পক্ষে সম্প্রতি কত কথা এ শহরে, এই নাট্যোৎসব জারি রাখবে সেই সংলাপ। নতুন বছরে ১ জানুয়ারি মুক্তাঙ্গন রঙ্গালয়ে শুরু সন্ধ্যা ৬টায়, ৮ তারিখ পর্যন্ত রোজ ৩টি করে নাটক। সবগুলিই নারী নির্দেশকদের পরিচালিত: কলকাতা ও বাংলার তো বটেই, আছে জামশেদপুর এলাহাবাদ রাজস্থান নেপালের দলও।
নব প্রত্যয়ে
২০১৩-তে ঋতুপর্ণ ঘোষের প্রয়াণের পরের বছর থেকেই কলকাতায় তাঁর নামাঙ্কিত স্মারক বক্তৃতা আয়োজন করে আসছে প্রত্যয় জেন্ডার ট্রাস্ট; লিঙ্গসাম্য নিয়ে তাদের কাজ পরিচিত এ শহরে। নানা বছরে বলেছেন পি সাইনাথ কাঞ্চা ইলাইয়া নব দত্ত ফ্ল্যাভিয়া অ্যাগনেস নিবেদিতা মেনন রবীশ কুমার প্রমুখ, কখনও ঋতুপর্ণ-স্মরণে মঞ্চস্থ হয়েছে কানহাইয়ালাল নির্দেশিত দ্রৌপদী। অতিমারির বছরে বক্তৃতা হয়েছিল আন্তর্জালে, কিছু সময়ের ব্যবধানে এ বছর ফের স্বমহিমায়। সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (এসআরএফটিআই)-এর মূল প্রেক্ষাগৃহে আজ সন্ধ্যা ৬টায় বক্তা বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ও সমাজকর্মী ইন্দিরা জয়সিংহ। যৌন হিংসা-পরবর্তী সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া আর বাস্তবতা, আইন ও নাগরিক ইতিহাসের জটিল সমীকরণ নিয়ে বলবেন তিনি।
লাল-হলুদ
ই এম বাইপাস দিয়ে লক্ষ ফুটবলপ্রেমীর গন্তব্য যুবভারতী; সেই পথেই কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটি (কেসিসি)-তে পৌঁছে গেলে তাঁরা দেখতে পাবেন এক আশ্চর্য প্রদর্শনী, ‘দ্য কারেজ অব স্পিরিট’। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের ১০৫ বছরের ইতিহাস চোখের সামনে। প্রাক্তন ইস্টবেঙ্গল অধিনায়ক সূর্য চক্রবর্তীর ১৯২৫ সালের জার্সি, ’৪৮-এ চিনা অলিম্পিক একাদশের বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গলের ২-০ জয়ের স্মারক মেডেল, ’৫১-র প্রথম ডুরান্ড ট্রফি, ’৭৫-এ আইএফএ শিল্ড ফাইনালে মোহনবাগানকে পাঁচ গোলে হারানোর ম্যাচে অধিনায়ক অশোকলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরা বুট, প্রবাদপ্রতিম কৃশানু দে’র শেষ ম্যাচে পরা বুটজোড়া, ফুটবল (ছবি), ক্রিকেট-স্মারক, কাপ, নথি, বই। অধিকাংশ প্রদর্শ ক্লাব মিউজ়িয়ম-এর সৌজন্যে। ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেখা যাবে, সকাল ১১টা-বিকেল ৫টা।
রফি ১০০
দেশ স্বাধীন হওয়ার তিন বছর আগে, এক পঞ্জাবি ছবির গানে শোনা গিয়েছিল মহম্মদ রফির (ছবি) গলা, জ়িনাত বেগমের সঙ্গে যুগলকণ্ঠের গায়নে। সে বছরই আসা ‘বোম্বাই’তে, বাকিটা জানে ইতিহাস। পঞ্চাশ ষাট সত্তরের দশক জুড়ে গানে আসমুদ্রহিমাচল মাতিয়েছেন এই শিল্পী; নৌশাদ, ও পি নাইয়ার, শচীন দেব বর্মণ, রবি থেকে শুরু করে শঙ্কর জয়কিষণ, মদনমোহন, লক্ষীকান্ত-প্যারেলাল, সেই সময়ের প্রতিষ্ঠিত সুরকারদের সুরে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছেন অসংখ্য ফিল্ম-সঙ্গীত ও অন্য গানের। পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৪৫-১৯৮০ সময়কালে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি ছবির গান গেয়েছিলেন তিনি। ১৯৮০-র জুলাই এক অনন্ত দুঃখের মাস, এক সপ্তাহের ব্যবধানে চলে গিয়েছিলেন উত্তমকুমার আর মহম্মদ রফি, দু’জনেই মধ্য-পঞ্চাশে! আগামী ২৪ ডিসেম্বর ক্ষণজন্মা সঙ্গীতসাধকের জন্মশতবার্ষিকী, সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের বিড়লা অ্যাকাডেমিতে বিকেল সাড়ে ৫টায় গানে ভাষ্যে ছবির ক্লিপিংয়ে তাঁকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাবে সৃষ্টি পরিষদ।
কেয়াবাত মেয়ে
‘কেয়াবাৎ মেয়ে’। উনিশ শতকের বঙ্গে মেয়েদের লড়াই নিয়ে নিজের বইয়ের নামেও এই দু’টি শব্দ ব্যবহার করেছিলেন শ্রীপান্থ। তাতে লেখা ছিল বিদ্যাসাগর-সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরদের সমর্থনের কথা, তেমনই ঈশ্বর গুপ্ত বা অমৃতলাল বসুদের প্রতিরোধও: প্রকাশিত বহু প্রহসন পাঁচালি ব্যঙ্গচিত্র যার সাক্ষী। সেই বাধা পেরিয়েই রাসসুন্দরীরা পড়তে-লিখতে শিখলেন, জ্ঞানদানন্দিনীরা গৃহকোণ ছেড়ে বাহিরপানে পা ফেললেন। প্রায় দু’শো বছর কেটে গেছে, মেয়েরাও পেরিয়েছে অনেক পথ। তবু আজও সমাজপথে কত না বৈষম্যের জগদ্দল পাথর। গত ৬, ৭ ও ৮ ডিসেম্বর বেলেঘাটায় ব্যারিস্টারবাবুর বাড়ির অন্দরমহল, বাহিরমহল, উঠোন, ঠাকুরদালান, বারান্দা আর ছাদে জীবনখাতা খুলে বসেছিলেন বিনোদিনী, কৃষ্ণভাবিনীরা। ‘সমূহ’র নিবেদনে, ডিএজি সংস্থার সহায়তায় আয়োজিত এক ভিন্ন ধরনের নাট্য-অভিজ্ঞতা, যেখানে দর্শকরাও ঘুরে ঘুরে আস্বাদন করলেন তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy