Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Illegal Constructions

রাজমিস্ত্রিই এলবিএস! গার্ডেনরিচ নিয়ে এমন অভিযোগ

সর্ষের মধ্যে ভূত দেখছে পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ।কারণ, পুরসভারই সমীক্ষায় উঠে এসেছে, ১৫ নম্বর বরো এলাকার অন্তর্গত গার্ডেনরিচের ১৩৩ থেকে ১৪১ নম্বর ওয়ার্ডের ৯০ শতাংশেরও বেশি নির্মাণই অবৈধ!

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২৪ ০৭:৫৫
Share: Save:

গার্ডেনরিচে ৯০ শতাংশেরও বেশি নির্মাণ নিয়ম বহির্ভূত ভাবে হয়েছে। মাসখানেক আগে কলকাতা পুরসভার ১৩৭ নম্বর ওয়ার্ডে,গার্ডেনরিচ এলাকায় নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে ১৩ জনের মৃত্যুর পরে বেআইনি নির্মাণ ঠেকাতে দফায় দফায় নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে পুর প্রশাসন। কিন্তু, সর্ষের মধ্যে ভূত দেখছে পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ।কারণ, পুরসভারই সমীক্ষায় উঠে এসেছে, ১৫ নম্বর বরো এলাকার অন্তর্গত গার্ডেনরিচের ১৩৩ থেকে ১৪১ নম্বর ওয়ার্ডের ৯০ শতাংশেরও বেশি নির্মাণই অবৈধ!

এই বিপুল অবৈধ নির্মাণের কথা স্বীকার করেও রবিবার মেয়র ফিরহাদ হাকিম অভিযোগের তির ঘুরিয়ে দেন বাম বোর্ডের দিকে। তিনিবলেন, ‘‘এগুলি সব বাম আমলে তৈরি হয়েছে। আমরা তো সেগুলি ভেঙে দিয়ে বাসিন্দাদের বার করে দিতে পারি না। নতুন করে যাতে বেআইনি নির্মাণ না হয়,সে বিষয়ে আমরা কঠোর ভূমিকা নিয়েছি। শহরে নতুন নির্মাণের ছাড়পত্র মিললে দেখা হচ্ছে, আগে কোনও পুকুর ছিল না কি না।’’ সেই সঙ্গে পুরসভার অন্দরেঅভিযোগ, ওই এলাকায় রাজমিস্ত্রিরাই ‘এলবিএস’-এর দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

যদিও পুরসভার বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমূল পুরবোর্ডে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গার্ডেনরিচে বেআইনি নির্মাণের প্রবণতা বেড়েছে। পুরসভার বিজেপি পুরপ্রতিনিধি সজল ঘোষের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলরাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে বেআইনি নির্মাণের রমরমা বেড়েছে। পরিসংখ্যান সেটাই বলছে। এখন বেআইনি নির্মাণ শিল্পে পরিণত হয়েছে।’’

প্রসঙ্গত, ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত এই ১৫ নম্বর বরো তৎকালীন মেটিয়াবুরুজ পুরসভারঅধীনে ছিল। ১৯৮৪ সালে তা কলকাতা পুরসভার সঙ্গে মিশে যায়। বহুতল ভেঙে পড়ার পরে বিল্ডিং বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারদের কাজে স্বচ্ছতা ফেরাতে ‘এসওপি’ জারি করে পুরসভা। কর্তৃপক্ষেরনির্দেশ, প্রতিটি ওয়ার্ডের সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারেরা ঘুরে ঘুরে বেআইনি নির্মাণ রুখতে নজরদারি চালাবেন। কোথাও বেআইনি নির্মাণ চোখে পড়লেই দ্রুতপদক্ষেপ করতে হবে। ‘এসওপি’-তে বলা হয়েছে, ইঞ্জিনিয়ারেরা সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ করারপাশাপাশি, পুর আইনের ৪০০ ধারায় কাজ বন্ধের নোটিস দেবেন। ঘুরে ঘুরে সেই সমীক্ষা চালাতে গিয়েই উঠে এসেছে এই বিপুল সংখ্যক অবৈধ নির্মাণের তথ্য।

পুরসভার দাবি, ওই বরোয় যে সব বাড়ি বা বহুতলরয়েছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিয়ম কিছু মানা হয়নি। যে কোনও নির্মাণের ক্ষেত্রে এলবিএস (লাইসেন্স বিল্ডিং সার্ভেয়ার)-এর ছাড়পত্র লাগে। অথচ বিল্ডিংদফতরের এক অধিকারিকের অভিযোগ, ‘‘গার্ডেনরিচে রাজমিস্ত্রিরাই এলবিএস-এর ভূমিকা পালন করে থাকেন। কেউপ্রকৃত এলবিএস-এর ধারেকাছে যান না।’’

অতীতে ওই এলাকা থেকে পুকুর ভরাটের অসংখ্য অভিযোগ সামনে এসেছে বলে খবর।সেই সব অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ করছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জল সম্পদ বিভাগের সমীক্ষা। যেখানে উঠে এসেছে, গার্ডেনরিচেরএকাধিক ওয়ার্ডে ভূরি ভূরি পুকুর ভরাটের তথ্য। সাম্প্রতিক দুর্ঘটনায় সতর্ক পুরসভা বর্তমানে নতুন নির্মাণের ছাড়পত্র দেওয়ার আগে দেখে নিচ্ছে, অতীতে সেখানে পুকুর ছিল কি না।

পুর কর্তৃপক্ষ এ ভাবে নাগাড়ে কঠোর মনোভাব নেবেন তো? না কি ফের বেআইনি নির্মাণ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে? মেয়রের আশ্বাস, বেআইনি নির্মাণ ঠেকাতে অ্যাপ তৈরি হয়েছে। পুলিশ ও পুরসভা একসঙ্গে কাজ করছে। পুর ইঞ্জিনিয়ারেরা শিথিল মনোভাব দেখালে শাস্তি পাবেন। যার সাম্প্রতিক উদাহরণ, গার্ডেনরিচের দুর্ঘটনা। ওই ঘটনার পরে ১৫ নম্বর বরোর এগ্‌জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার, অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার-সহ ১৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে সাসপেন্ড করেন কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy