Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Health

‘করোনা-সেল’ দিয়েই শুরু চৈত্রের বাজার

ঠিক এক মাস পরেই বাঙালির নববর্ষ। সেই উপলক্ষে চৈত্র জুড়ে সেলের বাজার কত দূর সফল হবে, তা নিয়ে সন্দিহান গড়িয়াহাট, হাতিবাগানের ব্যবসায়ীরা।

চেনা ভিড় নেই গড়িয়াহাটের ফুটপাতের দোকানে। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

চেনা ভিড় নেই গড়িয়াহাটের ফুটপাতের দোকানে। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২০ ০৪:২৮
Share: Save:

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে কত দিনে? প্রশ্নটা ঘুরপাক খাওয়া শুরু করতেই শনিবার দুপুর থেকে মন খারাপ হতে থাকে শহরের। সরকার স্কুল-কলেজ ছুটি ঘোষণা করার পরে যা আরও বেড়ে যায়। রবিবার দিনভর সেই মন খারাপেরই ছবি দেখল কলকাতা। শহরের দ্রষ্টব্য স্থানগুলির পাশাপাশি ছুটির দিনের উৎসাহ ফিকে হতে দেখা গেল, শপিং মল, সিনেমা হল, রেস্তরাঁ সর্বত্র। গড়িয়াহাট, হাতিবাগান, শ্যামবাজারের মতো ব্যস্ততম বাজার এলাকাও কার্যত জনশূন্য!

ঘটনাচক্রে, এ দিনই ছিল চৈত্রের প্রথম দিন। ঠিক এক মাস পরেই বাঙালির নববর্ষ। সেই উপলক্ষে চৈত্র জুড়ে সেলের বাজার কত দূর সফল হবে, তা নিয়ে সন্দিহান গড়িয়াহাট, হাতিবাগানের ব্যবসায়ীরা। বিকেলের পরে যে ক’জন ক্রেতা সেখানে পৌঁছলেন, তাঁরাও যেন বেশি উত্তেজিত করোনা-আলোচনায়। উত্তেজনা বাড়ল হাতিবাগানের এক হকারের চিৎকারে। ‘‘করোনার ছাড় চলছে। এ দিকে আসুন। এ দিকে!’’ কাছেই দাঁড়ানো তনয়া সাঁতরা নামের এক তরুণী বললেন, ‘‘এ সব বললে আরও কেউ কিনবেন না। এখন তো করোনাই মূল শত্রু!’’

একই অবস্থা শপিং মলগুলির। প্রায় ফাঁকা সেখানকার সিনেমা হল। দক্ষিণ কলকাতার একটি ফাঁকা শপিং মল থেকে সিনেমা দেখে এক ব্যক্তিকে গরম পোশাক জড়িয়ে বেরোতে দেখা গেল। জ্বর নাকি? প্রশ্ন শুনে প্রথমে এড়িয়ে গেলেও ফিরে বললেন, ‘‘গুজব ছড়াবেন না। জ্বর মানেই কি খারাপ? শুনেছি, গরমে নাকি ভাইরাস মরে যায়। তাই সোয়েটার পরে এসেছিলাম।’’ সল্টলেকের একটি শপিং মলে আবার গল্পে ব্যস্ত কয়েক জন জানালেন, কয়েক দিন ঘরবন্দি হতে হবে ভেবে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে এসেছেন।

স্কুল-কলেজের পাশাপাশি শনিবার ভিক্টোরিয়া, জাদুঘর এবং সায়েন্স সিটিও আপাতত বন্ধ থাকার ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল। জাদুঘরের এক নিরাপত্তাকর্মী বললেন, ‘‘ঘোষণা না শুনেই সকাল থেকে অনেকে আসছেন। মুখের মাস্ক দেখিয়ে কেউ কেউ বলছেন, আমরা তো নিরাপত্তা নিয়েই এসেছি। ঢুকতে সমস্যা কোথায়?’’ ভিক্টোরিয়ার মিউজ়িয়াম বন্ধ থাকলেও সেখানকার বাগানে এ দিন এসেছিলেন বিহারের বাসিন্দা কয়েক জন মহিলা। তাঁদেরও মুখে সাদা মাস্ক। এক জন বলেন, ‘‘ছেলেরা পরিয়ে দিয়েছে। কী একটা হচ্ছে না, তাই!’’

আলিপুর চিড়িয়াখানা অবশ্য বন্ধের কোনও ঘোষণা হয়নি। সেখানে বাবা-মা এবং শিশুপুত্র তিন জনই এসেছিলেন কালো মাস্ক পরে। দিনভর ঘুরে শিম্পাঞ্জি ‘বাবু’র খাঁচার সামনে এসে বাঁধ ভাঙল শিশুটির। কিছুতেই মাস্ক রাখতে চায় না সে। ছেলে মাস্ক রাখবে না কি খুলবে, এই নিয়ে তর্ক শুরু হল বাবা-মায়ের। বাবা বললেন, ‘‘বহু ক্ষণ থেকে কাঁদছে, খুলে দাও না! ভিড়ও তো নেই। ভিড়ে সংক্রমণ এড়াতেই তো মাস্ক পরতে বলেছে বলে জানি।’’

শুনে রেগে অগ্নিশর্মা স্ত্রী। ছেলেকে কোল থেকে নামিয়ে নিজের মাস্ক আরও শক্ত করে বেঁধে তিনি বললেন, ‘‘যা খুশি করো, ভিড় হলে মাস্ক, আর না হলে নয়? কেমন নিয়ম! পশুদের মধ্যেও কত ভাইরাস থাকে জানো?’’ তর্ক আরও কিছু ক্ষণ চলত হয়তো! কিন্তু দু’জনেই রণে ভঙ্গ দিলেন বাবুর চিৎকারে। আশপাশের কয়েক জন হেসে বললেন, ‘‘পশুর ভাইরাস বলেছেন, বাবু শুনেছে!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Health Coronavirus Chaitra Sale Bengali New Year
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy