Advertisement
১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
বিপন্ন যান/২
Yellow Taxi

রাত নামলেই বিকল্প নানা ব্যবস্থায় পরিষেবায় নামে হলুদ ট্যাক্সি

৩০ টাকা মাথাপিছু ভাড়ায় চার জন যাত্রী পেলেই সময় নষ্ট না করে বেরিয়ে যাচ্ছে হলুদ ট্যাক্সি। দুপুর থেকেই এই ছবি চোখে পড়ে। রাতে বাসের সংখ্যা কমে এলে সেই ট্যাক্সির সংখ্যা আরও বাড়ে।

শহরের একাধিক পানশালার সঙ্গীতশিল্পীদের একটি বড় অংশ বেশি রাতে পরিচিত চালকদের হলুদ ট্যাক্সিতে বাড়ি ফেরেন।

শহরের একাধিক পানশালার সঙ্গীতশিল্পীদের একটি বড় অংশ বেশি রাতে পরিচিত চালকদের হলুদ ট্যাক্সিতে বাড়ি ফেরেন। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

ফিরোজ ইসলাম 
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:০৩
Share: Save:

এসপ্লানেডের এল-২০ বাস স্ট্যান্ডের বিপরীতে মেট্রো স্টেশনের গেট। সামনের রাস্তায় একের পর এক হলুদ ট্যাক্সি এসে থামছে খিদিরপুর যাওয়ার জন্য। চালকেরা নিজেরাই যাত্রী তুলছেন হেঁকে হেঁকে। ৩০ টাকা মাথাপিছু ভাড়ায় চার জন যাত্রী পেলেই সময় নষ্ট না করে বেরিয়ে যাচ্ছে হলুদ ট্যাক্সি। দুপুর থেকেই এই ছবি চোখে পড়ে। রাতে বাসের সংখ্যা কমে এলে সেই ট্যাক্সির সংখ্যা আরও বাড়ে।

একই ব্যবস্থা রয়েছে খিদিরপুর থেকে ফিরতি পথেও। এমন শাটল ট্যাক্সি হিসাবে ছোটার ব্যবস্থায় চালকেরা দিব্যি খুশি। এই চালকদেরই অন্য ঠিকানায় যেতে বললে গন্তব্য পছন্দ না হলে সরাসরি যাত্রী প্রত্যাখ্যান করেন তাঁরা। একই ব্যবস্থায় ট্যাক্সি চলে এসপ্লানেড- হাওড়া স্টেশন পথে। রাত নামতেই বাসের সংখ্যা কমে এলে ওই পথে শাটল ট্যাক্সির চাহিদা বাড়ে।

এর বাইরে চালকদের একটি বড় অংশ বৈধ নথি ছাড়াই রাতবিরেতে শহরের কিছু নির্দিষ্ট পথে স্থানীয় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ট্যাক্সি চালান বলে খবর। বিভিন্ন পানশালা, রেল স্টেশন থেকে কিছু চেনা যাত্রীকে মাসিক চুক্তির ভিত্তিতে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেন তাঁরা। শহরের একাধিক পানশালার সঙ্গীতশিল্পীদের একটি বড় অংশ বেশি রাতে পরিচিত চালকদের হলুদ ট্যাক্সিতে বাড়ি ফেরেন। ভোরে ওই সমস্ত ট্যাক্সির একটি অংশ আবার বিভিন্ন বাজার থেকে আনাজ অথবা মাছ নিয়ে শহরতলির বাজারগুলিতে পৌঁছে দেয়। তার পরে সারা দিন আর চলতে দেখা যায় না ওই সব ট্যাক্সিকে।

এই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, গড়িয়ার গঙ্গাজোয়ারা এলাকার এক ট্যাক্সিচালক বললেন, ‘‘ট্র্যাফিক আইন ও দূষণ সংক্রান্ত নিয়ম ভঙ্গের ক্ষেত্রে সরকার জরিমানা প্রচুর বাড়িয়ে দিয়েছে। পদে পদে সেই সব জরিমানার আশঙ্কা নিয়ে দিনের বেলায় লম্বা দূরত্বে ট্যাক্সি চালানো সম্ভব নয়।’’ তিনি জানাচ্ছেন, ভাল ভাবে ট্যাক্সি চালিয়ে কর-সহ অন্যান্য খরচ মিটিয়ে দিনে সাত-আটশো টাকা ঘরে আনতে বছর পাঁচেক আগেও তাঁকে প্রাণপাত পরিশ্রম করতে হত। এখন দিনের বেলায় নির্দিষ্ট সময়ে এক জনের গাড়ি চালান। রাতের দিকে বাঁধা খদ্দের নিয়ে কয়েক ঘণ্টা নিজের ট্যাক্সিও চালান। তাতে দিনে তিন-চারশো টাকা আয় হয়।

ট্যাক্সির সমস্যা মেটাতে সরকারের সাহায্য চায় ট্যাক্সিচালকদের সংগঠনগুলি। সম্প্রতি এই লক্ষ্যে বামপন্থী শ্রমিক সংগঠন এআইটিইউসি অনুমোদিত ‘ট্যাক্সি অপারেটর্স কোঅর্ডিনেশন কমিটি’ এবং শাসকদলের শ্রমিক সংগঠন ‘আইএনটিটিইউসি’ অনুমোদিত ‘প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সিমেন্স অ্যাসোসিয়েশন’, ‘বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন’ এবং ‘ক্যালকাটা ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন’ মিলে একটি যৌথ মঞ্চ তৈরি করেছে। ওই মঞ্চের নাম ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ফোরাম অব ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনস’। মঞ্চের পক্ষ থেকে সরকারের সক্রিয় সহযোগিতা চেয়ে হলুদ ট্যাক্সি রক্ষায় পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীকে চিঠি দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এই প্রসঙ্গে ‘ট্যাক্সি অপারেটর্স কোঅর্ডিনেশন কমিটি’র তরফে নওলকিশোর শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, অ্যাম্বাসাডর গাড়ির উৎপাদন ২০১৪ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। চালকদের অনেকের গাড়িই ২০০৮-’০৯ সালে কেনা। ওই সব গাড়ির মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পথে। ২০১৪ সালের কাছাকাছি সময়ে কেনা ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা যে সব অ্যাম্বাসাডর এখনও সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি হিসাবে বিক্রি হচ্ছে, সেগুলি চালকদের অনেকে কিনতে আগ্রহী। প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণের পরে ওই সব গাড়ি যাতে ট্যাক্সি হিসাবে চালানোর অনুমতি সরকার দেয়, তা দেখার জন্য আবেদন জানিয়েছেন এই বাম নেতা। এ ছাড়া, অন্যান্য সংস্থার সেডান গাড়ি কিনে যাতে হলুদ ট্যাক্সি হিসাবে চালানো যায়, সেই দাবিও জানিয়েছেন তিনি।

‘প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সিমেন্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শম্ভুনাথ দে বলেন, ‘‘লাখখানেক মানুষের বেঁচে থাকা জড়িয়ে রয়েছে হলুদ ট্যাক্সিকে কেন্দ্র করে। এই ট্যাক্সির সঙ্গে শহরের পরিচিতিও জড়িয়ে রয়েছে। এখনও শহরের বাইরে থেকে আসা সাধারণ যাত্রীদের বড় অংশ অ্যাপ-ক্যাবের তুলনায় হলুদ ট্যাক্সির উপরে বেশি ভরসা করেন। তাই এই ট্যাক্সি রক্ষায় সরকারি উদ্যোগ বিশেষ প্রয়োজন।’’

পরিবহণ দফতর অবশ্য জানিয়েছে, অন্যান্য সংস্থার গাড়ি নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করলে হলুদ ট্যাক্সি হিসাবে চলতেই পারে। পাশাপাশি, একটি বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় সরকার নতুন করে হলুদ রঙের পাঁচ হাজার ক্যাব নামানোর কথা ভাবছে। ওই ক্যাবের চালকেরা কী ব্যবস্থায় ক্যাব চালানোর সঙ্গে যুক্ত হবেন, তা অবশ্য এখনও খোলসা করেনি সরকার। (শেষ)

অন্য বিষয়গুলি:

Night Shuttle Taxi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy