নাদিয়ালের বদরতলা বারোয়ারি সঙ্ঘের পুজোর প্রস্তুতি-বৈঠকেও সেই সম্প্রীতির ছবি। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
এলাকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমরাই। তবে দুর্গাপুজো নিয়ে কোনও ভেদাভেদ নেই। তাই তো পুজো মণ্ডপ তৈরির সময়ে হাত লাগান পাড়ার মুসলিম যুবকেরাও। পুজোর প্রস্তুতি নিয়ে দেবাশিস পাল, চন্দ্রনাথ পাল, বীরবল গিরির সঙ্গে জোর আলোচনা চলে ওবাইদুর-মনসুরেরও। প্রতি বছর মেটিয়াবুরুজের নাদিয়ালের পুজোর মূল আকর্ষণই হল সম্প্রীতি।
কলকাতার শেষ সীমানায় নাদিয়ালের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে গঙ্গা। তার পাড়েই এলাকার সর্বপ্রাচীন বদরতলা বারোয়ারি সঙ্ঘের দুর্গাপুজো। মণ্ডপ থেকে ঢিল-ছোড়া দূরত্বে বদরপির সাহেবের মাজার। এই মাজারের চার পাশেই হিন্দুদের বসতি। কথিত আছে, বদরপিরের নামানুসারে এলাকার নামকরণ হয় বদরতলা। সেই পুজোর এ বার ১২৩ বছর। পুজো কমিটির সদস্য প্রতাপ সাহার কথায়, ‘‘হিন্দুরা এখানে সংখ্যালঘু হলেও কখনওই ওরা-আমরার পাঁচিল তৈরি হয়নি। আমার বাড়ির পাশে পিরের মাজারে রোজ হিন্দুদের ঢল থাকে চোখে পড়ার মতো। একই ভাবে পাড়ার পুজোয় মুসলিমদের অংশগ্রহণও যাবতীয় বিভেদ ভুলিয়ে দেয়।’’
প্রতিপদের পড়ন্ত বেলায় পুজোর প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনায় পুজো কমিটির সদস্যদের পাশাপাশি হাজির থাকেন শেখ জুম্মান, ওবাইদুর রহমান, মনসুর আলি মোল্লারা। এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের সদস্যদের নিয়ে তৈরি ‘পিস কমিটি’র যুগ্ম সভাপতি অরুণ রায় মণ্ডপের চাতালে বসে কথা বলছিলেন হাজি সাহেব ওবাইদুর রহমানের সঙ্গে। অরুণ বললেন, ‘‘পুজোর সময়ে দুই সম্প্রদায়ের একসঙ্গে থাকাটাই আমাদের পরম্পরা হয়ে আসছে। ইদের সময়ে যেমন আমরা ওঁদের বাড়িতে নিমন্ত্রিত অতিথি, তেমনই পুজোয় ওঁরাও আমাদের সঙ্গে থাকেন। কোনও অশুভ শক্তিই আমাদের এই মিলনে ছেদ ঘটাতে পারবে না।’’ অপর সভাপতি শেখ জুম্মান বলছেন, ‘‘বাপ-ঠাকুরদার আমল থেকেই এখানে হিন্দু-মুসলমানেরা একসঙ্গে থাকেন। ইদ, দুর্গাপুজো প্রতিটি উৎসবই আমাদের কাছে সমান, কোনও ভেদাভেদ নেই।’’
প্রতি বছর নিয়ম করে ইদ ও দুর্গাপুজোর সময়ে এলাকার দরিদ্রদের হাতে নতুন কাপড় তুলে দেন পিস কমিটির সদস্যেরা। নাদিয়াল থানার ওসি ময়ূখময় রায়ের কথায়, ‘‘নাদিয়াল থানা এলাকায় ১৫টি দুর্গাপুজো হয়। মুসলিম-অধ্যুষিত এলাকার পুজোয় মুসলিমদের সক্রিয় ভূমিকা থাকায় সম্প্রীতির ছবিটা আরও উজ্জ্বল।’’ শুধু দুর্গাপুজোই নয়, জগদ্ধাত্রী পুজোকে কেন্দ্র করেও মিশে যান এলাকার দুই সম্প্রদায়ের মানুষেরা।
প্রতিপদের বিকেলে নাদিয়ালের কয়েকটি পুজো মণ্ডপ ঘুরে দেখতে গিয়ে কানে ভেসে এল রবীন্দ্রসঙ্গীত, কখনও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গান। কলকাতা পুলিশের এলাকাধীন হলেও নাদিয়ালের বিভিন্ন প্রান্তে এখনও গ্রাম্য পরিবেশ। এলাকার মণ্ডপগুলিতে পঞ্চমী-ষষ্ঠীতেই প্রতিমা আসে। বদরতলা বারোয়ারির মণ্ডপেও প্রতিমা আসবে ষষ্ঠীতেই। আর তার জন্যই এখন প্রহর গুনছে নাদিয়ালের কচিকাঁচারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy