দক্ষিণ চিন সাগরের এই জাহাজ থেকেই নিখোঁজ বছর পঞ্চাশের মেরিন ইঞ্জিনিয়ার সম্বিত মজুমদার। নিজস্ব চিত্র।
মাঝ সমুদ্র থেকে নিখোঁজ হয়ে গেলেন এক বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার। বাঁশদ্রোণীর বাসিন্দা ওই মেরিন ইঞ্জিনিয়ার লাইবেরিয়ার একটি তেলবাহী ট্যাঙ্কারে কর্মরত। দক্ষিণ চিন সাগরে এই মুহূর্তে রয়েছে তাঁর জাহাজ। সেই জাহাজ থেকে আচমকাই উধাও হয়ে গিয়েছেন বছর পঞ্চাশের সম্বিত মজুমদার। গোটা ঘটনার পিছনে কোনও রহস্য রয়েছে বলেই মনে করছেন তাঁর স্ত্রী জয়তী। তাঁর সন্দেহের তির জাহাজে থাকা সম্বিতের সহকর্মীদের দিকেই।
গত বৃহস্পতিবার থেকে স্বামীর কোনও খোঁজ না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনার বারগেনিং ফোরাম (আইবিএফ)-এর দ্বারস্থ হয়েছেন জয়তী। বাণিজ্যিক পণ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত জাহাজের নাবিকদের আন্তর্জাতিক ফোরাম এই আইবিএফ। কিন্তু এখনও আইবিএফের কাছ থেকে কোনও খবর পাননি জয়তী।
শনিবার জয়তী জানান, গত ৪ ফেব্রুয়ারি, কলকাতা ছাড়েন সম্বিত। ডায়নাকন ট্যাঙ্কার ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড নামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার হয়ে তিনি এমটি সেরেংগেটি জাহাজে সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজে যোগ দেন। নাইজেরিয়ার এসক্রাভোস তেলের খনি থেকে তেল বোঝাই করে দক্ষিণ কোরিয়ার ডায়সান বন্দরের দিকে রওনা হয় সম্বিতের জাহাজ। মাঝে সিঙ্গাপুরের একটি বন্দরেও থামে এমটি সেরেংগেটি।
আরও পড়ুন- বাড়ি ঢুকে ঘুমন্ত কলেজছাত্রীকে গুলি করে মারল প্রাক্তন প্রেমিক, রিজেন্ট পার্কের ঘটনা
গত শনিবার সম্বিতবাবুর সঙ্গে কথা হয় জয়তীর। এর পর কোনও যোগাযোগ হয়নি। জয়তীর কথায়, ‘‘জানতাম যে, জাহাজ রয়েছে দক্ষিণ চিন সাগরে। ২৩ জুন জাহাজ পৌঁছবে ডায়সান বন্দরে। তার পর বাড়ি ফেরারও পরিকল্পনা ছিল সম্বিতের।’’ জয়তী জানান, এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার ১৮ জুন ডায়নাকন কর্তৃপক্ষ তাঁকে ফোন করে বলেন যে, বুধবার সকাল থেকে উধাও সম্বিত। জয়তী বলেন, ‘‘জাহাজ সংস্থা আমাকে শুধু জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতেও স্থানীয় সময় ৮ টা নাগাদ সবার সঙ্গে রাতের খাবার খেয়ে নিজের কেবিনে চলে যান সম্বিত। পরের দিন সকালে ব্রেকফাস্টের সময় থেকে তাঁকে আর পাওয়া যাচ্ছে না। চলন্ত জাহাজ থেকে মাঝ সমুদ্রে কি উবে গেলেন আমার স্বামী?”
জয়তী ডায়াকন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি ডায়াকনকে বলেছিলাম, তারা যাতে আমাকে স্যাটেলাইট ফোনে সম্বিতের কোনও সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয়। তা হলে আমি বুঝতে পারতাম কী হতে পারে। কিন্তু কারওর সঙ্গেই কথা বলায়নি ডায়াকন।”
আরও পড়ুন: আমপানে স্বজনহারার যন্ত্রণা নিয়েই চলছে একার লড়াই
আইবিএফ-কে করা ই-মেলে জয়তী বেশ কয়েকটি প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি জানতে চেয়েছেন, জাহাজের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ কোথায়? কারণ ডেক এবং জাহাজের বিভিন্ন জায়গায় সিসিক্যামেরা লাগানো থাকে। সেই ফুটেজ থেকেও আঁচ পাওয়া যেতে পারে সম্বিত কোথাও বেরিয়েছিলেন কি না। অন্য দিকে জাহাজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কেবিনে সম্বিতের মোবাইল ফোন টেবিলের উপরে পাওয়া গিয়েছে। সেটাও খুব অস্বাভাবিক মনে করছেন জয়তী। ডায়াকন যদিও জয়তীকে জানিয়েছে যে, তারা নিজেরা গোটা বুধবার খোঁজ চালিয়েছে সমুদ্রে। হংকং এবং ফিলিপিন্সে মেরিটাইম রেসকিউ কোঅর্ডিনেশন সেন্টারকে সতর্ক করা হয়েছে এবং তারাও তল্লাশি চালাচ্ছে। কিন্তু এখনও কোনও খোঁজ মেলেনি।
জয়তী জানিয়েছেন, শনিবার যখন সম্বিতের সঙ্গে কথা হয়েছে, তখনও তিনি খুব স্বাভাবিক ছিলেন। কোনও সমস্যার কথা বলেননি। তাঁর সন্দেহ, জাহাজ কর্তৃপক্ষ কিছু লুকোতে চাইছেন। আইবিএফ সূত্রে জয়তী জানতে পেরেছেন, নিয়ম অনুযায়ী, ডায়সান বন্দরে এমটি সেরেংগেটি পৌঁছলেই, সমস্ত নাবিকদের আটক করে জেরা করা হবে। তদন্ত শুরু করবে দক্ষিণ কোরীয় পুলিশ। সেই অপেক্ষাতেই রয়েছেন জয়তী এবং তাঁর কিশোর ছেলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy