Advertisement
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Bangladesh Unrest

দেশ ছাড়লেন হাসিনা, উচ্ছ্বাস কলকাতার বাংলাদেশিদের  

কলকাতার সদর স্ট্রিট, মার্কুইস স্ট্রিট সোমবার দুপুরে যেন বদলে গেল এক খণ্ড ঢাকায়। তবে, সেখানে হিংসার কোনও ছবি নেই। সবেমাত্র খবর চাউর হয়েছে যে, শেখ হাসিনা আর প্রধানমন্ত্রী পদে নেই।

উৎসব: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছেড়ে যাওয়ার খবর আসতেই উল্লাস শহরে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের। সোমবার, মার্কুইস স্ট্রিটে।

উৎসব: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছেড়ে যাওয়ার খবর আসতেই উল্লাস শহরে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের। সোমবার, মার্কুইস স্ট্রিটে। ছবি: সুমন বল্লভ। 

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২৪ ০৭:২১
Share: Save:

রাজপথ জুড়ে উঠছে স্লোগান। গলির ভিতরে চলছে মিষ্টিমুখ। চার দিকে যেন বিজয়োল্লাস।

কলকাতার সদর স্ট্রিট, মার্কুইস স্ট্রিট সোমবার দুপুরে যেন বদলে গেল এক খণ্ড ঢাকায়। তবে, সেখানে হিংসার কোনও ছবি নেই। সবেমাত্র খবর চাউর হয়েছে যে, শেখ হাসিনা আর প্রধানমন্ত্রী পদে নেই। বরং বাংলাদেশ ছেড়ে তিনি চলে গিয়েছেন। এর খানিক ক্ষণের মধ্যে হাসিনা-বিরোধী স্লোগান দিতে দিতে কলকাতা শহরের ওই সব রাস্তায় নেমে পড়লেন বাংলাদেশের মানুষজন। যার জেরে যানবাহনের গতি শ্লথ হল। অবশ্য কলকাতা পুলিশের কড়াকড়িতে সেই উচ্ছ্বাস খুব বেশি ক্ষণ দেখা গেল না।

মধ্য কলকাতার সদর স্ট্রিট, মার্কুইস স্ট্রিটের মতো এলাকায় সারা বছরই বাংলাদেশের নাগরিকদের যাতায়াত লেগে থাকে। কেউ বেড়াতে আসেন, কেউ আসেন চিকিৎসার জন্য। রবিবার থেকে বাংলাদেশের অশান্ত পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে ছিলেন তাঁদের অনেকেই। এ দিন সকালেও দেখা যায়, সদর স্ট্রিট, মার্কুইস স্ট্রিটে ভ্রমণ সংস্থাগুলির অফিসে গিয়ে উদ্বিগ্ন লোকজন রেল, বিমান বা বাসের টিকিটের খোঁজ নিচ্ছেন। সকালেই দেখা যায়, চট্টগ্রামের বাসিন্দা আবু তাহের এবং তাঁর স্ত্রী রিজ্জা বেগম উদ্বিগ্ন মুখে পেট্রাপোল সীমান্তের দিকে রওনা দিলেন। আবু বলেন, ‘‘বাচ্চার চিকিৎসার জন্য এসেছিলাম। ভিসা শেষ হয়ে যাবে। যে ভাবেই হোক, দেশে ফিরতে চাইছি।’’

আবুর মতো কলকাতার ওই তল্লাটে ঘোরাফেরা করা বাংলাদেশের বাসিন্দাদের সোমবার দিনভর দেশে ফেরা নিয়ে উদ্বেগে থাকতে দেখা গেল। এমন পরিস্থিতিতে দুপুরে শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ছাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই সদর স্ট্রিট, মার্কুইস স্ট্রিটে ভেসে ওঠে ঢাকা শহরের বিজয়োল্লাসের ছবি। কেউ কাউকে চেনেন না। কিন্তু আওয়ামী লীগের সরকারের পতন ও প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে হাসিনার ইস্তফা দিয়ে বাংলাদেশ ছাড়ার খবর পেয়েই বিভিন্ন হোটেল ও অতিথিশালা থেকে বাংলাদেশি নাগরিকদের রাস্তায় নেমে পড়তে দেখা যায়।

কম বয়সিদের দেখা যায়, মিছিল করে হাসিনা-বিরোধী স্লোগান দিতে। গাজিপুরের বাসিন্দা ছাত্র মেহেদি হাসান লিটন বলেন, ‘‘ছাত্রদের উপরে গুলি চলেছে। শেখ হাসিনার বিচার চাই।’’ আফরোজ হোসেন নামে অন্য ছাত্র বলেন, ‘‘দুর্নীতি, অত্যাচার, স্বৈরাচারী শাসনের অবসান হয়েছে।’’

তবে, এ দিন বিকেলের পরে বাংলাদেশে যে দিশাহীন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা নিয়েও উদ্বিগ্ন অনেকেই। বিশেষত, রেল ও সড়কপথ বন্ধ থাকলেও অনেকে আশা করেছিলেন, বিমানে ফিরে যাবেন। কিন্তু এ দিন বিকেলেই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চলাচলকারী সব উড়ান সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঢাকার বাসিন্দা সালাউদ্দিন বলেন, ‘‘চিকিৎসার জন্য এসেছিলাম কলকাতায়। ভাবছিলাম, বিমানে ফিরব। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সম্ভব হবে কিনা, বুঝতে পারছি না। তবে যা হয়েছে, ঠিক হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ দেড় দশক ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি।’’

তবে এ সব নিয়ে অনেকে আবার ভাবতেও রাজি নন। বিশেষত, যাঁরা এ দিন কলকাতার রাস্তায় ওই বিজয়োল্লাসে যোগ দেন। ঢাকার বাসিন্দা, ব্যবসায়ী মহম্মদ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘‘আজ নতুন করে বাংলাদেশ স্বাধীন হল। আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ছেলে।
তবু বলছি, মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ভাঙিয়ে দুর্নীতি হয়েছে, গত এক দশকের বেশি সময়ে ভোট দেওয়ার সুযোগ পর্যন্ত পাইনি। চিকিৎসার কারণে কলকাতায় আটকে রয়েছি। আজকের দিনটা ঢাকায় থাকতে পারলে উপভোগ করতাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE