অশোক সর্দার
দু’পক্ষের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় চলছিল। আশপাশে অনেকেই কাজ করছিলেন। বচসা শুনে তাঁরা বিশেষ গা করেননি। কিন্তু কিছু ক্ষণের মধ্যেই গুলি চলল পর পর। তার পরেই দেখা গেল, রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন এক ব্যক্তি। আর মোটরবাইকে চেপে পালিয়ে যাচ্ছে কয়েক জন।
গুলিবিদ্ধ ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। মঙ্গলবার সকালে মধ্যমগ্রামের রোহন্ডা চণ্ডীগড়ের এই ঘটনা এলাকায় আতঙ্ক তৈরি করেছে। মধ্যমগ্রাম থানার পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তির নাম অশোক সর্দার (৫৫)। তাঁর বাড়ি রাজারহাটের নারায়ণপুর থানা এলাকায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অশোকবাবু জমি কেনা-বেচার কাজ করতেন। একটি সংস্থায় চাকরিও করতেন তিনি। ওই সংস্থাও জমি কিনে ‘ডেভেলপ’ করে তা বিক্রি করে। জমি সংক্রান্ত গোলমালের জেরেই এই খুন বলে প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের ধারণা। তবে অশোকবাবুর পরিবারের লোকজনের দাবি, তিনি বিজেপির কর্মী ছিলেন। তৃণমূলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই তাঁকে খুন করেছে। অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল জানিয়েছে, এ সব বিজেপি-র মনগড়া ধারণা। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশও জানিয়েছেন, অশোকবাবু বিজেপি-র কোনও বড় নেতা বা সংগঠক ছিলেন না। ফলে এই খুনের মধ্যে রাজনীতি না থাকাটাই স্বাভাবিক। এ দিন রাতে মধ্যমগ্রাম চৌমাথায় অশোকবাবুর দেহ নিয়ে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি।
অশোকবাবুর ছেলে লাল্টু সর্দার জানান, তাঁর বাবা যে সংস্থায় কাজ করতেন, রোহন্ডার রাজবাড়ি এলাকার একটি জমিতে তাদের কাজ চলছে। সেই কাজের দেখভাল অশোকবাবুই করতেন। এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ ফোন করে কেউ তাঁর বাবাকে ডাকেন। ফোন পাওয়ার পরে অশোকবাবু বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। ঘণ্টাখানেক পরে ফোন করে তাঁর গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর জানায় পুলিশ।
রোহন্ডার যে জমিতে কাজ চলছে, তার আশপাশে বেশ কিছু চাষের জমি রয়েছে। সেখানে কাজ করছিলেন কয়েক জন। তাঁরা পুলিশকে জানিয়েছেন, বেশ কয়েক জনের সঙ্গে অশোকবাবুর বচসা চলছিল। জমির কারবারে বচসা আকছার হয় বলে বিষয়টিকে তাঁরা বিশেষ আমল দেননি। তাঁরা অশোকবাবুকে এমন কথাও বলতে শোনেন যে, “তোরা কি আমাকে খুন করবি নাকি?” তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই পর পর কয়েকটি গুলির শব্দ শোনা যায়। গুলির শব্দের পরেই প্রত্যক্ষদর্শীরা বাইকে চেপে কয়েক জনকে পালিয়ে যেতে দেখেন।
খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে জখম অশোকবাবুকে মধ্যমগ্রাম গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। দুষ্কৃতীরা খুব কাছ থেকে অশোকবাবুর মাথায় গুলি করেছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। তারা অশোকবাবুর পূর্ব পরিচিত বলেও ধারণা পুলিশের। বারাসত পুলিশ জেলার সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। সম্ভাব্য সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরিবারের তরফ থেকে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অশোকবাবুর আদি বাড়ি রোহন্ডার সর্দারপাড়ায়। বছর কয়েক আগে তিনি নারায়ণপুর এলাকায় চলে যান। ওই সংস্থায় কাজের পাশাপাশি দীর্ঘ দিন ধরে তিনি নিজেও জমির দালালি করতেন বলে এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন। সেই কারবারে গোলমালের কারণেই এই খুন কি না, তা পুলিশ তদন্ত করে দেখছে। রাজারহাট সংলগ্ন বলে ওই এলাকায় জমির কারবার চলছে রমরমিয়ে। এলাকার চাষের জমি হাতবদল ঘিরে নানা গোলমালও ঘটে। একই জমি নিয়ে দুই গোষ্ঠীর গোলমাল এর আগেও সেখানে ঘটেছে। তবে দিনের আলোয় বেপরোয়া ভাবে গুলি চালিয়ে খুনের পরে এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কিত।
লাল্টু বলেন, “আমি বিজেপি করি। আমার বাবাও বিজেপির দু’টি অনুষ্ঠানে আমার সঙ্গে গিয়েছিলেন। দু’দিন আগে আমার বাড়িতে বিজেপি-র একটি বৈঠক হয়। তার পর থেকেই আমি ওদের ‘টার্গেট’। সেই জন্যই তৃণমূলের লোকেরা আমার বাবাকে মেরে ফেলল।” মধ্যমগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক রথীন ঘোষ বলেন, “যে কোনও মৃত্যুই দুর্ভাগ্যজনক। তবে এই খুনের সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। সত্যটা নিশ্চয়ই জানা যাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy