Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Corruption in Buying School Uniforms and Raincoats

টেন্ডার ছাড়াই দেড় কোটি ব্যয়ে কেনা হয় বর্ষাতি এবং স্কুলপোশাক, অভিযোগ কলকাতা পুরসভার অডিটে

পুর অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী, স্কুলপড়ুয়াদের জন্য ২৯,৩৮৬টি স্কুলপোশাকও (জামা ও প্যান্ট) কেনা হয়েছিল। এক-একটি সেটপিছু ২০০ টাকা দরে মোট ৫৮ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকায় ওই পোশাক কেনা হয়।

কলকাতা পুরসভা।

কলকাতা পুরসভা। —ফাইল চিত্র।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২৩ ০৭:৪৪
Share: Save:

মাস চারেক আগে কলকাতা পুরসভার অভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্টে মিড-ডে মিল প্রকল্পে মোটা টাকার গরমিলের অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছিল। এ বার স্কুলপড়ুয়াদের জন্য বর্ষাতি ও পোশাক কেনার জন্য ১ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা গরমিলের অভিযোগ উঠল। অভিযোগ, দরপত্র ছাড়াই নিয়ম বহির্ভূত ভাবে ওই বর্ষাতি ও স্কুলপোশাক কেনা হয়েছিল। বর্ষাতি কেনার জন্য বরাদ্দ টাকা অন্য খাতে খরচ করা হয়েছে। এই অভিযোগও উঠছে যে, দরপত্র-বিধি মান্যতা না পাওয়া সত্ত্বেও একটি সংস্থাকে সুবিধা পাইয়ে দিতে তাদের থেকে সর্বাধিক দরে বর্ষাতি কেনা হয়েছে।

মিড-ডে মিলে গরমিলের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরে মেয়র ফিরহাদ হাকিম ওই অডিট রিপোর্ট খতিয়ে দেখে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন পুর কমিশনারকে। সেই তদন্তের কাজ শেষ হতে না হতেই ফের অভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্টে মোটা অঙ্কের গরমিল ধরা পড়েছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, ৫ লক্ষ টাকার বেশি খরচের ক্ষেত্রে যেখানে ই-টেন্ডার ডাকা জরুরি, সেখানে কোনও দরপত্রের বালাই না রেখে কী ভাবে কোটি টাকারও বেশি সামগ্রী কেনা হল, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়ে পুর শিক্ষা দফতরের কাছে সম্প্রতি রিপোর্ট চেয়েছেন পুরসভার রেসিডেন্ট অডিট অফিসার।

অডিট রিপোর্টে বলা হয়েছে, পুরসভা পরিচালিত স্কুলপড়ুয়াদের জন্য ২২ হাজার বর্ষাতি কিনতে পুর শিক্ষা দফতরের তরফে ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি ই-টেন্ডার ডাকা হয়। কিন্তু ওই টেন্ডারের শর্ত পূরণ না হওয়ায় তাতে পুর কর্তৃপক্ষের অনুমোদন মেলেনি। নিয়মমতো ফের দরপত্রের ডাক দেওয়ার কথা। কিন্তু তা না করে পুর শিক্ষা দফতর একটি সংস্থাকে সুবিধা পাইয়ে দিতে তার থেকে বর্ষাতি-পিছু ৩৩৫ টাকা দামে মোট ২২ হাজার ৪০টি বর্ষাতি কেনে। যার মোট মূল্য ৭৩ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকা।

পুর অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী, স্কুলপড়ুয়াদের জন্য ২৯,৩৮৬টি স্কুলপোশাকও (জামা ও প্যান্ট) কেনা হয়েছিল। এক-একটি সেটপিছু ২০০ টাকা দরে মোট ৫৮ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকায় ওই পোশাক কেনা হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও কোনও দরপত্রের আবেদন করা হয়নি। যে সংস্থার থেকে বর্ষাতি কেনা হয়েছে, সেটি ছাড়াও আরও দু’টি সংস্থার থেকে সরাসরি ওই স্কুলপোশাক কেনা হয়েছে।

শুধু তা-ই নয়, বর্ষাতি কিনতে যে ভাবে সর্বশিক্ষা মিশনের বরাদ্দ টাকা অন্য খাতে ব্যবহার করা হয়েছে, তাতেও চরম আপত্তি জানিয়েছে অডিট রিপোর্ট। পুরসভা পরিচালিত স্কুলগুলির বিভিন্ন উন্নয়ন বাবদ ২০১৮ সালে সর্বশিক্ষা মিশনের থেকে শিক্ষা দফতর ৪৪ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকা পেয়েছিল। অডিট রিপোর্ট জানিয়েছে, ওই টাকা থেকে বর্ষাতি কেনার কথা ছিল না। তবু তা থেকে ৪১ লক্ষ এক হাজার টাকা মূল্যের ১২,২৪৪টি বর্ষাতি কিনেছিল শিক্ষা দফতর।

বর্ষাতি ও স্কুলপোশাক কেনার সময়ে পুর শিক্ষা দফতরের মেয়র পারিষদ ছিলেন অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। তিনি বর্তমানে মেয়র পারিষদ (রাস্তা) পদে আসীন। এ প্রসঙ্গে অভিজিৎ বলেন, ‘‘সমস্ত কাজ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে করা হয়েছে।’’ কিন্তু দরপত্র ছাড়াই কী ভাবে মোটা টাকার সামগ্রী কেনা হল? তাঁর দাবি, ‘‘ফাইলে সকলের সই হওয়ার শেষে আমি সই করি। আমি সব ফাইল কি খুঁটিয়ে দেখি? যা বলার আধিকারিকেরা বলবেন।’’ অথচ ঘটনার সময়ে কর্তব্যরত শিক্ষা বিভাগের আধিকারিকেরা সকলেই মুখে কুলুপ এঁটেছেন।

পুরসভার বর্তমান মেয়র পারিষদ (শিক্ষা) সন্দীপন সাহা বলেন, ‘‘অডিট যা যা তথ্য চেয়েছে, তার পূর্ণ সহযোগিতা করতে দফতরকে নির্দেশ দিয়েছি। কেউ ভুল করে থাকলে অডিট যা পদক্ষেপ করার, করবে। আমাদের সরকার বা পুর বোর্ড এই ধরনের কাজকে কোনও ভাবেই প্রশ্রয় দেবে না।’’

বিজেপির পুরপ্রতিনিধি সজল ঘোষের অভিযোগ, ‘‘এই সরকার তথা পুর বোর্ডের প্রতিটি পরতে পরতে দুর্নীতি। ৫ লক্ষ টাকার বেশি খরচ হলেই যেখানে ই-টেন্ডার ডাকার নিয়ম, সেখানে কী ভাবে মোটা টাকা দরপত্র ছাড়াই সরাসরি খরচ করা হল, সে বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া উচিত।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Audit
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE