আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ।
রাজ্যের সব চেয়ে বড় দাঁতের হাসপাতাল তথা মেডিক্যাল কলেজ ‘আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ’-এর চলতি বছরের (২০২২-’২৩) অনুমোদন আদৌ আছে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে ডেন্টাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া-র প্রকাশিত সাম্প্রতিক রিপোর্টে!
মাস দুয়েক আগে এই হাসপাতাল পরিদর্শনে এসেছিলেন ডেন্টাল কাউন্সিলের তিন ইনস্পেক্টর। ওই দলটির পরিদর্শনের ভিত্তিতে যে রিপোর্ট সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে, তাতে সামনে এসেছে আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজের একাধিক গুরুতর ত্রুটি-বিচ্যুতি। যা দেখে একই সঙ্গে বিস্মিত এবং উদ্বিগ্ন ডেন্টাল কাউন্সিল। রিপোর্টের প্রথম লাইনেই তারা জানিয়েছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পঠনপাঠনের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনপত্র দেখাতে পারেননি কাউন্সিলের ইনস্পেক্টরদের।
এর পাশাপাশি, গত ছ’মাসে ওই হাসপাতালে কোন বিভাগে, কত রোগীর কী কী চিকিৎসা হয়েছে, তার রিপোর্টও দেখাতে পারেননি কর্তৃপক্ষ! গবেষণাপত্র দেখাতে না-পারা, দামি যন্ত্রপাতি কিনে বস্তাবন্দি করে ফেলে রাখা, বায়োমেট্রিক হাজিরা প্রক্রিয়া অকেজো থাকা, কার্যত গণহারে শিক্ষকদের অনুপস্থিতি, ৮০ শতাংশের বেশি ডেন্টাল চেয়ার অকেজো থাকা, বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না-থাকা, পাবলিক হেলথ ডেন্টিস্ট্রি বিভাগ বা ওরাল ক্যানসার বিভাগের চিকিৎসার তথ্য দিতে না পারার মতো গুরুতর অভিযোগও উঠে এসেছে রিপোর্টে।
ডেন্টাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া-র সভাপতি দিব্যেন্দু মজুমদার বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এখনও ওই কলেজের চলতি বছরের অনুমোদনপত্র জমা পড়েনি। অধ্যক্ষও তা দেখাতে পারেননি। এই রকম স্তরের একটি কলেজের অনুমোদন থাকবে না, সেটা তো অভাবনীয়।’’ প্রসঙ্গত, আর আহমেদে স্নাতক স্তরে (বিডিএসে) ১০০টি এবং স্নাতকোত্তরে (এমডিএস) ৩০টির বেশি আসন আছে। সারা দেশ থেকে এখানে ছাত্রছাত্রীরা আসেন। দিব্যেন্দুর কথায়, ‘‘কলেজ এ বার উত্তর দেবে। তার পরে আমরা আবার পরিদর্শন করব। তাতে সব তথ্য ঠিকঠাক পাওয়া গেলে সমস্যা নেই। অন্যথায় কাউন্সিল ভর্তি বন্ধ করে দেবে।’’ এ ব্যাপারে রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘পুরনো কলেজের অনুমোদন প্রতি বছর নবীকরণ করতে হয় না। কিন্তু যাঁরা পরিদর্শনে এসেছিলেন, তাঁদের আবার টাটকা অনুমোদনপত্র চাই!’’
স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত বলেন, ‘‘২০১৭-’১৮ সালে এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হয়, কলেজগুলি প্রতি বছর অনুমোদন নবীকরণ করবে। সব ক্ষেত্রে হয়তো সরকার টাকা সময় মতো দিতে পারে না। আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ অনেক দিন আগেই অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছিল। টাকাটা তখনও জমা পড়েনি। এখন টাকা সরকার দিয়ে দিয়েছে বা দেবে বলেছে।’’
চিকিৎসকদের একাংশের অভিযোগ, কলেজ কর্তৃপক্ষ এখন স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুরনো তারিখে অনুমোদন বার করার চেষ্টা করছেন। তাঁদের আরও দাবি, হাসপাতালে প্রায় এক বছর মুখের ক্যানসারের অস্ত্রোপচার, ট্রমা বা দুর্ঘটনার অস্ত্রোপচার কার্যত বন্ধ। চিকিৎসার প্রয়োজনীয় চেয়ার অধিকাংশ ভাঙা। সারা দিনে দাঁত তোলা হয় মেরেকেটে ১৫০ জনের। তাতেও রোগীরা তারিখ পান চার-ছ’মাস পরে! মেডিক্যাল কলেজ হওয়া সত্ত্বেও এখানে হয় না গবেষণা, প্রকাশিত হয় না কোনও গবেষণাপত্র। গোটা রাজ্যের দাঁতের চিকিৎসার একমাত্র রেফারাল হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও শয্যা সংখ্যা মাত্র ন’টি!
ডেন্টাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া-র সভাপতি বলেন, ‘‘কাউন্সিলের পরিদর্শনের দিন একসঙ্গে ২৭ জন শিক্ষক অনুপস্থিত ছিলেন। একটি সরকারি ডেন্টাল কলেজে শিক্ষকদের এমন গণহারে অনুপস্থিতি দেখে আমি স্তম্ভিত। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা কী হচ্ছে?’’
সব অভিযোগ প্রসঙ্গে আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজের অধ্যক্ষ তপন গিরি শুধু বলেন, ‘‘যা জানানোর, সব কাউন্সিলে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। এর বেশি কিছু বলব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy