পুলিশের নজরে ‘দাদু’, ‘সাহেব’ ও ‘বাপ্পাদা’। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
জুনিয়র ডাক্তারদের উপর হামলার আশঙ্কা সংক্রান্ত একটি ফোনালাপের অডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে। যদিও সেই অডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। তবে ওই অডিয়োর সূত্র ধরে, দু’জনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এক জন সঞ্জীব দাস এবং অন্য জন বাম যুবনেতা কলতান দাশগুপ্ত। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের প্রকাশ্যে আনা এই অডিয়ো ক্লিপে এই দু’জনেরই কণ্ঠস্বর শোনা গিয়েছে বলে সন্দেহ পুলিশের। তবে সেখানে আরও কয়েক জনের নাম ঘিরে রহস্য দানা বাঁধতে শুরু করেছে। ফোনালাপের উঠে এসেছে ‘দাদু’, ‘বাপ্পাদা’ এবং ‘সাহেব’-এর কথা। এই নামগুলির আড়ালে রয়েছেন অন্য কেউ? এঁরা কারা? তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধন্দ। উত্তর এখনও অধরা।
কুণাল যখন ফোনালাপটি প্রকাশ্যে আনেন, তখন একজনকে ‘স’ এবং অপর জনকে ‘ক’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। তাঁর দাবি ছিল, এক জন অতিবাম যুব সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। অপর জন বাম যুব সংগঠনের সঙ্গে। ঘটনাচক্রে, ধৃত কলতান সিপিএমের যুবনেতা। তাঁর গ্রেফতারির পর থেকেই অডিয়োয় উঠে আসা বাকি রহস্যময় ব্যক্তিরা কারা, সেই নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছে। এই ত্রয়ীর পরিচয় এখনও জানা যায়নি। তবে ওই ফোনালাপে যা উঠে এসেছে, তাতে এই ত্রয়ীর বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। যেমন, ‘সাহেব’ই নাকি নির্দেশ দিয়েছিলেন সল্টলেকে হামলার জন্য। কথোপকথনের ধরনে আভাস, এই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির ক্ষমতা ফোনালাপে থাকা দু’জনের থেকে কিছুটা বেশি। যিনি নির্দেশ দেওয়ার মতো ক্ষমতা রাখেন। কথোপকথনের একটি পর্যায়ে ‘বাপ্পাদা’ ও ‘দাদু’— এই দু’টি নামও উঠে এসেছিল।
কুণালের ফাঁস করা ভিডিয়োর ‘স’ এবং ‘ক’ গ্রেফতার হলেও কারা ‘দাদু’, ‘বাপ্পাদা’ ও ‘সাহেব’— তা নিয়ে ধোঁয়াশায় পুলিশ। বিধাননগর পুলিশের ডিসি অনীশ সরকারও বলেছেন, “তদন্তের সময় এঁদের স্বরের নমুনা মিলিয়ে দেখব। আইনানুগ পদ্ধতিতে তদন্ত হবে। অডিয়োতে আমরা আরও তিন জনের নাম পেয়েছি। সাহেব, দাদু এবং বাপ্পাদা। তাঁরা কারা, এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে তাঁরা কী ভাবে যুক্ত, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।”
তবে তৃণমূলের তরফে ইতিমধ্যে খোঁচা আসতে শুরু করেছে কলতানের গ্রেফতারির পর। ‘সাহেব’ আসলে কে? তা নিয়ে সমাজমাধ্যমে ইঙ্গিতপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের যুবনেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য। পুলিশ যাতে এই চক্রান্তের মাথাকে গ্রেফতার করে, সেই দাবিও তুলেছেন তিনি। যদিও কলতানের দাবি, তাঁর গ্রেফতারির পিছনে ‘ষড়যন্ত্র’ রয়েছে। যদিও বিধাননগর পুলিশের দাবি, তারা অডিয়োর সত্যতা যাচাই করে দেখেছে এবং তার সত্যতা নিয়ে কোনও সংশয় নেই পুলিশের।
কী শোনা গিয়েছিল প্রকাশ্যে আসা কথোপকথনে?
কুণালের প্রকাশ করা অডিয়োয় এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘‘সাহেব অর্ডার করেছে সল্টলেক ওড়ানোর জন্য।’’ দ্বিতীয় ব্যক্তি বলেন, ‘‘অর্ডার হলে করে দে।’’ জবাবে প্রথম ব্যক্তি, ‘‘যারা পার্টনার আছে সবাই প্রশ্ন করছে?’’ দ্বিতীয় ব্যক্তি বলছেন, ‘‘কিছু ভেবেই তো বলেছে।’’ তা শুনে প্রথম ব্যক্তি বলেন, ‘‘আমি এত বছর এই কাজ করেছি, কোনও দিন ভয়ডর লাগেনি। কিন্তু এখন এটাতে বিবেকে লাগছে। করাটা কি ঠিক হবে? ওরা তো লোকের জীবন বাঁচায়।’’
এর পরই দ্বিতীয় ব্যক্তি, প্রথম ব্যক্তির উদ্দেশে বলেন, ‘‘তোকে তো ফাইট টু ফিনিশ করতে বলেনি।’’ প্রথম ব্যক্তির জবাব, ‘‘ছেলেরা মদ খেয়ে যায়। মারতে গিয়ে বেহাত যদি কিছু হয়ে যায়, সেটা তো চিন্তার বিষয়।’’ শুনে দ্বিতীয় ব্যক্তি বলেন, ‘‘সেটা ওকে বল, আমার এমন মনে হচ্ছে, কী করব?’’ প্রথম ব্যক্তি বলেন, ‘‘বাপ্পাদাকে পার্সোনালি জিজ্ঞেস করেছিলাম। বাপ্পাদা বলল, জানোয়ার হয়ে যায়নি এখনও।’’
তখন দ্বিতীয় ব্যক্তির নির্দেশ, ‘‘ওই মতো করেই কর।’’ দ্বিতীয় ব্যক্তি বলেন, ‘‘দাদু বলছে, নবান্নে মিটিং হয়নি। ওরা তো সল্টলেকে ফেরত চলে আসছে। ভাববে শাসকেরা মারটা মেরেছে।’’ তার পরই দ্বিতীয় ব্যক্তি, প্রথম ব্যক্তির উদ্দেশে বলেন, ‘‘কী বলল কথাটা বুঝেছ? বলছে, পুরো দোষটা দিয়ে আরও অশান্তিটা পাকানো যাবে। তবে কলকাতার কাউকে দিয়ে নয়। বাইরের লোক।’’ সব শুনে প্রথম ব্যক্তি বলেন, ‘‘ঠিক আছে দেখছি। কী করব? মাথা ফাটানোটা কি ঠিক হবে?’’ শেষে দ্বিতীয় ব্যক্তি বলেন, ‘‘দেখ, খানিকটা যদি কিছু করা যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy