Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Coromandel Express accident

আতঙ্ক কাটেনি, হাসপাতাল থেকে মুক্তি সাত জনের 

হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও সেই ভয়ঙ্কর সন্ধ্যার আতঙ্ক এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে উৎপল মণ্ডল, ফরাজ মল্লিকদের। হাওড়া জেলা হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে এখনও যেন ভিতরে ভিতরে কেঁপে উঠছিলেন তাঁরা।

An image of the accident

গত শুক্রবার ওড়িশার বালেশ্বরের কাছে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার দৃশ্য। —ফাইল চিত্র।

দেবাশিস দাশ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২৩ ০৭:১৫
Share: Save:

কারও প্রাণ বেঁচেছে দুর্ঘটনায় উল্টে যাওয়া ট্রেনের কামরার সিটের নীচে আশ্রয় নিয়ে, কাউকে বা ঘুমন্ত অবস্থায় উপরের বাঙ্ক থেকে ছিটকে পড়তে হয়েছে নীচে। কেউ আহত অবস্থায় মৃতদেহের স্তূপ সরিয়ে কোনওক্রমে বেরিয়ে এসেছেন ট্রেনের বাইরে। গত শুক্রবার ওড়িশার বালেশ্বরের কাছে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় করমণ্ডল এক্সপ্রেসের আহত এমন সাত যাত্রী সেই রাতের দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে হাওড়া জেলা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেন মঙ্গলবার সকালে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তাঁদের কাউকে গাড়ি করে, কাউকে বা ট্রেনে করে বিভিন্ন জেলায় বাড়িতে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বর্তমানে শুধুমাত্র এক জনই হাওড়া জেলা হাসপাতালের বার্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁর শরীরের পিছনের অংশ মারাত্মক ভাবে পুড়ে গিয়েছে বলে হাওড়া জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। তাঁর নাম কুমার রায়। তিনি সাঁকরাইলের বাসিন্দা।

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, গত শুক্রবার ট্রেন দুর্ঘটনার পরে বালেশ্বর থেকে বিশেষ ট্রেনে করে নিয়ে আসা হয় সাঁকরাইলের বাসিন্দা কুমার রায়, হুগলির বেগমপুরের বাসিন্দা রাজু মল্লিক, দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের বাসিন্দা রাজেশ মান্ডি, হিলির বাসিন্দা বিপ্লব হেমব্রম, মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা উৎপল মণ্ডল, নদিয়ার বাসিন্দা সইদুল শেখ ও নিজাম মণ্ডল এবং পূর্ব বর্ধমানের বাসিন্দা ফরাজ মল্লিককে। শনিবার সকালে তাঁদের হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অধিকাংশেরই মাথার পাশাপাশি হাতে ও পায়েও ভাল রকম চোট ছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে মঙ্গলবার সকালে কুমার রায়, রাজু মল্লিক ও ফরাজ মল্লিক বাদে বাকিদের বিভিন্ন ট্রেনে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করে হাওড়া জেলা প্রশাসন। রাজুর চোট গুরুতর হওয়ায় তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁর হুগলির বাড়িতে ও ফরাজকে গাড়িতে করে তাঁর পূর্ব বর্ধমানের বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। কুমারের চিকিৎসা চলছে। এ দিন সকালে আহত যাত্রীদের হাসপাতাল থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা করানোর সময়ে হাওড়া জেলা হাসপাতাল ও হাওড়া স্টেশনে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকেরা।

এ দিকে, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও সেই ভয়ঙ্কর সন্ধ্যার আতঙ্ক এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে উৎপল মণ্ডল, ফরাজ মল্লিকদের। হাওড়া জেলা হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে এখনও যেন ভিতরে ভিতরে কেঁপে উঠছিলেন তাঁরা। উৎপল বলেন, ‘‘কামরাটা যখন ওলটপালট খাচ্ছে, তখন মনে হচ্ছিল, আর বাঁচব না। কিন্তু কী ভাবে যেন আমি একটা সিটের তলায় ঢুকে গিয়েছিলাম। পরে অনেক কষ্টে টেনেহিঁচড়ে নিজেকে বার করে আনি। তখন দেখি, মুখের বাঁ দিক থেকে রক্ত ঝরছে।’’

হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেও এ দিনও মানসিক আতঙ্ক পুরোপরি কাটাতে পারেনি ১৭ বছরের কিশোর রাজেশ মান্ডি। রাজেশ জানায়, দুর্ঘটনার সময়ে বাঙ্কের উপরে শুয়ে ঘুমোচ্ছিল সে। হঠাৎ তীব্র ঝাঁকুনিতে সে উপর থেকে নীচে আছাড় খায়। দেখে, সামনের কামরাটা জ্বলছে। তার পরে আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান যখন ফেরে, তখন রাজেশ দেখে, অনেকগুলি মৃতদেহের পাশে পড়ে রয়েছে সে। এর পরে অনেক কষ্টে সেই দেহগুলি সরিয়ে ট্রেনের বাইরে বেরোয় রাজেশ।

প্রায় একই রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে ফরাজ মল্লিকের। বছর বাহান্নর ওই যাত্রী বলেন, ‘‘চোখের সামনে যা দেখেছি, কিছুতেই ভুলতে পারছি না। ভাবলেই ভয় লাগছে। একটা আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে আমাকে। তবে, বেঁচে আছি আর পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারছি, এটা ভেবে কিছুটা শান্তি পাচ্ছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coromandel Express accident Survivor Mental Trauma
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE