পুড়ে গিয়েছে ঘরের সব আসবাবও। মঙ্গলবার, বেলেঘাটায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
বিছানায় শোয়া বৃদ্ধার দু’টি পা-ই পক্ষাঘাতে অকেজো। কারও সাহায্য ছাড়া বিছানা থেকে নামতে পারেন না। এ দিকে, বাড়ির অন্য সদস্যেরাও সে সময়ে সকলে কাজে বেরিয়েছিলেন। এমন সময়ে ফ্ল্যাটে আগুন লেগে মর্মান্তিক ভাবে মৃত্যু হল ওই বৃদ্ধার। সোমবার রাত ৮টা নাগাদ, বেলেঘাটার আরএএল সিংহ লেনে এই ঘটনা ঘটে। মৃতার নাম অমিতা দাস (৭৫)। ১বি ঠিকানায় চারতলার ওই ফ্ল্যাটে পুড়ে মৃত্যু হয় তাঁর। ঘরে জ্বলন্ত মোমবাতি থেকে আগুন লেগে থাকতে পারে বলে অনুমান বাড়ির বাসিন্দাদের। আগুনের ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টের জেরে মৃত্যু হয়েছে ফ্ল্যাটের মধ্যে দড়ি দিয়ে বাঁধা থাকা পোষ্য কুকুরটিরও।
বেলেঘাটার ওই ফ্ল্যাটে মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, দরজার সামনে প্রতিবেশীদের ভিড়। তাঁরা কেউই মেনে নিতে পারছেন না অমিতা এবং পোষ্যটির মৃত্যুর ঘটনা। ভিড়ের মধ্যেই শোকস্তব্ধ অবস্থায় বসে ছিলেন অমিতার মেয়ে শেলি দাস। তিনি ১০০ দিনের প্রকল্পের কাজ করেন। শেলির স্বামী প্রদীপের মাছের ব্যবসা রয়েছে। শেলি বলেন, ‘‘আমরা কেউ বাড়িতে ছিলাম না। একমাত্র মা ঘরে ছিলেন। মেয়ে আবিরা গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে গিয়েছিল। স্বামীও তখন কাজ থেকে ফেরেননি। আমি কাজ সেরে বাড়ি ফিরে ঘরের দরজা খুলে দেখি, ফ্ল্যাট দাউ দাউ করে জ্বলছে। মায়ের বিছানাতেও আগুন লেগেছিল। ফ্ল্যাট ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে। আমাদের কুকুর মিল্কি দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিল। ওর গায়ে আগুন না লাগলেও ও নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল। তখনই চিৎকার করে সবাইকে ডাকি।’’
শেলির চিৎকারে ফ্ল্যাটের অন্য বাসিন্দা ও প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। তাঁরাই প্রথমে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। পরে খবর পেয়ে দমকলের একটি ইঞ্জিন আসে। অগ্নিদগ্ধ অমিতাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
দমকলের এক আধিকারিক জানান, আগুন লাগার কারণ খতিয়ে দেখছেন তাঁরা। তবে শেলির মতে, ঘরে জ্বালানো মোমবাতি থেকেই সম্ভবত এই অগ্নিকাণ্ড ঘটে। তিনি বলেন, ‘‘বিদ্যুতের বিল বকেয়া থাকায় কিছু দিন আগে আমাদের বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে। রাতে মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখা হয়। আমার মেয়ে পড়তে যাওয়ার আগে ফ্রিজের উপরে মোমবাতিটা জ্বালিয়ে চলে যায়। অন্য দিন সেটা নিভিয়ে বেরোয়। এ দিন বোধহয় ভুলে গিয়েছিল। তা থেকেই আগুন ছড়িয়েছে মনে হয়।’’
তবে প্রশ্ন উঠেছে, বহুতলের ফ্ল্যাটে আগুন লাগার পরে কি বৃদ্ধা সাহায্যের জন্য চিৎকার করেননি? পোষ্যটিও কি ডাকাডাকি করেনি? তা হলে অন্য বাসিন্দারা কেউ টের পেলেন না কেন? প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, যে তলে ওই বৃদ্ধাদের ফ্ল্যাট, সেই তলে পাশের দু’টি ফ্ল্যাটে কেউ থাকেন না। আর নীচের তলায় থাকা বাসিন্দারা বুঝতে পারেননি যে, উপরের একটি ফ্ল্যাটে আগুন লেগেছে। পম্পা দাস নামে ওই বহুতলের তেতলার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘চারতলায় ওঁদের পাশের ফ্ল্যাটে যদি কেউ থাকতেন, তাঁরা হয়তো কোনও চিৎকার বা কুকুরের ডাকাডাকি শুনতে পেতেন। আমরা নীচে থাকি। শীতের রাতে জানলাও বন্ধ রেখেছিলাম। তাই কোনও শব্দই পাইনি।’’ আর এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘এক বার জানলা খুলতে পোড়া গন্ধ পেয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, শীতে আশপাশে কেউ হয়তো পাতা পোড়াচ্ছে। বহুতলের চারতলাতেই যে আগুন লেগেছে, তা ঘুণাক্ষরেও বুঝিনি। এখন শুধু মনে হচ্ছে, বাড়িতে থেকেও কেন কিছু টের পেলাম না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy