—প্রতীকী চিত্র।
মা উড়ালপুলের পথ-বিভাজিকার উপরে শোয়ানো তরুণীর নাড়ির গতি স্তব্ধ। শ্বাসও পড়ছে না। এমন দেখে আর দেরি করেননি দুর্ঘটনার জেরে যানজটে আটকে যাওয়া দুই ব্যক্তি। গাড়ি থেকে নেমে তাঁরাই সিপিআর দিতে শুরু করেন ওই তরুণীকে। প্রায় ১৫ মিনিট পরে নড়ে উঠেছিল তরুণীর আঙুল, ফের চলতে শুরু করে শ্বাসপ্রশ্বাস। মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধলেও তৎক্ষণাৎ নিথর দেহে প্রাণ ফিরে এসেছিল ওই তরুণীর।
সোমবার ‘বিশ্ব হার্ট রিস্টার্ট ডে’-তে সেই ঘটনার স্মৃতিচারণায় বার বার ফিরে যাচ্ছিলেন মধ্য কলকাতার বাসিন্দা, বছর পঁয়ত্রিশের পর্শিয়া গোস্বামী। তাঁর কথায়, ‘‘সে দিন ওই দু’জন ডাক্তারবাবু মিলে যদি আমার স্তব্ধ হয়ে যাওয়া হার্ট পুনরায় চালু না করতেন, তা হলে হয়তো আর প্রাণ ফিরে আসত না। পড়ুয়া থেকে শুরু করে ট্র্যাফিক পুলিশ, সকলের সিপিআরের প্রশিক্ষণ থাকা প্রয়োজন।’’ এই প্রশিক্ষণ অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন হৃদ্রোগ চিকিৎসকেরাও। তাঁরা জানাচ্ছেন, বিদেশে গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পেতে গেলে সিপিআর জানা বাধ্যতামূলক। এ দেশেও এমন নিয়ম কার্যকর হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন হৃদ্রোগ চিকিৎসক তথা কার্ডিয়োলজি সোসাইটি অব ইন্ডিয়ার সহ-সভাপতি ধীমান কাহালি। তিনি বলেন, ‘‘সিপিআর দিয়ে অনেক সময়েই সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে ফিরিয়ে আনা যায়। শুধু রাস্তায় নয়, যে কোনও জায়গাতেই এটা কাজে লাগতে পারে। তাই সকলের এই পদ্ধতি জানা দরকার। আমাদের সংস্থার তরফেও বিভিন্ন স্কুলে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।’’
চলতি বছরের ৬ মার্চ যে দুই চিকিৎসক পর্শিয়াকে বাঁচাতে গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে এসেছিলেন, তাঁরা হলেন অ্যাপোলো হাসপাতালের ফিটাল মেডিসিনের চিকিৎসক কাঞ্চন মুখোপাধ্যায় এবং আমরি হাসপাতালের কার্ডিয়াক অ্যানাস্থেশিয়ার চিকিৎসক অশোক বর্মা। এ দিন কাঞ্চন বলেন, ‘‘সে দিন রাস্তার উপরে যেটা করেছি, তা যে কোনও সাধারণ মানুষও করতে পারেন। দরকার শুধু প্রশিক্ষণ এবং ঠিক সময়ে তা কাজে লাগানো।’’
তিনি জানান, ওই দিন পর্শিয়াকে পরীক্ষা করেই বোঝা গিয়েছিল, স্কুটার থেকে ছিটকে পড়ে গিয়ে কোনও আঘাতজনিত কারণে তাঁর হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অবিলম্বে তা চালু করতে না পারলে বড় বিপদ ঘটে যাবে বুঝেই তিনি পর্শিয়াকে সিপিআর দিতে শুরু করেন। সেই সময়ে ভিড় ঠেলে এগিয়ে এসে সহযোগিতা করেছিলেন অশোকও। পর্শিয়ার হাতের আঙুল নড়তেই দুই চিকিৎসকের মনে আশার আলো জ্বলে ওঠে। পরবর্তী সময়ে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরে দেখা যায়, পর্শিয়ার মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধেছে। কয়েক মাসের ব্যবধানে দু’বার অস্ত্রোপচারের পরে এখন পুরো সুস্থ ওই তরুণী। তাঁর কথায়, ‘‘সিপিআরেই পুনর্জন্ম হয়েছিল আমার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy