E-Paper

শীতের শুরুতে বাড়ছে কাশি, নেপথ্যে ভাইরাস এবং দূষণ

আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে খুব সহজেই জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন বয়সিরা। জ্বর-সর্দি কমলেও অন্তত ২১ দিন ধরে ভোগাচ্ছে কাশি।

An image of Cold

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৩ ০৪:৫৬
Share
Save

সহজে কমছে না কাশির দাপট। নানা রকম ওষুধ খেয়েও কিছুতেই যেন রেহাই মিলছে না। গভীর রাত বা ভোরে ঠান্ডা আর দিনে গরমের জোড়া ফলায় শুকনো কাশি বেশি মাত্রায় মাথাচাড়া দিচ্ছে। এতে প্রাণান্তকর অবস্থা তৈরি হচ্ছে শিশু থেকে বয়স্ক, সকলেরই। চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণ, এ বার শীতের শুরুতে এই সমস্যা অনেকটাই বেশি।

আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে খুব সহজেই জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন বয়সিরা। জ্বর-সর্দি কমলেও অন্তত ২১ দিন ধরে ভোগাচ্ছে কাশি। শহরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে আসা রোগীদের একটি বড় অংশই ভুগছেন কাশিতে। প্রতি বছরই নভেম্বরের গোড়ার দিকে এবং ফেব্রুয়ারি-মার্চে আবহাওয়ার পরিবর্তনের সময়ে ভাইরাসের দাপাদাপি শুরু হয়। সেটির সঙ্গে দূষণ যুক্ত হয়ে সমস্যা মারাত্মক আকার নিচ্ছে বলেই মত চিকিৎসকদের। কালীপুজো এবং তার পরের ১৫ দিন সেই সমস্যা আরও বাড়বে বলেই অনুমান চিকিৎসকদের। কারণ, সেই সময়ে বাজির কারণে ধোঁয়ার দূষণ অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে।

মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বলেন, ‘‘তাপমাত্রার তিন থেকে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তারতম্য হওয়ায় শরীর খারাপের প্রবণতা বাড়ছে। বেশির ভাগেরই আপার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্টে সংক্রমণ হচ্ছে। জ্বর কমলেও শুকনো কাশি কিছুতেই কমছে না। উপসর্গ বুঝে ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে। কিন্তু কাশি কমাতে তাতে যে খুব কাজ দিচ্ছে, তেমনটা নয়। বরং ১৫-২০ দিন পরে নিজে থেকেই কাশির দমক বন্ধ হচ্ছে।’’ চিকিৎসকেরা এ-ও স্পষ্ট জানাচ্ছেন, যত ক্ষণ পর্যন্ত না আবহাওয়া একটা স্থিতাবস্থায় আসবে, তত ক্ষণ এই সমস্যা থেকে নিস্তার নেই। তবে ঠান্ডা-গরমের এই রকমফের এখনই কমবে না বলে মনে করছেন আবহবিদেরা। কারণ, পাকাপাকি ভাবে শীত পড়তে এখনও দেরি আছে। আর এই ঋতু পরিবর্তনের সময়ে তাপমাত্রার উত্থান-পতন লেগেই থাকে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলছেন, ‘‘চলতি সপ্তাহে রাতের তাপমাত্রা কিছুটা নামবে। সেই পরিস্থিতি কিছু দিন চলবে। তার পরে ফের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে।’’

প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজিস্ট এবং ভাইরাস বিষয়ক গবেষক সিদ্ধার্থ জোয়ারদারের মতে, ঠান্ডা-গরমের চক্রাকার আবহাওয়ায় এক দিকে জীবাণুর বৃদ্ধি ঘটে, অন্য দিকে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সরাসরি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে হতোদ্যম হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে দেহে অবস্থিত সুযোগসন্ধানী জীবাণুরা (ব্যাক্টিরিয়া) ভোল পাল্টে মারমুখী হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, ‘‘রেসপিরেটরি ভাইরাস যখন হামলা চালাতে উদ্যত হচ্ছে, সেই সুযোগে শরীরে থাকা আপাত নিরীহ ব্যাক্টিরিয়াও আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে।’’ অনেকের ক্ষেত্রেই জ্বরের মাত্রা খুব বেশি থাকছে না। এক-দু’দিনের মধ্যে তা সেরে গেলেও কাশি কমতে লম্বা সময় নিচ্ছে। মূলত অ্যাডিনো, রাইনো ভাইরাসের কারণে এমন অবস্থা হচ্ছে। আবার, কম মাত্রায় ইনফ্লুয়েঞ্জাও রয়েছে বলে মত জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের। তিনি বলেন, ‘‘ওই সমস্ত ভাইরাস নাক-মুখ দিয়ে গিয়ে শ্বাসনালির গভীরে বা ফুসফুসে হানা দিচ্ছে। এই সংক্রমণের ফলে শ্বাসতন্ত্রের উপরের অংশে বা গলায় প্রদাহ হচ্ছে। ক্রমাগত সেখান থেকে মিউকাস নিঃসরণ হচ্ছে। ফলে কাশির প্রকোপ তৈরি করছে।’’

আবহাওয়ার পরিবর্তন, দূষণ ও ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত— এই ত্র্যহস্পর্শে বড়দের মতো শিশুরাও কাশিতে ভুগছে বলে জানাচ্ছেন শিশুরোগ চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি। তিনি আরও জানান, বাতাসে দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় যে সমস্ত শিশু আগে থেকেই হাঁপানি বা অ্যাজ়মায় ভুগছে, তাদের সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে। তবে, আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের সময়ে রাতে তীব্র জোরে পাখা বা এসি চালানো থেকে বিরত থাকার কথা বলছেন বক্ষরোগ চিকিৎসক ধীমান গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘এই সময়টা সর্দি-কাশি একটু বেশি মাত্রাতেই হয়। তবে এ বার স্থায়িত্ব বেশি হচ্ছে। তাই সাবধানে থাকতে হবে।’’

পাশাপাশি, চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এমন ক্ষেত্রে উষ্ণ গরম জলের বাষ্প নিলে উপকার পাওয়া যাবে। গার্গলও করা যেতে পারে। দরকার পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ইনহেলার নিতে হতে পারে। তা এড়িয়ে চললে হবে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Winter Pollution Health Problems Virus

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।