Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Belgachia Veterinary Hospital

ছিটেফোঁটা উন্নতি নেই পরিষেবায়, পশু হাসপাতাল যেন ‘নেই’-রাজ্য

বেলগাছিয়া পশু হাসপাতালে পরিষেবার হাল বদলায়নি এতটুকুও! সেখানে না আছে পশুদের ভর্তি রাখার ব্যবস্থা, না আছে তাদের জন্য আইসিইউ-সহ ন্যূনতম সুযোগসুবিধা।

An image of Veterinary Hospital

অসহায়: পরিষেবা না পেয়ে বেলগাছিয়া পশু হাসপাতাল চত্বরে অপেক্ষায় অসুস্থ পোষ্য ও তার অভিভাবকেরা। —নিজস্ব চিত্র।

চন্দন বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:২৪
Share: Save:

ঝাঁ চকচকে নতুন ভবনের উদ্বোধনই সার, বেলগাছিয়া পশু হাসপাতালে পরিষেবার হাল বদলায়নি এতটুকুও! সেখানে না আছে পশুদের ভর্তি রাখার ব্যবস্থা, না আছে তাদের জন্য আইসিইউ-সহ ন্যূনতম সুযোগসুবিধা। সামান্য ডিজিটাল এক্স-রে করানোর জন্যও পাঠিয়ে দেওয়া হয় চিকিৎসকদের বলে দেওয়া নির্দিষ্ট ঠিকানায়। দিনের বেলায় কয়েক ঘণ্টার জন্য বহির্বিভাগ চালু থাকলেও ওষুধ থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় কোনও কিছুই সেখানে মেলে না বলে অভিযোগ।

দিনকয়েক আগে ওই হাসপাতালে পোষা কুকুরের একটি জটিল অস্ত্রোপচার করিয়েছিলেন বরাহনগরের এক যুবক। অস্ত্রোপচার শেষে পোষ্যটিকে কার্যত সংজ্ঞাহীন অবস্থায় বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ওই যুবকের কথায়, ‘‘ওকে কয়েক ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রেখে তার পরে ছাড়ার কথা বলেছিলাম। কিন্তু আমাকে বলে দেওয়া হল, রাতে পশুদের রেখে চিকিৎসা করার ব্যবস্থা নেই। অনেক অনুরোধ করলেও কেউ শোনেননি। তাই বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়েই ওকে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলাম।’’

যদিও এই পরিস্থিতির বদল ঘটাতেই ২০০৯ সালে এই হাসপাতালকে একটি পূর্ণাঙ্গ পশু হাসপাতাল হিসাবে চালু করার ছাড়পত্র মিলেছিল। কথা ছিল, চারতলা হাসপাতাল হবে। যেখানে থাকবে পশুদের জন্য ডিজিটাল এক্স-রে, অত্যাধুনিক ইউএসজি থেকে শুরু করে আইসিইউ। অর্থাৎ, সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের বন্দোবস্ত। ২৪ ঘণ্টা থাকবেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। কিন্তু ব্রিটিশ আমল থেকে চলা বেলগাছিয়া প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সে সবের কিছুই নেই। সপ্তাহে পাঁচ দিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বহির্বিভাগ চালু থাকলেও মাসকয়েক ধরে চলা অধ্যাপকদের আন্দোলনে তা-ও কার্যত শিকেয় উঠেছে।

জানা গিয়েছে, গত বছরের মে মাসে ওই হাসপাতালে দোতলা ভবনের উদ্বোধন হয়েছিল। নতুন বেশ কিছু সুবিধাও মিলেছিল কয়েক দিন। তার পরেই অবশ্য সে সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বছর আড়াই ধরে বন্ধ ডিজিটাল এক্স-রে পরিষেবা। নতুন ভবনে পুরনো যন্ত্র আনা হলেও সেখানে কোনও কাজই হয় না বলে অভিযোগ। ফলে তালাবন্ধ অবস্থাতেই পড়ে থাকে ঘর। নেই ইকোকার্ডিয়োগ্রাফির ব্যবস্থাও। কোনও মতে চলছে ইউএসজি পরিষেবা। হাসপাতালের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘ডিজিটাল এক্স-রের সাহায্যে হাড়ের পাশাপাশি পশুদের স্নায়ুতন্ত্র এবং শরীরের ভিতরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিষয়ে অনেক কিছু জানা সহজ হয়। যা ম্যানুয়াল এক্স-রে থেকে সম্ভব নয়। স্বাভাবিক ভাবেই কিছু কিছু ক্ষেত্রে অসুবিধা হলেও কিছু করার নেই।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘পশু চিকিৎসা সারা দেশে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। আমরাই অনেকটা পিছিয়ে আছি।’’

হাসপাতালে খোঁজ করে জানা গেল, বছর তিনেক আগে সেখানে পোষ্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থাও হয়েছিল। প্রশিক্ষকও ছিলেন। বর্তমানে তা-ও বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন ওই হাসপাতালের উপরে নির্ভরশীল পোষ্যদের অভিভাবকেরা। বেলগাছিয়ার বাসিন্দা শ্রাবণী ঘোষ বললেন, ‘‘দশ বছর ধরে এই হাসপাতালে আসছি। কোনও কিছুরই উন্নতি হতে দেখলাম না। প্রতিদিন নেই-এর তালিকাটা যেন দীর্ঘ হচ্ছে।’’

যদিও পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শ্যামসুন্দর দানা বললেন, ‘‘হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবার উন্নতির জন্য আমরা চেষ্টা করছি। বেশ কিছু পরিকল্পনাও আছে। সরকারের কাছে দরবারও করেছি। আশা করছি, দ্রুত আমরা উন্নত পরিষেবা দিতে পারব।’’ রাজ্যের প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ যদিও বললেন, ‘‘বেলগাছিয়া হাসপাতালে আমরা ভাল পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। যদি কোনও ঘাটতি থাকে, পূরণ করব।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy