ফাইল চিত্র।
নিউ টাউন-রাজারহাট এলাকায় যে ব্যবসার সূচনা হয়েছিল বেকার যুবকদের সহায় হিসাবে, কালে কালে তা-ই হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের ত্রাস। মাঝে কিছুটা কমলেও দল বদলের নানা সমীকরণের জেরে ফের কি বাড়তে পারে সিন্ডিকেটের রমরমা?
খেলা হচ্ছে। তবে প্রায় সবই ‘প্রস্তুতি ম্যাচ’! কারণ, সদ্য দলে ফেরা বড় খেলোয়াড় মাঠের কোন দিকে খেলবেন, কী ভাবে খেলবেন, তা-ই এখনও স্পষ্ট নয়। দলের অন্য খেলোয়াড়ের, তথা বরাবরের ‘চিহ্নিত প্রতিদ্বন্দ্বী’র সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়া কেমন হয় বা ‘কোচ’ কেমন ভাবে খেলার নির্দেশ দেন, সেটিও এ ক্ষেত্রে বড় ব্যাপার।
বিধানসভা নির্বাচনোত্তর বঙ্গে খেলা শব্দের অভিঘাত বহুমুখী। তবে এ ক্ষেত্রে খেলার অর্থ রাজারহাট, নিউ টাউনের সিন্ডিকেট ব্যবসা। এই খেলার মাঠের দখলদারি নিয়েই এক সময়ে শাসক দলের দাদাদের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা লোকজনের মধ্যে গোলমাল, অশান্তি লেগে থাকত। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, ইমারতি দ্রব্যের ওজনে কারচুপি এবং সেই দ্রব্যের যেমন খুশি দর হাঁকা নিয়ে কার্যত নাজেহাল অবস্থা হয়েছিল প্রশাসনের। এমনকি, নিউ টাউনে ব্যক্তিগত উদ্যোগে করা বাড়ির ঢালাই-পিছুও ওই দাদাদের লক্ষ লক্ষ টাকা দেওয়ার আবদার মেটাতে হত বলে অভিযোগ। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে বুঝে কিছু ক্ষেত্রে কঠোর হয় প্রশাসন। তবে সম্প্রতি কিছু রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, দীর্ঘ রজনী কাটিয়ে ফের কি নিউ টাউনে ফিরতে চলেছে সিন্ডিকেট-রাজের সেই কুখ্যাত অধ্যায়?
নিউ টাউনের হিডকো এলাকার ১ নম্বর অ্যাকশন এরিয়ায় নগরায়ণের কাজ মোটামুটি শেষ হয়ে গেলেও ২ এবং ৩-এর বহু জমি এখনও ফাঁকা পড়ে রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে হিডকো এলাকা লাগোয়া নিউ টাউন, রাজারহাটের বেশ কিছু গ্রাম, যেখানে সরকারি ও বেসরকারি, দুই ধরনেরই নির্মাণকাজ চলছে। এর পাশাপাশি, তলায় তলায় চলছে সিন্ডিকেটের কারবারও। ওই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত এক জন এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নাম করে বললেন, ‘‘গত কয়েক মাসে অনেক কিছু ঘটে গিয়েছে। আমাদের বড় ভরসার জায়গা ওই দাদা অনেক কিছু ওলট-পালট করে দিয়েছেন। এখন ধীরে ধীরে সব ঠিক হতে পারে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু যত দিন না হচ্ছে, কিছুই বলা যাচ্ছে না। আমরাও তাই খুচরো কিছু কাজ করার পাশাপাশি জল মাপছি। জল যে দিকে যাবে, সময় মতো সে দিকেই ভেসে যেতে হবে।’’
ওই এলাকায় নির্মাণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্তদের বড় অংশই জানাচ্ছেন, দীর্ঘ দিন এলাকা সামলানো এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ‘নতুন ভাবে জীবন শুরু করতে’ যাওয়ার পরে অনেক কিছু বদলেছে। একটি দল তাঁর সঙ্গেই থেকে গিয়েছে। তবে নির্মাণ ব্যবসায় তাদের দাপট সে ভাবে টেকেনি। অন্য দলের লোকজন ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা আর এক নেতা-দাদার ‘আশীর্বাদধন্য’ হয়ে তাঁর দিকে ঝুঁকেছেন। সেই আশীর্বাদের জোরেই তাঁরা ব্যবসা সামলাচ্ছিলেন নিউ টাউনে। আপাতত নতুন জীবনে ইতি টানা ওই পুরনো দাদা নতুন কোনও দিক-নির্দেশ দিলে তাঁকে ছেড়ে যাওয়া লোকেরা তাঁর সঙ্গে ফিরতে চান কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন। এ ক্ষেত্রে ওই দাদা যদি উপরমহলের ‘আশীর্বাদ’ পেয়ে যান, তা হলে আরও বেশি সংখ্যক লোক তাঁর দিকে ঝুঁকতে পারেন বলে ধারণা।
এই দাদাই এক সময়ে প্রকাশ্যে নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবসা নিয়ে সরব হয়েছিলেন। সেই ব্যবসার আড়ালে চলা সিন্ডিকেট-রাজের প্রতি প্রকারান্তরে তাঁর সমর্থন সমালোচনার ঝড় তুলেছিল। তাই তিনি এমনিতেই এই ব্যবসার ছোট-মেজো-সেজো দাদাদের ‘কাছের মানুষ’। ফলে তিনি সক্রিয় হলে নিউ টাউনে সিন্ডিকেটের নামে জোর করে টাকা তোলার সেই পুরনো অধ্যায় ফিরতে পারে বলেই অনেকের আশঙ্কা।
এ প্রসঙ্গে রাজারহাট-নিউ টাউন বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বললেন, ‘‘কেউ কেউ এক সময়ে সিন্ডিকেট-রাজকে প্রশ্রয় দিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে, সিন্ডিকেটের নামে কোনও জোরজুলুম বরদাস্ত করা হবে না।’’ নিউ টাউনের দীর্ঘ দিনের নেতা সব্যসাচী দত্তের অবশ্য দাবি, ‘‘সিন্ডিকেট বলে কিছু হয় না, ওটা নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবসা। সেই ব্যবসা বেআইনিও নয়। আইন মেনে করা গেলে সবই ঠিক আছে। তবে আমি সদ্য দলে ফিরেছি। এ বিষয়ে দল যা সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই আমার সিদ্ধান্ত। নিউ টাউনে দল আমাকে কাজের দায়িত্ব দেবে কি না, সেটাই তো এখনও চূড়ান্ত নয়।’’
(শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy