প্রতীকী ছবি
পাড়ার ‘দাদা’, শুভানুধ্যায়ী রাজনৈতিক নেতা কিংবা কোনও ব্যবসায়ী— এঁদের সকলের ‘খুশি হয়ে দান করা’ মাস্ক, স্যানিটাইজ়ারের ভরসাতেই এত দিন পুজোর প্রস্তুতি সারছিলেন অধিকাংশ পুজো কমিটির সদস্যেরা। কলকাতা হাইকোর্টের শুক্রবারের নির্দেশের পরে তাঁরাই এখন বিপাকে। কেউই বুঝে উঠতে পারছেন না, আদালতের নির্দেশ মেনে হিসেব দিতে গিয়ে দানের সামগ্রীর ‘পাকা বিল’ তাঁরা আনবেন কোথা থেকে! দান যাঁরা করেছিলেন, চিন্তা যাচ্ছে না তাঁদেরও। পুজো কমিটিকে ‘পাকা বিল’ দিতে গেলেই এখন স্যানিটাইজ়ার ও মাস্ক-পিছু জিএসটি-র বাড়তি টাকার বোঝা বইতে হবে তাঁদের!
মুদিয়ালি ক্লাবের পুজোকর্তা মনোজ সাউ যেমন বললেন, “একটি সংস্থা ইতিমধ্যেই আমাদের ৭০০ লিটার স্যানিটাইজ়ার দিয়েছে। আরও দেবে। আর একটি সংস্থাও দেবে বলেছে। মাস্ক দেবেন আমাদের পুজোর এক শুভানুধ্যায়ী। আদালতের নির্দেশ শুনে তাঁদের মাথায় হাত পড়েছে! জরুরি সামগ্রী হওয়া সত্ত্বেও স্যানিটাইজ়ারে তো এখন ১৮ শতাংশ জিএসটি। আমরাই বা পাকা বিল দেব কোথা থেকে, বুঝে পাচ্ছি না।”
কুমোরটুলি সর্বজনীনের পুজোকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য আবার বললেন, “এ ভাবে হয় নাকি! মন্দার বাজারে অনেকেই টাকার বদলে মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার দিয়ে সাহায্য করতে চাইছেন। আমরাও ভেবেছিলাম, ও সব তো এ বার কিনতেই হত, কেউ দিচ্ছেন যখন, দিন। কিন্তু এ বার এ সবের জন্যও পাকা বিল চাইলে ব্যাপারটা কী দাঁড়াবে, জানি না।” তিনি জানান, তাঁদের মণ্ডপে ঢোকার রাস্তায় স্বয়ংক্রিয় জীবাণুনাশক যন্ত্র বসানোর কথা একটি সংস্থার। তাঁদের আশঙ্কা, আদালতের নির্দেশের পরে ওই সংস্থা এ বার পিছিয়ে না যায়!
আদালতের নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েই শিবমন্দিরের অন্যতম পুজোকর্তা পার্থ ঘোষ আবার দাবি করলেন, “যাঁরা এই দুর্দিনে মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার বা ফেস শিল্ড দেবেন বলে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন, তাঁদের বিপদে ফেলতে পারব না। সে রকম হলে সরকারি টাকা খরচ না করে ফিরিয়ে দেব।”
জগৎ মুখার্জি পার্ক, নলিন সরকার স্ট্রিট বা পশ্চিম পুটিয়ারি পল্লি উন্নয়ন সমিতির মতো পুজোর উদ্যোক্তারা আবার জানাচ্ছেন, মাস্ক থেকে স্যানিটাইজ়ার— সব নিজেরাই কিনছেন তাঁরা। জগৎ মুখার্জি পার্কের পুজোকর্তা দ্বৈপায়ন রায় বললেন, “স্পনসরই তো নেই, মাস্ক দেবেন কে! সব আমাদেরই করতে হচ্ছে। ফলে হিসেব দিতে কোনও সমস্যা নেই।” দেশপ্রিয় পার্কের পুজোকর্তা সুদীপ্ত কুমার যদিও বললেন, “আমাদেরও কিছু শুভানুধ্যায়ী সাহায্য করেছেন। আদালতের নির্দেশ মানতে লোগো বসানো কিছু মাস্ক হয়তো ছাপিয়ে নেব। কিন্তু পাকা বিল তৈরি করা কি এতটাই কঠিন? টাকা খরচের বিষয়টা একটু অন্য ভাবেও ভাবা যেত।”
অন্য ভাবে ভাবার কথা বললেন বাগবাজারের পুজোকর্তা গৌতম নিয়োগীও। তাঁর বক্তব্য, “দর্শনার্থীদের সর্বক্ষণ মাস্ক বা স্যানিটাইজ়ার দেওয়ার কাজটা করবেন কে? বাচ্চা বাচ্চা স্বেচ্ছাসেবকদের তো ওই ভিড়ের মধ্যে সর্বক্ষণ এই কাজ চালিয়ে যেতে বলতে পারি না! আমার মনে হয়, একটু অন্য ভাবে ভাবতে হবে। এলেই মাস্ক পাবেন, দর্শনার্থীদের এই ভাবনা ছাড়তে হবে।”
ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সাধারণ সম্পাদক তথা হাতিবাগান সর্বজনীনের পুজোকর্তা শাশ্বত বসু বললেন, “আদালতের নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েই বলছি, নিজেদের প্রয়োজনেই পুজো কমিটিগুলি মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার-সহ সব রকম ব্যবস্থা রাখছিল। এর পাশাপাশি, ক্লাবগুলো সারা বছর যে জনকল্যাণমূলক কাজ করে, তাতেও ওই টাকার অংশ ব্যবহার করা যাবে বললে আরও ভাল হত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy