Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Old Man

আত্মীয়েরা থেকেও হাসপাতাল ঠিকানা অসুস্থ বৃদ্ধের

অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে রয়েছেন অশোকবাবুর স্ত্রী ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁদের মেয়ে অনন্যা চক্রবর্তী।

অশোক চক্রবর্তী।

অশোক চক্রবর্তী।

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৩১
Share: Save:

ঘরবাড়ি ছিল, ছিল আত্মীয়স্বজনও। তবুও শেষ আশ্রয় ছিল বৃদ্ধাশ্রম। দু’মাস ধরে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক অশোক চক্রবর্তীর পরিবারের খোঁজ শেষ পর্যন্ত মিলল। তাঁর বাড়ি বিক্রির টাকা কেউ হাতিয়ে নিয়েছে বলে মনে করছেন অশোকবাবুর আত্মীয়েরা। বরাহনগরের বৃদ্ধাশ্রম থেকে কেউ এক জন তাঁকে দু’মাস আগে নিয়ে যান। তার পরেই কলকাতার রাস্তায় খোঁজ মেলে ওই বৃদ্ধের। তাঁর পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, বৃদ্ধের দায়িত্ব তাঁরা নিতে চান।

অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে রয়েছেন অশোকবাবুর স্ত্রী ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁদের মেয়ে অনন্যা চক্রবর্তী। যদিও ইন্দ্রাণীদেবী জানিয়েছেন, বছর কুড়ি আগে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। আর বছর দশেক আগে দ্বৈত নাগরিকত্বের অধিকারী অশোকবাবুও অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে পাকাপাকি ভাবে ভারতে ফিরে আসেন। বছর দুয়েক আগে শেষ বারের মতো তাঁর খবর পান ইন্দ্রাণীদেবীরা। তিনি এই অবস্থায় রয়েছেন জেনে মর্মাহত তাঁরাও।

ইন্দ্রাণীদেবী জানিয়েছেন, বাবার চাকরির সুবাদে দু’বছর বয়স থেকে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় বাস করছেন। তাঁরা আদতে উত্তরপাড়ার বাসিন্দা। অশোকবাবুর বাড়িও সেখানেই। অশোকবাবু তাঁর থেকে বয়সে প্রায় কুড়ি বছরের বড়। তাঁকে বিয়ের সুবাদেই অশোকবাবু অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন। পরবর্তীকালে অশোকবাবু ও তাঁর ভাই বিরাটিতে বাড়ি করেন। ব্যাঙ্কে চাকরির সুবাদে দুই ভাই উত্তরবঙ্গে থাকতেন। বছর ছয়েক আগে বিরাটির বাড়ি বিক্রি করে দেন তাঁরা। নিজের ভাগের টাকা নিয়ে অশোকবাবু উত্তরপাড়ায় গিয়ে এক বন্ধুর বাড়িতে থাকতেন।

অশোকবাবুর ওই বন্ধু বছর দুয়েক আগে বাড়ি বিক্রি করে আমেরিকায় চলে যান। সেটাই ছিল ইন্দ্রাণীদেবীদের পাওয়া শেষ খবর। অশোকবাবুর পরিচিতেরা জানিয়েছেন, বাড়ি বিক্রির টাকা অশোকবাবু কোনও বন্ধুকে দিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গে নতুন বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য। অভিযোগ, তাঁর সেই টাকা লোপাট হয়ে যায়। তার পর থেকেই মানসিক সমস্যা শুরু হয় তাঁর। কোন বন্ধুকে টাকা দিয়েছিলেন, তা আর মনে করতে পারেননি তিনি।

উত্তরপাড়ার বাসিন্দা মৃন্ময় ভট্টাচার্য হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের মাধ্যমে অশোকবাবুর খবর জানার পরে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় পরিচিতদের মাধ্যমে বৃদ্ধের পরিবারের খোঁজ শুরু করেন। তাঁর এক পরিচিত, ব্রিসবেনের বাসিন্দা বিজ্ঞানী গোরাচাঁদ ঘোষ সিডনিতে অশোকবাবুর মেয়েকে খুঁজে বার করেন। তাঁর মাধ্যমেই খোঁজ মেলে ইন্দ্রাণীদেবীর।

সংবাদপত্রে অশোকবাবুর খবর দেখে বরাহনগরের একটি বৃদ্ধাশ্রমের কর্তৃপক্ষ হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাসকে জানান, অশোকবাবু গত নভেম্বর পর্যন্ত তাঁদের ওখানেই ছিলেন। তিনি প্রতি মাসে নগদে টাকা মেটাতেন। গত কয়েক মাস ধরে তিনি বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছিলেন যে, তাঁর টাকা শেষ হয়ে এসেছে। তিনি আর এখানে থাকতে পারবেন না। ১ ডিসেম্বর উত্তরপাড়ার এক ব্যক্তি সই করে অশোকবাবুকে নিয়ে যান। তাঁর সঙ্গে আর এক জন ছিলেন। পরের দিন ভবানীপুরে রাস্তায় প্রায় অচেতন অবস্থায় অশোকবাবুকে উদ্ধার করে পুলিশ।

ইন্দ্রাণীদেবী জানিয়েছেন, নানা কারণে তাঁর সঙ্গে অশোকবাবুর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। প্রাক্তন স্বামীর খবর জানার পরে ইন্দ্রাণীদেবী অশোকবাবুর ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি অম্বরীশবাবুকে জানিয়েছেন, বাড়ি বিক্রির টাকা নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়ে গিয়েছিল অশোকবাবুর। তার পর থেকে তাঁদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বর্তমানে তিনি উত্তরবঙ্গে রয়েছেন। তবে দাদার এই অবস্থা জেনে ভেঙে পড়েছেন তিনি। ইন্দ্রাণীদেবী বলেন, “ওঁর এই অবস্থা দেখে ভাল লাগার কথা নয়। এখানে ওঁকে দেখার কেউ নেই। ওঁর ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। ও দেশেই ওঁকে রাখার কোনও ব্যবস্থা যদি করা যায়, তা হলে আমরা বিষয়টা দেখব।”

অন্য বিষয়গুলি:

Hospital Old Man old age home
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy