E-Paper

সচেতন থাকলে অনটনেও সুস্থ হতে পারে শিশু ক্যানসার রোগী

ক্যানসারকে হারিয়ে মূল স্রোতে ফেরার লড়াইয়ে অন্যদের থেকে এগিয়ে বজবজের বিড়লা মোড়ের বছর ২৬-এর অর্পণ সর্দার। বাবা পেশায় মালি‌। অর্পণের যখন চোদ্দো বছর, তখন রক্তের ক্যানসার ধরা পড়ে।

—প্রতীকী চিত্র।

জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:১৫
Share
Save

ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়ার উপসর্গ ছিল পায়ে ব্যথা। ওষুধেও কমছিল না। জ্বর ও পায়ের সমস্যা বাড়তে থাকায় হুগলির হরিপালের বাসিন্দা, পেশায় চাষি বাসুদেব সরকার মেয়ে কবিতাকে নিয়ে যান নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (এন আর এস)। চিকিৎসায় জানা যায়, ঝাঁঝরা হয়ে যাচ্ছে কবিতার গুরুত্বপূর্ণ হাড়। একাধিক বার বায়োপ্সি করে ২০১৭ সালেই চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, অ্যানাপ্লাস্টিক লার্জ সেল লিম্ফোমায় (এএলসিএল) আক্রান্ত ওই কিশোরী। ২০১৯ সালে এন আর এসে তার শরীরের অস্থিমজ্জা পরিশোধন করে প্রতিস্থাপন হয়। সফল না হওয়ায় ফের দাদার অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন হয় কবিতার শরীরে। বর্তমানে সুস্থ হচ্ছে কবিতা। কোনও কিছুর সাহায্য নিয়ে চলাফেরাও করতে পারে।

মুর্শিদাবাদের রানিনগর থানা এলাকার সাড়ে আট বছরের নুসরত জাহান শৈশবেই চিনে নিয়েছে হাসপাতালের শয্যা, স্যালাইন আর ওষুধের গন্ধ। কারণ, জ্বর আর মুখে ঘা নিয়ে মেয়ে কেন একটানা ভুগছে, তা জানতে নুসরতকে নিয়ে মা-বাবা যেতেন ডোমকল হাসপাতালে। সেখানে রক্তের ক্যানসার ধরা পড়লে তাকে পাঠানো হয় এসএসকেএমে। দিনমজুর মিজারুল হকের বড় মেয়ে নুসরতের চিকিৎসা শুরু হয় ওষুধ ও কেমোথেরাপি দিয়ে। একটানা পুরো চিকিৎসার শেষে ঘরে ফিরেছে সে। স্কুলেও যাচ্ছে।

প্রান্তিক পরিবারটি ছেলে আকাশ শর্মাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য এসেছিল বিহারের মধুবনী থেকে। তারা এখন কল্যাণীর বাসিন্দা। আকাশের বয়স যখন সাড়ে সাত, তখন টনসিল ফুলে সর্বক্ষণ জ্বর হত। মা রিনা জানান, এ শহরে এসে এন আর এস হয়ে এসএসকেএমে হয় আকাশের চিকিৎসা। হজকিন্স লিম্ফোমায় আক্রান্ত আকাশের দু’বার অস্ত্রোপচার হয় সেখানে। পেশায় গ্যারাজকর্মীর বালক পুত্রের কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন হয় চলতি বছরে। নিজেরই শরীরের অস্থিমজ্জা টেনে বিশেষ প্রক্রিয়ায় জীবাণুমুক্ত করে ফের পাঠানো হয় তার শরীরে। সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছে আকাশও।

ক্যানসারকে হারিয়ে মূল স্রোতে ফেরার লড়াইয়ে অন্যদের থেকে এগিয়ে বজবজের বিড়লা মোড়ের বছর ২৬-এর অর্পণ সর্দার। বাবা পেশায় মালি‌। অর্পণের যখন চোদ্দো বছর, তখন রক্তের ক্যানসার ধরা পড়ে। দীর্ঘদিন ঠাকুরপুকুর ক্যানসার হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা চলে। মিউজ়িক শিক্ষিকা পাপড়ি সাহা ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের সাহায্যে রং-তুলি তুলে নেন অর্পণ। আঁকা ছিল তাঁর শখ। তাতেই ডুবে থাকতেন। চলতে থাকে ওষুধ এবং কেমোথেরাপি। সুস্থ হয়ে প্রতিমা গড়ার কাজকে পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন অর্পণ। ভবানীপুর ৬৬ পল্লির পুজোর এ বারেও ছোট প্রতিমাটি তাঁর তৈরি। ঠাকুরপুকুরের একটি পুজোর দশ ফুটের প্রতিমা-সহ কয়েকটি ছোট মূর্তি গড়ার বরাত পেয়েছেন। মাটি মাখা হাতে তুমুল ব্যস্ততার ফাঁকে অর্পণ বললেন, “ক্যানসার সব দিকেই বদলে দিয়েছে জীবন। ইতিবাচক ভাবলে, শখকে পেশা করার সুযোগ দিয়েছে,
পরিচিতি দিয়েছে, প্রতিমা তৈরির শক্তি দিয়েছে, বড় বড় মানুষের সান্নিধ্য দিয়েছে।’’ বাবা-মা, দাদু-ঠাকুরমা অর্পণের খুব প্রিয় হলেও সব থেকে প্রিয় তাঁর বোন। অর্পণের কথায়, ‘‘বোন আমার জীবনে মুশকিল আসান। ও-ই আমার দুর্গা।”

তথ্য বলছে, কবিতা, নুসরত, আকাশ ও অর্পণদের মতো প্রান্তিক পরিবারের ছোটদের মধ্যে ক্যানসার চিকিৎসার পুরো ধাপ পেরোনো হয় খুব কম জনের। ফলে, অসময়ে থমকে যায় বহু জীবন। যেখানে যথাযথ সময়ে চিকিৎসা পেলে এবং তা পুরো করলে বেঁচে যেত জীবন। বিশ্বে প্রতি বছর চার লক্ষ শিশু ও কিশোর-কিশোরী ক্যানসারে আক্রান্ত হয়‌। কিন্তু রোগ নির্ণয় হয় অর্ধেকের। মোট আক্রান্তের ৯০ শতাংশ শিশুই নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশের বাসিন্দা। তবে আকাশদের পরিবারের মতো সচেতন থাকলে নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুও সুস্থ হতে পারে। তাই শিশুদের ক্যানসার সচেতনতায় বেছে নেওয়া হয়েছে সেপ্টেম্বর মাসকে।

সেই সচেতনতার প্রসার ও পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছে এক আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও শিশু ক্যানসার রোগীদের নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা অন্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘লাইফ বিয়ন্ড ক্যানসার’। সংস্থার তরফে পার্থ সরকার জানান, গত কয়েক বছর ধরে এসএসকেএম এবং এন আর এসে আসা ক্যানসার রোগীদের সহায়তা দেন তাঁরা। গত দশ বছর ধরে ওষুধ, চিকিৎসার খরচ নিয়ে দিশাহারা পরিবারগুলিকে পরামর্শ দিয়ে আগলে রাখছে সংস্থাটি। অনেকটা সেই কারণেই চিকিৎসা মাঝপথে না থামিয়ে সম্পূর্ণ করার প্রবণতা বাড়াচ্ছে নিম্নবিত্ত পরিবারগুলিও।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Cancer treatment Children Awareness Program awareness

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।