নাবালক জমিদারদের উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে, ব্যবস্থাপক সভার এক আইনবলে ১৮৫৬ সালে পৃথক আবাসিক শিক্ষালয় হিসাবে স্থাপিত হয় ‘ওয়ার্ড ইনস্টিটিউশন’। প্রথমে চিৎপুরে, পরে মানিকতলায় উঠে আসে প্রতিষ্ঠানটি— শ্রীকৃষ্ণ সিংহের বাগানে। তার ডিরেক্টর হলেন রাজেন্দ্রলাল মিত্র, এবং সংস্থার কাজকর্ম তদারকের জন্য নিযুক্ত হলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর-সহ আরও চার জন পরিদর্শক। ১৮৬৩ সাল থেকে ইনস্টিটিউশনের কাজ নিয়ে পরিদর্শক বিদ্যাসাগরের বিভিন্ন রিপোর্টে এক জন স্বপ্নদর্শী শিক্ষা প্রশাসকের ভাবমূর্তি ছাড়াও আমরা বিদ্যাসাগরকে দেখতে পাই এক অন্য ভূমিকায়— শিক্ষালয়ে ছাত্রদের শারীরিক ভাবে শাস্তি দেওয়া বন্ধ করায় সচেষ্ট এক কর্মী হিসাবে।
ভবিষ্যতের জমিদার হলেও, ইনস্টিটিউশনের ছাত্রদের সে সময় শাস্তিযোগ্য অপরাধের দণ্ড হিসেবে বেত্রাঘাত করা হত। বিষয়টি নিয়ে বিদ্যাসাগর সবিস্তারে খোঁজ নিয়ে দেখে লিখলেন, সংস্থার ‘রুল বুক’-এ তেমন শাস্তি একমাত্র চরম অনুশাসন ভঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহারের কথা থাকলেও, প্রতি মাসে এক বা একাধিক ছাত্রকে বেত মারা হয়। নিয়ম মেনে রেজিস্টারে লেখা হত কারণ-সহ ঘটনাগুলি। সেই সব খুঁটিয়ে দেখে বেত্রাঘাতের শাস্তিকে অনিবার্য মনে করার মতো ‘চরম’ কারণ তাঁর চোখে পড়ল না। সেই তথ্য উল্লেখ করে বিদ্যাসাগর শারীরিক শাস্তি পুরোপুরি তুলে দেওয়ার পক্ষে জোরালো সওয়াল করলেন রিপোর্টে।
গুরুমশাই পরিচালিত পাঠশালাগুলিতে শাস্তির নামে নানা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের রমরমা থাকলেও, বিদ্যাসাগর তাঁর রিপোর্টে লিখেছেন যে সরকারি শিক্ষাঙ্গনগুলিতে সেই সময়েই বেতের প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধ। সেই উদাহরণ দিয়ে তিনি যুক্তি দিলেন, অন্য সরকারি শিক্ষাঙ্গনগুলিতে পড়ুয়াদের বেত ছাড়াই নিয়ন্ত্রণ করা গেলে, ওয়ার্ড ইনস্টিটিউশনে তার অন্যথা হবে কেন? ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার উল্লেখ করে তিনি লেখেন, শারীরিক শাস্তি পড়ুয়াদের সংশোধন করার বদলে তাদের আত্মবিশ্বাস ও মনোবলের স্থায়ী ক্ষতি করে বলেই তাঁর বিশ্বাস।
ওয়ার্ড ইনস্টিটিউশনের উন্নতির জন্য বিদ্যাসাগরের করা অন্যান্য নানা সুপারিশ কর্তৃপক্ষ মেনে নিলেও, শারীরিক শাস্তি নিয়ে তাঁর বক্তব্যের কড়া বিরোধিতা করে নিজস্ব যুক্তি দেন রাজেন্দ্রলাল মিত্র। বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য আলাদা কমিটি গঠিত হয়। শেষ পর্যন্ত রাজেন্দ্রলালের প্রস্তাবিত কর্মপদ্ধতিই গৃহীত হয়। বিষয়টি নিয়ে উনিশ শতকের বাংলার দুই দিকপালের মধ্যে শুরু হওয়া মতান্তর ক্রমে মনান্তরে রূপ নিয়েছিল। পরিদর্শকের পদ থেকে ইস্তফা দেন বিদ্যাসাগর।
তার পর আরও প্রায় দেড়শো বছর লেগেছে স্কুলে শিশুদের কঠোর শাস্তি থেকে পুরোপুরি মুক্তি দিতে। ২০০৯-এর শিক্ষার অধিকার আইনে দেশের সব স্কুল থেকে সব ধরনের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি রদ করা হয়। এগিয়ে আসছে ২৬ সেপ্টেম্বর, বিদ্যাসাগরের জন্মদিন। শিক্ষালয়কে শিশুবান্ধব করে তোলার লক্ষ্যে এই মানুষটির লড়াইয়ের কথা আমরা মনে রেখেছি কি? ছবিতে কলেজ স্কোয়ারে বিদ্যাসাগরের মূর্তি।
শিল্পপ্রাণ
ছবি আঁকতেন, মাটির মূর্তি গড়তেন ছোটবেলায়। আর্থিক অসচ্ছলতা হেতু তাঁর শিল্পী হওয়া হয়নি বটে, কিন্তু আর্টের প্রতি আজীবন তীব্র আকর্ষণ ছিল সত্যজিৎ চৌধুরীর (ছবি)। ভারতীয় শিল্পকলার ইতিহাস, অবনীন্দ্রনাথের নন্দনতত্ত্ব, নন্দলাল বসু-বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়-সোমনাথ হোরকে নিয়ে গবেষণা, অগ্রণী শিল্পীদের কাজের স্লাইড তৈরিতে অকাতর ব্যয় তার সাক্ষী। মফস্সলের কিশোর সঙ্ঘ, গ্রামের কুমোরপাড়ায় পৌঁছে যেতেন স্লাইড-প্রোজেক্টর নিয়ে, ছবি-ভাস্কর্য নিয়ে বলতে। নৈহাটিতে ‘বঙ্কিম-ভবন গবেষণা কেন্দ্র’ তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি। তারই প্রতিষ্ঠাদিবসে, আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টেয় সেখানে তৃতীয় বর্ষের ‘সত্যজিৎ চৌধুরী স্মারক বক্তৃতা’। ‘দৃশ্যজগতের সঙ্গে আলাপচারিতা: কে জি সুব্রহ্মণ্যনের শিল্প’ নিয়ে বলবেন বিশ্বভারতী কলাভবনের শিক্ষক সৌমিক নন্দী মজুমদার। প্রকাশ পাবে সুনীলকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্কিমচন্দ্র: আ স্টাডি অব হিজ় ক্রাফ্ট বইটির পুনর্মুদ্রণ।
নগর-কথা
চার্লি চ্যাপলিনের ছবি সিটি লাইটস-এর উপজীব্য ছিল নাগরিক পরিবেশের অনিশ্চয়তা। সেখান থেকে প্রেরণা নিয়েই এই শহরে শুরু হচ্ছে ‘সিটি লাইটস বক্তৃতামালা’, ক্যালকাটা রিসার্চ গ্রুপ-এর উদ্যোগে। এই বক্তৃতাগুলি তুলে ধরবে নগরের সৃষ্টি ও রূপান্তর, তার ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত, আর্থ-সামাজিক অসাম্য, বাহ্যিক চেহারা, চলমান উন্নয়ন-প্রকল্প। নগরের অতীত কেমন করে গড়ে তোলে তার বর্তমান, নগরোন্নয়ন প্রকল্প কী ভাবে বিবর্তিত হয় পরিকাঠামো নির্মাণ ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির মাধ্যমে, আসবে সব প্রসঙ্গই। প্রথম বক্তা সমাজতাত্ত্বিক রণবীর সমাদ্দার, ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে বলবেন ‘নাগরিক ঝোঁক, জৈব-রাজনীতি এবং নগর’ বিষয়ে।
স্মরণে, মননে
বিশিষ্ট মঞ্চচিত্রী খালেদ চৌধুরী প্রয়াত হন ২০১৪ সালে। সেই বছরটি থেকেই কলকাতার নাট্যদল ‘আভাষ’ তাঁর নামাঙ্কিত সম্মাননা জানিয়ে আসছে থিয়েটারের বর্তমান এক জন নেপথ্য কারিগরকে। আগামী কাল, ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধে সাড়ে ৬টায় বাংলা আকাদেমি সভাকক্ষে এ বছরের খালেদ চৌধুরী সম্মাননায় ভূষিত হবেন মঞ্চশিল্পী সঞ্চয়ন ঘোষ। দ্বিতীয় পর্বে ওঁরা আয়োজন করেছেন জরুরি এক আলোচনারও— দলের দুই প্রয়াত সদস্য শান্তনু গুপ্ত ও দেবাশিস চট্টোপাধ্যায়ের স্মরণে। ‘প্রচ্ছন্ন স্বরের সন্ধান: বাংলা থিয়েটারে অভিনেত্রী’ বিষয়ে বলবেন সোহাগ সেন অনসূয়া মজুমদার সেঁজুতি রায় মুখোপাধ্যায় ও তূর্ণা দাশ, কথা-সমন্বয় ও সংযোজনায় শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়।
ন্যায়ের দণ্ড
পিতা সত্যের সঙ্গী, ন্যায়পরায়ণ বিচারক। ও দিকে নামী আইনজীবী পুত্র অপরাধীকে বাঁচায় অর্থের বিনিময়ে। ফল: বিরোধ, ব্যক্তিগত সম্পর্কে চিড়। এ দিকে ঘটে যায় দুর্ঘটনা, পিতার দোষে মারা যায় সদ্য মুক্তি পাওয়া এক অপরাধী, যার বিচার করে মৃত্যুদণ্ড দিতে চেয়েছিলেন বিচারক। আইন প্রশাসন বিচারককে দোষী বলে চিহ্নিত করলে পুত্র দাঁড়ায় পিতার হয়ে, আইনি যুক্তিজালে মুক্ত করে পিতাকে। কিন্তু পিতা কি তা চান? শুদ্ধ ন্যায়ধর্মে আর তার উল্টো দিকে অন্যায়কারীর বর্ম হিসাবে যে কোনও মূল্যে আইনের ব্যবহার, এই দুইয়ের দ্বন্দ্ব নিয়ে ‘সায়ক’ নাট্যদলের নতুন নাটক ধর্মাবতার। মেঘনাদ ভট্টাচার্যের নির্দেশনায় আগামী ২৭-২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধে সাড়ে ৬টায় অভিনয় অ্যাকাডেমি ও গিরিশ মঞ্চে।
সংগ্রামে সঙ্গী
নাগরিক মঞ্চের পথ চলা শুরু ১৯৮৯-এর ২১ সেপ্টেম্বর। বন্ধ ও রুগ্ন শিল্পের পুনরুজ্জীবন, শ্রমিকের প্রাপ্য অধিকার দাবিতে তাঁদের পাশে নিয়ে নিরন্তর লড়াই চালিয়ে গিয়েছে তারা। গত পঁয়ত্রিশ বছর ধরে কাজ করছে শিল্প, শ্রম ও শ্রমিকের অধিকার নিয়ে; সঙ্গী হয়েছে জল জমি জঙ্গল সংরক্ষণে মানুষের লড়াইয়ে। বহু কর্মসূচি, প্রকাশনা, রিসোর্স সেন্টার, ওয়েবসাইট, ব্লগ ইত্যাদিও হাতিয়ার ওদের। শ্রমজীবী মানুষের অপ্রাপ্তি ও বঞ্চনা শেষ হয়নি আজও, এখনও ভারতে বা বাংলায় শ্রমিকেরা ভাল নেই। তাঁদের শ্রেণি-অবস্থান আজ অনেকটাই ধূসর, সংগ্রামের পথও কণ্টকময়। এই প্রেক্ষিতেই ভারতে শ্রমিক শ্রেণির অবস্থান, পুঁজি ও শ্রমের দ্বন্দ্ব নিয়ে আলোচনা করবেন অঞ্জন চক্রবর্তী প্রসেনজিৎ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। আজ সন্ধ্যা ৬টায়, রামমোহন লাইব্রেরির রায়া দেবনাথ সভাগৃহে।
তোমার প্রকাশ
১৮৪১-এ সংস্কৃত কলেজে শেষ হল ঈশ্বরচন্দ্র শর্মার বিদ্যায়তনিক পাঠ, স্মৃতি কাব্য অলঙ্কার ন্যায়ে দুর্ধর্ষ অধিকার তখন তাঁর। এ বার লক্ষ্য ইংরেজি ভাষা, যা দেবে পশ্চিমের জ্ঞানসাম্রাজ্যের ছাড়পত্র। সে বছরই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পেশাজীবন শুরু, জি টি মার্শালের তৎপরতায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে হেড পণ্ডিত পদে। পাঠদানের পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায় পাঠগ্রহণ শুরু মার্শাল সাহেবের উৎসাহে; শিক্ষকরূপে পেলেন নীলমাধব মুখোপাধ্যায় দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজনারায়ণ বসুকে। কয়েক বছরেই এল নিপাট অধিকার। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রকাশিত দি ইংলিশ রাইটিংস অব ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর: আ কালেকশন (সম্পা: প্রবীর মুখোপাধ্যায়, পূর্বকথন অধ্যাপক গৌতম ভদ্র) বইটিতে তারই বিচ্ছুরণ। প্রকাশ পাবে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর বিদ্যাসাগরের জন্মদিনে, তাঁর বাদুড়বাগানের বাড়িতে (বাঁ দিকের ছবি, নব্বই দশকের) এক অনুষ্ঠানে।
চিরকালীন
প্রায় অর্ধশতক আগে প্রকাশিত কার্টুনিস্ট চণ্ডী লাহিড়ীর প্রথম প্রকাশিত কার্টুন সঙ্কলন ভিজ়িট ইন্ডিয়া উইথ চণ্ডী/ চণ্ডীর চোখে ভারতদর্শন ফিরে এল, শহরের কার্টুন-পত্রিকা বিষয় কার্টুন-এর বিশেষ সংখ্যা রূপে। বিশ্বদেব গঙ্গোপাধ্যায়, সুশান্ত রায়চৌধুরী ও অগ্নিভ চক্রবর্তী নতুন করে সাজিয়েছেন অধুনা দুষ্প্রাপ্য বইটি। মূল বইয়ে প্রকাশিত চণ্ডী লাহিড়ীর লেখা ভূমিকাটি ছাপা হয়েছে, তার পরেই— তাঁর আঁকা দেড়শোরও বেশি সাদা-কালো রঙ্গব্যঙ্গচিত্র। ওঁর কার্টুন মানেই সমকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক ভাষ্য, যেমন ছবিতে ব্যবহৃত কার্টুনটি: শহরের তুমুল যানজটের কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাফিক পুলিশটি মনে মনে নিজেকে ভাবছেন ধেনুদলবল্লভ কেষ্টঠাকুর রূপে! অনেকগুলিই না-দেখা, পশ্চাৎপ্রচ্ছদে চণ্ডীবাবুর রঙিন কার্টুন-আত্মপ্রতিকৃতিটিও খাসা।
শতবর্ষী
পিতা তমোনাশচন্দ্র দাশগুপ্ত কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিপার্টমেন্ট অব ভার্নাকুলারস-এর (বাংলা) প্রথম বিভাগীয় প্রধান; যাঁর মাতামহ ছিলেন দীনেশচন্দ্র সেন। এই প্রজ্ঞার উত্তরাধিকারী পরেশচন্দ্র দাশগুপ্ত। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসের ছাত্র, ১৯৫১-তে সেখানেই অধ্যাপক, বয়স তখন মাত্র আটাশ। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ মিউজ়িয়মের সহকারী কিউরেটর হন, মিউজ়িয়োলজি বিভাগ শুরুতেও তাঁর মুখ্য ভূমিকা। মিউজ়িয়োলজি-আর্কিয়োলজির টানে ঘুরেছেন মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা। ১৯৬০-এ গঠিত পশ্চিমবঙ্গ পুরাতত্ত্ব বিভাগের প্রথম ডিরেক্টর, ’৮১ অবধি সে পদে, প্রয়াত ১৯৮২-তে। বাংলা-ইংরেজিতে লিখেছেন বহু প্রবন্ধ, বই। জন্মশতবর্ষ স্মরণে তাঁর পরিবার ও বাংলার পুরাতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র আজ সন্ধে ৬টায় রোটারি সদনে আয়োজন করেছে আলোচনা-অনুষ্ঠান, প্রকাশ পাবে বইও— শতবর্ষের আলোকে পরেশচন্দ্র দাশগুপ্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy