ভোরের আলো তখনও ভাল করে ফোটেনি। একে একে ডাকাডাকি শুরু করেছে কুবো, ডাহুক, কোকিল, মাছরাঙারা। এর পরে একে একে আসরে যোগ দিচ্ছে অন্যরাও। আর সেই কলতান শুনতেই রবিবার ভোরে কান পাতলেন এ রাজ্যের পাখিপ্রেমীরা। এ দিন পাখিদের প্রভাতী আসর (ডন কোরাস) রেকর্ড করে তা বাজানো হল শহরের একটি এফএম রেডিয়ো চ্যানেলেও।
গত দু’বছর ধরে এ রাজ্যে ‘ডন কোরাস ডে’ উদ্যাপন করছে পাখিপ্রেমী সংগঠন ‘বার্ড ওয়াচার্স সোসাইটি’। সঙ্গে আছে ‘ই-বার্ড ইন্ডিয়া’ এবং ‘বার্ড কাউন্ট ইন্ডিয়া’ নামে দু’টি জাতীয় সংগঠনও। তবে এ বছর এর তৃতীয় সংস্করণে তা বহরে বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন পক্ষীপ্রেমী এবং চিকিৎসক কণাদ বৈদ্য। তাঁর কথায়, ‘‘এ বছর দেশের একাধিক রাজ্যে পাখির কলতান শুনেছেন উৎসাহীরা। দেশে ১৩০ জনেরও বেশি পাখিপ্রেমী অংশ নিয়েছেন। বাংলায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা প্রায় ৬০-৭০ জন, যা আগের বারের তুলনায় বেশি। অর্থাৎ, মানুষের মধ্যে পাখি নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে। রাজ্যের বাইরে সবচেয়ে বেশি লোকজন অংশ নিয়েছেন তেলঙ্গানায়। এখনও পর্যন্ত ভোরের কলতান শুনে দেশে ২২৩টি প্রজাতিকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। সংখ্যাটা আরও বাড়বে।’’
এ বার প্রথম রাজ্যের একটি এফএম রেডিয়ো চ্যানেলের অনুষ্ঠানে বাজানো হল এ দিনের রেকর্ড করা কলতান। কণাদের কথায়, ‘‘এর মাধ্যমে পাখিপ্রেমীরাই নন, সাধারণ মানুষের কাছেও পাখিদের ডাক পৌঁছে দেওয়া গিয়েছে। আগামী দিনে হয়তো সরাসরি সম্প্রচার করাও সম্ভব হবে।’’
সাধারণত মে মাসে বিশ্ব জুড়ে পালিত হয় ‘আন্তর্জাতিক ডন কোরাস ডে’। ২০১৫ সাল থেকে আয়ারল্যান্ডের রেডিয়োর উদ্যোগে পাখির কলতান রেকর্ড করে তা রেডিয়োয় বাজানো শুরু হয়। ৭০টিরও বেশি দেশে ভোরের কলতান রেকর্ড করে তা বাজানো হয় রেডিয়োর ওই অনুষ্ঠানে। ২০১৭ সালে চাপড়ামারি অভয়ারণ্য থেকে পাখিপ্রেমী সুমিত সেন ও সুদীপ্ত রায়ের হাত ধরে তাতে অংশ নেয় ভারতের অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো-ও। তবে ভারতে মে মাসে প্রবল গরম ও আবহাওয়া খারাপ, সেই সঙ্গে তা পাখিদের প্রজননকালও নয়। প্রজননের সময়ে পাখিরা বেশি ডাকে বলেই এ দেশে ‘ডন কোরাস ডে’-কে কিছুটা এগিয়ে আনা হয়েছে গত তিন বছর ধরে। এ দিন ভোর ৫টা থেকে পাখিদের কলতান শুনতে উৎসাহীরা কান পেতেছেন। অন্তত ১৫ মিনিট ধরে পাখির কলতান রেকর্ড করে জমা করতে হয়েছে ই-বার্ড পোর্টালে। পরে জ়ুম বৈঠকে অংশও নিয়েছেন বাংলা ও অন্য রাজ্যের বহু পাখিপ্রেমী।
এ দিন সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ে পাখির ডাক শুনতে হাজির বর্ষীয়ান পক্ষীপ্রেমী সুদীপ্ত বলছেন, ‘‘শুধু পাখি দেখা বা ছবি তোলাই নয়, পাখির ডাক শুনে তাকে চিনতে পারাটাও একটা অভ্যাস। এর উপরে গুরুত্ব দিতেই বছর তিনেক ধরে এই উদ্যোগ। এ ছাড়া কোনও জায়গায় প্রতি বছর ভোরের কলতান রেকর্ড হলে সেখানকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য ঠিক আছে, না কি কোনও পরিবর্তন হয়েছে, তা বোঝা যায়। সেই জায়গার পাখিরা কেমন আছে, তা-ও বোঝা সম্ভব।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)