আর জি কর হাসপাতালের মর্গের সামনে প্রসেন মণ্ডলের দিদিমা। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।
চুরির অভিযোগে তাঁর একমাত্র নাতিকে স্থানীয় লোকজন বেধড়ক মারধর করছেন। খবর পেয়ে বাড়ি থেকে কোনও ভাবে অশক্ত শরীরে ছুটেছিলেন দিদিমা। সেখানে পৌঁছে বৃদ্ধা দেখেন, অন্যেরা চলে গেলেও এক জন একটি গাছের ডাল দিয়ে তখনও তাঁর বাইশ বছরের নাতির প্রায় অচৈতন্য শরীরের উপরে মেরে চলেছেন। চোখের সামনে প্রতিবেশী পরিবারের হাতে নাতিকে মারধর ও পরে মৃত্যুর ঘটনায় স্তম্ভিত ভাগ্যবতী মণ্ডল নামে ওই বৃদ্ধা।
মোবাইল চুরির অভিযোগে শনিবার সকালে সল্টলেকের পোলেনাইটের বাসিন্দা ওই বৃদ্ধার নাতি প্রসেন মণ্ডলকে একই পরিবারের তিন সদস্য বেধড়ক মারধর করে। তার জেরে রাস্তায় পড়ে যান ওই যুবক। পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। প্রসেনকে খুনের অভিযোগে পুলিশ তপন সরকার, হর্ষিত সরকার ও চিন্ময় মণ্ডল নামে তিন জনকে শনিবারেই গ্রেফতার করে। তাদের ছ’দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
ভাগ্যবতী রবিবার জানান, পেয়ারা গাছের মোটা ডাল দিয়ে তাঁর নাতিকে পেটানো হয়। পোলেনাইটে একটি মাঠে প্রসেনকে মারা শুরু হয়। রাস্তায় তাঁকে মারতে মারতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। একটি পাথরকুচির ঢিবির উপরে ফেলেও প্রসেনকে পেটানো হয় বলে অভিযোগ। নাতিকে মারধরের খবর পেয়ে ভাগ্যবতী ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখেন, এক জন তখনও প্রসেনকে মারছে। এমনকি, তাঁকেও ওই ব্যক্তি মারধরের হুমকি দেন বলেই অভিযোগ বৃদ্ধার। তিনি জানান, নাতিই তাঁর ভরসা ছিলেন। বহু বছর আগে প্রসেনের মা মারা যান। তার পর থেকে দিদিমার কাছেই তিনি বড় হয়েছিলেন। ভাগ্যবতী বলেন, ‘‘নাতি কাজকর্ম কিছু করত না। আমি ভিক্ষা করে সংসার চালাতাম। সকলে বলছিল, নাতি নাকি মোবাইল চুরি করেছে। প্রসেন চুরি করেনি বলেছিল। বার বার ওকে না মারার অনুরোধ করেছিল। কিন্তু ওরা কোনও কথা শোনেনি। চোখের সামনে নাতিটা মারা গেল।’’
প্রসেনের মামা পরিতোষ মণ্ডল জানান, মারধরের জেরে প্রসেনের পা দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছিল। তখন কেউ পায়ে গামছা বেঁধে দেয়। কিন্তু রক্তে সেই গামছাও ভিজে গিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘আমরা গরিব মানুষ। যারা এ ভাবে অত্যাচার করে আমার ভাগ্নেকে খুন করল, আইন যেন তাদের উপযুক্ত সাজা দেয়।’’
এ দিন প্রসেনের আত্মীয়েরা জানান, সকালে ওই ঘটনার পরে অন্তত তিন ঘণ্টা প্রসেন রাস্তায় পড়েছিলেন। কিন্তু কেউ ফিরে তাকাননি। গ্রামের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে অচৈতন্য অবস্থায় দিদিমা বসেছিলেন নাতিকে নিয়ে। সেখানকার চিকিৎসকেরা প্রসেনকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। ভাগ্যবতী বলেন, ‘‘যারা মেরেছিল, তারাই পরে আবার প্রসেনকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। রাস্তায় যত ক্ষণ পড়ে ছিল, তত ক্ষণ জ্ঞান ছিল ওর। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যায়।’’
রবিবার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রসেনের দেহের ময়না তদন্ত হয়। সেখানে ছিলেন তাঁর দিদিমা ও মামা। ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy