শনিবার স্বাস্থ্য ভবনের সামনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
শনিবার দুপুরে সল্টলেকে স্বাস্থ্য ভবনে আচমকা গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে ধর্নায় বসেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন মমতা। ছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারও।
ডাক্তারদের ধর্নামঞ্চের সামনে গিয়ে সাংবাদিক বৈঠকের মাধ্যমে তাঁদের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আমার নিরাপত্তাজনিত নানা নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তা সত্ত্বেও আমি নিজে ছুটে এসেছি। আপনাদের আন্দোলনকে কুর্নিশ জানাচ্ছি। আমি আপনাদের ব্যথা বুঝি। আমিও ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে এসেছি।’’
শুক্রবার রাত থেকে কলকাতায় বৃষ্টি চলছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, নিম্নচাপের কারণে শনিবার দিনভর ঝড়বৃষ্টি হবে। আবহাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘শুক্রবার সারা রাত ঝড়জল হয়েছে। আপনারা যে ভাবে বসে আছেন, আমার কষ্ট হচ্ছে। গত ৩৪ দিন ধরে আমিও রাতের পর রাত ঘুমোইনি। কারণ, আপনারা রাস্তায় থাকলে আমাকেও পাহারাদার হিসাবে জেগে থাকতে হয়।’’
আন্দোলনকারীদের দাবিগুলি সরকার বিবেচনা করবে। আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘যদি আপনারা কাজে ফিরতে চান, আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আপনাদের দাবিগুলি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করব। আমি একা সরকার চালাই না। মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, ডিজি সকলের সঙ্গে আমি আপনাদের দাবি নিয়ে আলোচনা করব। যদি কেউ দোষী হন, শাস্তি পাবেন। সিবিআইকে অনুরোধ করব, দ্রুত তদন্ত শেষ করুন। দোষীদের ফাঁসি হোক। কেউ দোষী থাকলে আমি নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেব। এটুকু বলতেই আমি এসেছি।’’
সব মেডিক্যাল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতি ভেঙে নতুন করে তৈরি করা হবে, জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ডাক্তারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আপনারা আমাদের ঘরের ভাইবোন। আমি কোনও অবিচার হতে দেব না। সব হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি নতুন করে তৈরি করা হবে। তাতে জুনিয়র ডাক্তার, সিনিয়র ডাক্তার, নার্স, পুলিশ সকলের প্রতিনিধি থাকবে। আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আরজি করের রোগী কল্যাণ সমিতি আমি ভেঙে দিলাম। নতুন করে তা তৈরি করা হবে।’’ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যদি সত্যি কেউ দোষী হয়, তারা শাস্তি পাবে। কেউ আমার বন্ধু বা শত্রু নয়। যাঁদের আমার বন্ধু বলছেন, আমি তাঁদের চিনিই না। প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁরা এসেছেন। আমি সাধ্যমতো পদক্ষেপের চেষ্টা করব। আপনারা কাজে ফিরুন। আমি আপনাদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করব না।’’
মমতা আশ্বাস দেন, রাজ্য সরকার ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করবে না। তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টে এই মামলা চলছে। কোনও পদক্ষেপ আপনাদের বিরুদ্ধে করা হবে না। এখন আমি মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে এখানে আসিনি। আন্দোলনের সমব্যথী হিসাবে এসেছি। আপনাদের বড় দিদি হয়ে এসেছি। আমাকে সময় দিন। ভাল থাকুন।’’
ধর্নামঞ্চে আন্দোলনকারীদের যা খাবার দেওয়া হচ্ছে, নির্বিচারে তা না খাওয়ার অনুরোধ করেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আপনাদের কাছে আসা মানে নিজেকে ছোট করা নয়। বড় করা। এটা আমার শেষ চেষ্টা। যে যা দিচ্ছে, খেয়ে নেবেন না।’’
শনিবার মমতা পৌঁছনোর পরেও ধর্নাস্থল থেকে বিচারের দাবিতে স্লোগান ওঠে। বেশ কয়েক মিনিট মাইক হাতেই দাঁড়িয়ে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী। ধর্নাস্থলে খানিক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। তার পর ডাক্তারদের উদ্দেশে বার্তা দেন মমতা।
উল্লেখ্য, জুনিয়র ডাক্তারেরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার তাঁদের প্রতিনিধিদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল নবান্নে। ৩২ জন সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু বৈঠক ভেস্তে যায়। ডাক্তারেরা বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচার দাবি করেছিলেন। কিন্তু সরকার তাতে রাজি হয়নি। সে দিন নবান্নের সভাঘরে দু’ঘণ্টার বেশি সময় বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে তিনি বেরিয়ে যান। সাংবাদিক বৈঠক করে মমতা জানান, সুপ্রিম কোর্টে এই সংক্রান্ত মামলা বিচারাধীন থাকায় সরাসরি সম্প্রচার সম্ভব নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy