Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Hemanta Mukherjee

স্বরের স্মৃতিতেই আষাঢ়ে হেমন্ত দিন

কোভিড-প্রকোপে সেই হেমন্তের শতবর্ষ পূর্তি নিচু তারেই বাঁধা থাকল।

প্রণাম: হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন। মঙ্গলবার, সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের কাছে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

প্রণাম: হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন। মঙ্গলবার, সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের কাছে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২০ ০৫:০৮
Share: Save:

দিনটা ছিল শনিবার। ইস্কুলের হাফ ডে। বিকেলে তড়িঘড়ি টালিগঞ্জের এনটি-ওয়ান স্টুডিয়োয় একটি বিশেষ গানের রেকর্ডিং শুনতে যাচ্ছে জনৈক কিশোর। মান্না দে গাইবেন। ‘স্ত্রী’ ছবিতে নচিকেতা ঘোষের সুরে ‘যেমন সাপিনীকে পোষ মানায় ওঝা!’

ছেলেটিকে স্টুডিয়োর কাছাকাছি দেখে সস্নেহে গাড়িতে তুলে নেন মান্না। ‘চলো খোকা, আমার সঙ্গেই চলো।’ এনটি-ওয়ানের প্রকাণ্ড রেকর্ডিং ফ্লোরে এক দীর্ঘদেহী ধুতি-শার্টধারী অবয়বের উপস্থিতি। মান্নাবাবু গাওয়ার আগে রেকর্ডিস্ট শ্যামবাবু সদ্য রেকর্ড করা একটি গান চালিয়ে দিলেন। ‘খিড়কি থেকে সিংহদুয়ার, এই তোমাদের পৃথিবী...’! গান শেষে কারও মুখে কথা নেই। নীরবতা ভাঙলেন গুণমুগ্ধ মান্না স্বয়ং। ‘‘সব সুর তো এই গানেই ভরে উঠেছে! এর পরে আর...!’’

এই মুগ্ধতার সাক্ষী সে দিনের কিশোর, নচিকেতা ঘোষের পুত্র, সুরকার সুপর্ণকান্তি ঘোষ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুরনো কথা বলছিলেন। ‘‘মানাকাকুও (মান্না দে) সে দিন অসামান্য গেয়েছিলেন, পাক্কা পেশাদারের মতোই। কিন্তু হেমন্তকাকু প্রসঙ্গে তাঁর মুগ্ধতা উজাড় করে দিয়েছিলেন।’’ আমবাঙালির শ্রবণপুর ভরে থাকা একটি অমোঘ সত্যই সে দিন উঠে এসেছিল যেন। তাঁর জন্মশতবর্ষেও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠ বাঙালির কাছে ঘরে ফেরার ডাক।

লতা মঙ্গেশকর একদা তাঁর কৈশোরের ‘হিরো’ হেমন্তদাদার বিষয়ে বলেছিলেন, ‘‘এ যেন গুহার ভিতরে মন্দিরে দেবতার কণ্ঠস্বর। শ্রবণকে যা শুদ্ধ করে।’’ উস্তাদ আমির খান তাঁর গান শুনতে এসেছেন দেখে স্বভাব-বিনয়ী হেমন্ত কুণ্ঠিত হয়েছিলেন। কিন্তু উস্তাদজি বলেন, ‘‘মাইক্রোফোন থেকে আপনার স্বর ঈশ্বরের কণ্ঠ মনে হয়।’’ সত্যজিৎ রায়ের কাছে ‘এ গলা তো মাখন’। হেমন্তকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ে বিমান থেকে নামার সময়ে সুট-টাই পাল্টে তাঁর স্বাক্ষর ধুতি-বাংলা শার্ট পরে নামতে হয়েছিল। হেমন্তকে এক বার ছুঁয়ে শ্রোতারা বলছিলেন, ‘‘আমরা ইন্ডিয়াকে স্পর্শ করছি।’’

কোভিড-প্রকোপে সেই হেমন্তের শতবর্ষ পূর্তি নিচু তারেই বাঁধা থাকল। সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ে হেমন্তের শেষ জীবনের বাড়ির কাছে তাঁর মূর্তিতে শিবাজী চট্টোপাধ্যায়, অরুন্ধতী হোমচৌধুরী, ইন্দ্রনীল সেন ও শ্যামল মিত্রের পুত্র সৈকত মিত্র প্রমুখ শিল্পীরা ফুল দিলেন। সবারই মন খারাপ! এ দিন তো অন্য ভাবে মনে রাখার ছিল। সন্ধ্যায় কবীর সুমন তাঁর ফেসবুক লাইভে হেমন্ত উদ্‌যাপনে শামিল হন। রেডিয়ো কোয়রান্টিন বলে লকডাউন-পর্বের বেতার চ্যানেলে হেমন্তকে ঘিরে গল্প, ইতিহাসের ছোঁয়া। ‘‘যেমন তাঁর সাদামাটা জীবন, তেমনই সুর, গায়কি, কণ্ঠ-মাধুর্য।’’— বলছিলেন স্নেহধন্য হৈমন্তী শুক্লও।

শিলিগুড়িতে অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে হাওড়া স্টেশনে এই হেমন্তদাকেই শিশুর মতো চারটি আইসক্রিম খেতে দেখেছেন হৈমন্তী। মজা করে বলেছেন, ‘‘এটা আয়কর বিভাগের ফাংশন! নাহ, ধোলাই করা ধুতি-শার্টটা পরব না, সকালেরটাই পরি।’’

‘‘শিল্পীরা অনেকেই গলা নিয়ে সদা ব্যতিব্যস্ত। হেমন্তদাকে কদাচিৎ হারমোনিয়ামটা টেনে সা থেকে সা-এ গলাটা যাচ্ছে কি না, বুঝে নিতে দেখেছি। একেবারেই স্বভাব-শিল্পী।’’— বলছিলেন হৈমন্তী।

‘বন্ধু’ ছবিতে ‘মালতী ভ্রমরে’ গাইবার সময়ে হেমন্ত সুরকার নচিকেতাবাবুকে বলেন, ‘‘এ তো মানবের (মানবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়) গান।’’ ‘‘বাবার পছন্দের কণ্ঠে এক থেকে দশ শুধু হেমন্তকাকু,’’ বললেন সুপর্ণকান্তিও। আষাঢ়স্য প্রথম দিবসের হেমন্ত-দিন বোঝাল, এখনও অটুট সে কণ্ঠের জাদু।

অন্য বিষয়গুলি:

Hemanta Mukherjee Centenary Singer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy