দীপু দাসের পায়ে অস্ত্রোপচার করে বসেছে রড। নিজস্ব চিত্র।
সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিখরচার অস্ত্রোপচারে বাবার পায়ে রড বসেছে ঠিকই। কিন্তু সপ্তাহে এক বার সেখানে ডাক্তার দেখানোর জন্য যাতায়াতেই ৮০০ টাকা অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া। পায়ের ড্রেসিংয়ের জন্য দু’দিন অন্তর লাগে ৩০০ টাকা করে। ওষুধের খরচ আলাদা। সঙ্গে বৃদ্ধা ঠাকুরমা, মানসিক সমস্যায় ভোগা কাকা আর বছর আটেকের ভাইকে নিয়ে সংসার চালানোর চাপ। মা অসুস্থ হয়ে আবার মামার বাড়িতে।
তবু লড়াই ছাড়েনি গত ডিসেম্বরে কলকাতা পুরসভার নির্বাচনের দিন বোমায় আহত দীপু দাসের মেয়ে পূর্ণিমা। একাধিক নেতা-মন্ত্রী সেই সময়ে সাহায্যের আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। অভিযোগ, এখন তাঁদের ফোন করলে ওপ্রান্ত থেকে কেটে দেওয়া হয়। উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়া মেয়ে তাই শয্যাশায়ী বাবার চিকিৎসা থেকে সংসারের খরচ— সবই চালাচ্ছে নিজের কন্যাশ্রীর টাকায়। পড়াশোনার পাশাপাশি চালিয়ে যাওয়ার মতো কোনও কাজ খুঁজছে মেয়ে। উচ্চমাধ্যমিকের টেস্টে ভাল নম্বর পেয়েছে সে। তাই পরীক্ষায় বসতে চায়। পূর্ণিমা বলে, ‘‘এপিসি রোডেই বাড়ির কাছের একটা বহুতলে পড়াতে যেতাম। করোনা বাড়ছে দেখে বলে দেওয়া হয়েছে, এখন আসার দরকার নেই। পরে দরকার হলে যোগাযোগ করা হবে। এ দিকে বাবার এই অবস্থা। তাই ব্যাঙ্ক থেকে আমার কন্যাশ্রীর টাকা তুলে এনেছি। সেই দিয়েই অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। ড্রেসিং করেন যে কাকু, তাঁকেও টাকা দিয়েছি। আর বাড়ির জন্য চাল-আলু কিনেছি।’’
পূর্ণিমার বাবা বছর চল্লিশের দীপু পেশায় গাড়িচালক। গত ১৯ ডিসেম্বর মানসিক সমস্যায় ভোগা ভাইকে টাকি বয়েজ় স্কুলের কেন্দ্রে ভোট দিতে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁকে বাড়িতে রেখে এসে ফের রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। টাকি বয়েজ় স্কুলের উল্টো দিকের দোকান থেকে পান কিনে রাস্তা পারাপারের সময়েই সেখানে আচমকা বোমা মেরে পালায় কয়েক জন দুষ্কৃতী। ওই বিস্ফোরণে দীপুর ডান পায়ের খানিকটা অংশ উড়ে যায়। আহত হন আরও দু’জন। তড়িঘড়ি তাঁদের নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। আঘাত গুরুতর না হওয়ায় অন্য দু’জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানেই অস্ত্রোপচার করে দীপুর পায়ে লোহার রড ঢোকানো হয়। ভোটের ফলাফলের দিন ওই অস্ত্রোপচারের জন্যও দীপুকে দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকতে হয় বলে অভিযোগ উঠেছিল। হাসপাতাল থেকে প্রথমে জানানো হয়, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করা না থাকলে অস্ত্রোপচার হবে না। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে অস্ত্রোপচার হয়।
শয্যাশায়ী দীপু এ দিন বলেন, ‘‘আর গাড়ি চালাতে পারব কি না জানি না। যাঁর গাড়ি চালাতাম, তিনি অন্য লোক রেখে দিয়েছেন। পরিবারে আমিই একমাত্র রোজগেরে ছিলাম। ছেলেমেয়ের পড়ার খরচ ছেড়েই দিচ্ছি, সংসার চালানোর টাকাও নেই। যে মেয়েকে এখন আমার পড়ানোর কথা, সে কাজ খুঁজছে। কন্যাশ্রীর টাকা তুলে এনে আমার চিকিৎসার খরচ করছে, সংসারের চাল কিনছে।’’ কাঁপা গলায় ফের বলেন, ‘‘ওর মা-ও অসুস্থ। বাবা-মায়ের কাছে গিয়েছিল, সেখানেই ম্যালেরিয়া ধরা পড়েছে। তাই আসতে পারছে না।’’
পাশে বসা বৃদ্ধা মা ছেলেকে শান্ত করে বলেন, ‘‘নাতনি আমার রাতভর ঘুমোয় না। বাবার একটু কষ্ট বুঝলেই উঠে পড়ে। ওইটুকু মেয়ে কত কষ্ট করবে জানি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy