সুধারানি কর্মকার।
সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানের মাইক তত ক্ষণে থেমে গিয়েছে। শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ের ব্যস্ততাও ধীরে ধীরে কমছে। কনকনে শীতের রাতে সুভাষচন্দ্রের মূর্তির নীচে বসে একাকী বৃদ্ধা। তাঁর গায়ে পাটভাঙা দামী শাল।
বাড়ি কোথায়, কিছুতেই জানাতে চাননি ৭৬ বছরের বৃদ্ধা। তাঁর অভিযোগ, ছেলে বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছেন। তাই বিচার চাইতে ২৩ জানুয়ারির রাতে তিনি সুভাষচন্দ্রের কাছে এসেছেন। শেষ পর্যন্ত এক ওষুধ ব্যবসায়ীর উদ্যোগে, হ্যাম রেডিয়ো ক্লাব এবং পুলিশের সাহায্যে রবিবার ভোরে মহেশতলার বাড়িতে ফেরেন সুধারানি কর্মকার।
শ্যামবাজার মোড়ে ওষুধের দোকান রয়েছে সোমনাথ ঘোষের। সেখানকার কয়েক জন কর্মী বৃদ্ধাকে রাত সাড়ে দশটা নাগাদ সুভাষচন্দ্রের মূর্তির নীচে বসে থাকতে দেখেন। সোমনাথবাবু জানান, নিজের নাম, ছেলের নাম বললেও ঠিকানা বলতে চাইছিলেন না বৃদ্ধা। সোমনাথবাবু বলেন, “সংবাদপত্রে হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের কথা পড়েছিলাম। এক পরিচিতের মাধ্যমে তার সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কিছু ক্ষণের মধ্যে তাঁদের দু’জন চলে আসেন।”
হ্যাম রেডিয়ো অপারেটর অর্ণব চৌধুরী এবং দেবদত্ত মুখোপাধ্যায় এসে বৃদ্ধার সঙ্গে গল্প জোড়েন। কথায় কথায় বেরিয়ে আসে, তাঁর বাড়ি নতুনহাটে। শুরু হয় নতুনহাট খোঁজার কাজ। বাড়ির কাছে কী আছে জানতে চাইলে সুধারানিদেবী একটি ক্লাবের নাম বলেন। এ বার নিজেদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ওই ক্লাবের খোঁজ শুরু করেন অর্ণবেরা। খোঁজ মেলে বৃদ্ধার ছেলে দিলীপ কর্মকারের বাড়ির। তত ক্ষণে লালবাজারে ফোন করে সব জানান অম্বরীশবাবু। মিনিট দশেকের মধ্যে শ্যামপুকুর থানার পুলিশ এসে বৃদ্ধাকে থানায় নিয়ে যায়।
নতুনহাটের ওই ক্লাবের মাধ্যমে দিলীপবাবুর ফোন নম্বর পাওয়া যায়। বৃদ্ধার অভিযোগ, ছেলে অত্যাচার করেন। সেই জন্য তিনি ২৩ তারিখ সকালে বেরিয়ে হেঁটে শ্যামবাজারে পৌঁছন। তাঁর দাবি, সুভাষচন্দ্রই এর বিচার করবেন। এ দিকে পুলিশের ফোন পেয়ে দিলীপবাবু জানান, তাঁর মা সকালে বেরিয়ে গিয়েছেন। পুলিশ ডাকলেও নিজে অসুস্থ বলে মাকে নিতে আসতে চাইছিলেন না তিনি। শেষ পর্যন্ত ধমকে কাজ হয়। রবিবার ভোরে ট্যাক্সি করে থানায় পৌঁছন দিলীপবাবু। পুলিশ জানিয়েছে, এর পরে বাড়িতে ওই বৃদ্ধার কোনও অসুবিধা হলে দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে।
দিলীপবাবু জানান, তিনি দোকানে কাজ করেন। বর্তমানে অসুস্থ। তাঁর দাবি, “আমরা মায়ের অযত্ন করি না। মা-ই চেঁচান এই বলে, ‘যে ছেলে মায়ের অযত্ন করবে, তার খাবার জুটবে না’।’’ তা হলে মায়ের খোঁজ না মিললেও কেন থানায় জানালেন না? কোনও উত্তর মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy