সাগর দত্ত হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্স নিগ্রহের প্রতিবাদে হাসপাতাল চত্বরে দেওয়াল লিখন ডাক্তারদের। শনিবার রাতে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
কারও বাড়িতে রাত-দিন পুলিশ যাচ্ছে। আবার কারও বাড়ি গিয়ে যাঁর জন্য যাওয়া, তাঁকে না পেলে পরিবারের অন্য কাউকে বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ব্যবহার্য ল্যাপটপ বা কম্পিউটার তুলে নিয়ে আসা হচ্ছে। অভিযোগ, এর পরে ‘জেরা’র নামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হচ্ছে থানায়। অবশেষে যখন ডাক পড়ছে, তখন শুধুই নিয়ে রেখে দেওয়া হচ্ছে মোবাইল ফোন। সে সব পরীক্ষা করে ডাক পড়ছে আর এক দফা। ফোনে থাকা ব্যক্তিগত কথোপকথন, ছবি, ভিডিয়ো দেখিয়ে বলা হচ্ছে, এ সব ছড়িয়ে পড়লে কী হবে? এমনকি, এ-ও বলা হচ্ছে, কর্মক্ষেত্রে জানিয়ে দেওয়া হবে ব্যক্তিগত জীবনের অনেক কিছুই।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক-পড়ুয়াকে খুন এবং ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে শামিল হওয়া অনেকেই এখন এমন পুলিশি হুমকির মুখে পড়ছেন বলে অভিযোগ। এই নিয়ে তাঁদের অনেকেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাঁদের দাবি, পুলিশের এই ‘হুমকি সংস্কৃতি’ চলছে দিনের পর দিন। কোনও ভাবেই নিস্তার পাওয়া যাচ্ছে না। পরিস্থিতির বদল না হলে বড় আন্দোলন হবে বলেও দাবি তাঁদের।
নিজের এমনই অভিজ্ঞতা জানিয়ে অরিত্র বিশ্বাস নামে এক যুবক বললেন, ‘‘বারাসতে আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলাম। পরের দিন ফোন করে আমায় থানায় ডেকে পাঠানো হয়। এর পরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রেখে মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। তাতে থাকা আন্দোলনের সময়ে তোলা ভিডিয়ো দেখিয়ে বলা হয়, আমি নাকি লোক খেপানোর চেষ্টা করছি। সব ডিলিট করিয়ে দেওয়া হয়। ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিয়োও ডিলিট করানো হয়েছে।’’ একই রকম দাবি সৌরভ দে নামে আর এক যুবকেরও। সোমনাথ ঘোষ নামে এক জনের আবার অভিযোগ, ‘‘মিথ্যা মামলাতেও ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের হুমকি সংস্কৃতি নিয়ে এত কথা হচ্ছে, কিন্তু পুলিশ যে দিনের পর দিন ডেকে হুমকি দিয়ে চলেছে, সে নিয়ে কেন কিছু হচ্ছে না?’’
আর জি কর চত্বরেরই বাসিন্দা, আইনজীবী সার্থক দে দাবি করলেন, ১৪ অগস্ট আর জি করে হামলার পর থেকে তাঁর এলাকার অনেককে পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কয়েক জনকেই শুধু গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের শুধুই হেনস্থা চলছে বলে তাঁর অভিযোগ। সার্থকের বক্তব্য, ‘‘ওই রাতে ঘটনাস্থলের আশপাশে যাঁরই টাওয়ার লোকেশন দেখেছে পুলিশ, তাঁকেই ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার ৩৫ (৩) ধারায় নোটিস পাঠিয়ে ডেকেছে। এর পরে মোবাইল ফোন রেখে দিয়ে ব্যক্তিগত নানা বিষয় ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়েছে। আমরা মামলা করেছি।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, শ্যামপুকুর থানার পুলিশ এক ‘ইউটিউবার’-এর বাড়িতে গিয়েছিল। সেখানে তাঁকে না পেয়ে তাঁর ল্যাপটপ ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ তুলে নিয়ে গিয়েছে। ওই ইউটিউবার সমাজমাধ্যমে একটি জায়গার নাম উল্লেখ করে জানিয়েছিলেন, সেখানে তিনি থাকছেন, কেউ প্রতিবাদে শামিল হতে চাইলে সেখানে আসতে পারেন! ওই ইউটিউবারের দাবি, ‘‘থানায় গেলে পুলিশ হুমকির সুরে বলেছে, দেখলেই তো ১৪ অগস্ট রাতে কী হল! আন্দোলনের ডাকে কারা এল, সব তো জানবে না! তাঁরা যদি উল্টোপাল্টা কিছু করেন, তার দায় কিন্তু তোমার উপরেই পড়বে!’’
কলকাতা হাই কোর্টের আইনজীবী অরিজিৎ বেরা এবং সৌমেন প্রধানের আবার দাবি, আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় চাকরিও হারাতে হয়েছে কয়েকটি ক্ষেত্রে। নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি সংস্থায় কাজ করেন, এমন এক জন কর্মক্ষেত্রে গেলে তাঁকে আর ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। সেখানে ‘জব অ্যাসাইনার’ পদে যিনি ছিলেন, তিনি নাকি স্পষ্ট বলেছেন, পুলিশ ঘুরে গিয়েছে। উপরমহল থেকে নির্দেশ এসেছে কাজে না রাখার! একই ভাবে, চুক্তিভিত্তিক বহু জায়গাতেও চাকরি হারিয়ে আন্দোলনে যোগ দেওয়ার খেসারত দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ।
যদিও এই সব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতার নতুন নগরপাল মনোজ বর্মা বলেন, ‘‘নতুন আইনে ধর্তব্যে আনার মতো (কগ্নিজ়েবল) অপরাধের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ধারায় নোটিস দিয়ে ডেকে এনে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সেটাই করা হচ্ছে। কিন্তু সেখানে হুমকি দেওয়া বা হেনস্থা করার কোনও অভিযোগ আমরা পাইনি। যদি পরে কারও অসাধু উদ্দেশ্য সামনে আসে, তা হলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’ আইনজীবী অরিজিৎ বললেন, ‘‘নির্দিষ্ট ভাবে মামলা করা হয়েছে। বিষয়গুলি আপাতত আদালতের বিচারাধীন। আদালত নিশ্চয় পুলিশের থেকে জবাব চাইবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy