(বাঁ দিকে) মুম্বইয়ের মালাড ওয়েস্ট এবং মেরিন ড্রাইভে পথকুকুরদের গলায় ফোন নম্বরের ট্যাগ (ডান দিকে)। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।
রাস্তার যে জায়গায় সে থাকত, সেখানে তৈরি হয়েছিল মণ্ডপ। তার সঙ্গে যোগ হয় রাত-দিন বাজির বিকট আওয়াজ। আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে পালায় সে! পুজো মিটে যাওয়ার কয়েক দিন পরেও তাকে না দেখতে পেয়ে খোঁজখবর শুরু হয়। অন্য পাড়া থেকে এর পরে খবর আসে, সেখানে গিয়েছিল সে। কিন্তু অন্য কুকুরেরা তার উপরে হামলা করে। পালাতে গিয়ে গাড়ির চাকার তলায় পড়ে যায়। এক যুবক তাকে নিজের গ্যারাজে নিয়ে গিয়ে রাখলেও শেষরক্ষা হয়নি। ধুঁকতে ধুঁকতে মৃত্যু হয় কুকুরটির!
এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, পুজো এলেই কুকুর বা বেড়ালদের সঙ্গে এমন ঘটতে থাকে নানা জায়গায়। কালীপুজোয় আবার মণ্ডপের সঙ্গেই এলাকাছাড়া হওয়ার কারণ হিসাবে যুক্ত হয় বাজির ভয়। পুলিশ-প্রশাসনের তরফে লাগাতার প্রচার চালানো হলেও সুরাহা হয় না। এই পরিস্থিতিতেই প্রশ্ন উঠছে, বাড়ির পোষ্যদের তো বটেই, বাজির দাপটের সময়ে কী ভাবে ভাল রাখা যায় পথের কুকুর বা বেড়ালদের? খোঁজখবর করতেই জানা গেল, মুম্বই শহরের পশুপ্রেমীদের এক উদ্যোগের কথা। পথকুকুরদের খাওয়ানো, চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার পাশাপাশি তাঁরা করেন আরও একটি কাজ। ওই কুকুরদের গলায় নিজেদের এলাকা ও ফোন নম্বর লেখা ট্যাগ ঝুলিয়ে দেন তাঁরা। তাতে লেখা থাকে, ‘কুকুরটি এলাকাছাড়া হয়েছে বুঝলেই এই নম্বরে ফোন করুন’। দীপাবলি তো বটেই, সারা বছরই সুফল পাওয়া যায়। কোনও কুকুর দুর্ঘটনায় পড়লে বা অসুস্থ হলে ফোন আসে দ্রুত। মুম্বই নিবাসী টিনা জয়সওয়াল ফোনে বললেন, ‘‘দীপাবলিতে এখানে খুব বাজি ফাটে। ফলে পথকুকুরদের সঙ্গে আমাদের নম্বর থাকলে ওদের খুঁজে পেতে সুবিধা হয়।’’
বাজি ফাটানোর দিক থেকে কলকাতাও কম যায় না বলে অভিযোগ। কেউ পোষ্যকে জড়িয়ে বসে থাকেন। কেউ দরজা-জানলা বন্ধ করে জোরে গান চালিয়ে বাজির শব্দ চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ ঘুমের ওষুধ দিয়ে কিছুটা ভাল রাখার চেষ্টা করলেও পরে নিরুপায় হয়ে চিকিৎসককে ফোন করেন। তার পরে থানায়। অভিযোগ, সুরাহা মেলে না তাতেও। মানিকতলার বাসিন্দা, সাহানা সরকার নামে এক পশুপ্রেমী বললেন, ‘‘কুকুর মানুষের চেয়ে কয়েক গুণ জোরে আওয়াজ শোনে। কুকুরের চেয়েও জোরে শোনে বেড়াল। আমার বেড়াল বছর তিনেক আগে এই বাজির জন্যই কালীপুজোর রাতে হৃদ্রোগে মারা গিয়েছে।’’ সল্টলেকের বাসিন্দা দেবলীনা সাহা বললেন, ‘‘অন্তঃসত্ত্বা প্রাণী হলে বাজির আওয়াজের প্রভাব পড়ে সন্তানের উপরেও। যে বাচ্চা জন্মায়, তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব কম হয়।’’ এক পোষ্যের অভিভাবক, যাদবপুরের তমাল দাস জানালেন, তাঁদের ৪৮ দিনের অন্তঃসত্ত্বা কুকুর কালীপুজোর রাতে বাজির আওয়াজে ভয় পেয়ে আলমারির নীচে ঢুকতে গিয়ে পেটে আঘাত পেয়ে অজ্ঞান হয়ে যায় সে। পরের দিন বোঝা যায়, বাচ্চা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আওয়াজের ভয় এবং সন্তান হারানোর শোক এমন চেপে বসে যে, দ্রুত চিকিৎসা করানো যায়নি। শেষে পায়োমেট্রা রোগে মৃত্যু হয় তার।
পশু চিকিৎসক অভিরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘আওয়াজ থেকে বাঁচতে যদি পথকুকুর বা বেড়াল বাড়িতে আশ্রয় খোঁজে, তাকে সেখানে থাকতে দিতে হবে। সেখানে জল রাখতে হবে, হালকা খাবার খাওয়াতে হবে। বাড়ির দরজা-জানলা বন্ধ করে জোরে গান চালিয়ে বাজির শব্দ আটকানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। শ্বাসকষ্ট বা অন্য সমস্যায় দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। ঘুমের ওষুধ দেওয়ার পাশাপাশি পোষ্যকে ওদের পছন্দের জায়গায় থাকতে দেওয়া ভাল।’’ পশু চিকিৎসকদের পরামর্শ, ‘‘বাড়িতে হৃদ্রোগী বা অসুস্থ প্রবীণেরা থাকলে যেমন বাজি ফাটানো বা জোরে মাইক বাজানোর প্রতিবাদ করি, এ ক্ষেত্রেও তেমনই করতে হবে। বলতে হবে বাড়িতে পোষ্য রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy