ভাইয়ের সঙ্গে সুপারিশপত্র নিতে এসেছেন উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থী, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সরস্বতী কর। শনিবার, সল্টলেকে। —নিজস্ব চিত্র।
ওঁদের কাছে এ যেন দুর্লঙ্ঘ্য কোনও শৃঙ্গ জয়!
দু’চোখ জলে ভরা। মুখে একগাল হাসি। শনিবার মা-বাবার কাঁধে ভর করে সল্টলেকের স্কুল সার্ভিস কমিশনের অফিস থেকে বেরোচ্ছিলেন উচ্চ প্রাথমিকে সদ্য চাকরি পাওয়া পামেলা দাস। সেরিব্রাল পলসিতে জন্ম থেকেই তাঁর দুই পা অকেজো। কারও সাহায্য ছাড়া হাঁটতে পারেন না। তবু শেষ পর্যন্ত লড়াই করে জয়ী হয়েছেন তিনি। স্কুল সার্ভিস কমিশনের অফিস থেকে বেরিয়ে পামেলা বললেন, ‘‘যে স্কুলে চাকরি পেলাম, সেটা বাড়ি থেকে অনেকটাই দূরে। আমার বাড়ি হুগলির কোন্নগরে। আর আমার স্কুল সন্দেশখালি-২ ব্লকে। নদী পেরিয়ে যেতে হবে। কিন্তু দশ বছর লড়াই করে স্কুলে শিক্ষকতার এই স্বপ্নের চাকরিটা পেয়েছি। জীবনের প্রথম চাকরি। এই চাকরি ছাড়া যাবে না। মা, বাবাকে নিয়ে চলে যাব সন্দেশখালিতে।”
সন্দেশখালির ভগবতী দেবী বালিকা বিদ্যালয়ে ইংরেজির শিক্ষিকা হিসাবে যোগ দেবেন পামেলা। তাঁর কথায়, “সুপারিশপত্র পেয়ে গিয়েছি। মা, বাবাকে নিয়েই স্কুলে যাব নিয়োগপত্র আনতে। আমি নিজে হাঁটতে পারি না। সব জায়গাতেই সঙ্গে কাউকে থাকতে হয়। কিন্তু এ ভাবেই তো স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পার করলাম। এ বার স্কুলে যাব ছোট ছোট মেয়েদের পড়াতে। আমি খুবই আত্মবিশ্বাসী। নিজের পায়ের সমস্যা নিয়ে কখনও হীনম্মন্যতায় ভুগিনি। কোনও দিন লড়াইয়ের ময়দান ছাড়িনি। সুপারিশপত্র পেলাম। এই জয় শৃঙ্গ জয়ের থেকে কম কিসের?”
একই রকম আনন্দের অনুভূতি হচ্ছে ৭৫ শতাংশ দৃষ্টিহীন সরস্বতী করেরও। নিজের সুপারিশপত্র হাতে নিয়ে খুব কাছ থেকে ধরে সেটি দেখতে দেখতে বললেন, “আমি ৭৫ শতাংশ দৃষ্টিহীন। কিন্তু সে জন্য কোনও কিছুই আটকে থাকেনি। ছোটবেলা থেকেই লড়াই করেছি। ব্রেলের মাধ্যমে পড়াশোনা করেছি। এ বার চাকরি পেয়ে সংসারের হাল ধরব।’’ সরস্বতী জানান, তাঁর বাড়িতে রয়েছেন মা, বাবা ও ভাই। বাবা চাষবাস করেন। ভাই রাহুল সিভিক ভলান্টিয়ার। মা গৃহবধূ। এ বার তিনি স্কুলে চাকরি পাওয়ায় সংসারের হাল ফিরবে।
সরস্বতী জানান, তাঁর বাড়ি বাঁকুড়ায়। চাকরি পেয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের গোপালনগর বিহারীলাল বিদ্যাপীঠে। তিনি ওই স্কুলে বাংলা পড়াবেন। সরস্বতী বলেন, “দূরত্বটা কোনও ব্যাপার নয়। ওখানে থাকতে হবে। মা, বাবাকে নিয়ে যাব। ভাইটা সংসারের জন্য খুব খাটে। এ বার আমি চাকরি পাওয়ায় ওর কিছুটা স্বস্তি হবে।” এ দিন ভাইকে সঙ্গে নিয়েই সুপারিশপত্র নিতে এসেছিলেন সরস্বতী।
এ দিন স্কুল সার্ভিস কমিশনের অফিসে বাংলা এবং ইংরেজির কাউন্সেলিং হয়। বাংলার ২১৬ জন এবং ইংরেজির ৩৫৭ জনকে সুপারিশপত্র দিতে ডেকেছিল এসএসসি। এর মধ্যে ৫০ জনের মতো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন চাকরিপ্রার্থী ছিলেন। এ দিনের কাউন্সেলিংয়ে অনুপস্থিত ছিলেন অথবা সুপারিশপত্র নিতে অস্বীকার করেছেন, এমন প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ১৫৫।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy