হেলমেটহীন চার জনকে স্কুটারে বসিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন চালক। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার পরেও গা-ছাড়া ভাবের ছবিটা বদলায়নি।
দুর্ঘটনাস্থলের এক দিকে দাঁড়িয়ে পুলিশ রাস্তা পারাপার করাচ্ছে। তার কয়েক হাতের মধ্যে একের পর এক মোটরবাইক, স্কুটার যাচ্ছে স্কুলপড়ুয়াদের নিয়ে। চালক হেলমেট পরলেও পড়ুয়াদের মাথা খালি। এমনই ছবি ধরা পড়ল বুধবার, সল্টলেকের দু’নম্বর গেটের কাছে। অথচ কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা গেল না পুলিশকে। যদিও মঙ্গলবারের দুর্ঘটনার পরে ওই জায়গায় বসানো হয়েছে স্পিড ব্রেকার। এমনকি, গভীর রাতে পুলিশের বড়কর্তারা সেখানে গিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়েও দেখে আসেন। ওই এলাকায় যত খানাখন্দ ছিল, তা-ও বুজিয়ে দেওয়া হয়।
ওই জায়গাতেই মঙ্গলবার বেলার দিকে বাসের ধাক্কায় স্কুটার থেকে পড়ে মৃত্যু হয় আয়ুষ পাইক নামে ১১ বছরের এক স্কুলপড়ুয়ার। বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশের দাবি, ওই পড়ুয়া হেলমেট না পরেই মায়ের স্কুটারে চেপে ফিরছিল। তার পরেও এ দিন ওই রাস্তাতেই চোখে পড়ল অজস্র হেলমেটহীন পড়ুয়া, যারা বাইক কিংবা স্কুটারে চেপে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যাচ্ছে। হেলমেট ছাড়া চার পড়ুয়াকে স্কুটারে চাপিয়ে নিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে এক চালককে। তাঁর নিজের মাথায় অবশ্স
রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী এ দিন জানিয়েছেন, হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক। তা না হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু এ দিন ওই রাস্তায় হেলমেটহীন চালক কিংবা আরোহীদের দিকে পুলিশের খেয়াল না করা দেখে প্রশ্ন উঠেছে, পরিবহণমন্ত্রী বললেও ব্যবস্থা নেবে কে?
বিধাননগর কমিশনারেটের ট্র্যাফিক বিভাগের দাবি, শুধু মঙ্গলবারের দুর্ঘটনার কারণেই নয়, সাধারণ সময়েও হেলমেট ব্যবহারের জন্য প্রচার চালানো হয়। অনেক ক্ষেত্রে জরিমানাও করা হয়। এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘প্রতিটি স্কুলে গিয়ে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এর নিয়মিত প্রচার চালানো হয়। তা সত্ত্বেও মানুষ সচেতন হন না। নিয়মিত ভাবে জরিমানা করলে পুলিশের বিরুদ্ধে সরব হন সবাই। এ দিনও বিনা হেলমেটের কারণে জরিমানা করা হয়েছে। হেলমেট পরতে সচেতন করা হয়েছে।’’ ট্র্যাফিক পুলিশের দাবি, হেলমেটহীন চালকদের জন্য বর্তমানে পরিবহণ দফতর জরিমানার অঙ্ক ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০০ টাকা করেছে। তা সত্ত্বেও হেলমেট না পরার প্রবণতা ঠেকানো যাচ্ছে না।
তবে এ দিন ঘটনাস্থলে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও হেলমেটহীন বাইক বা স্কুটারচালকদের বিরুদ্ধে জরিমানা করতে দেখা যায়নি পুলিশকে। কয়েক বছর আগে চিংড়িঘাটায় এক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিক্রিয়া দেওয়ার পরদিন সেখানে পথচারী ও বাইকচালকদের উদ্দেশ্যে মাইকে সচেতনতার বার্তা দেওয়া শুরু হয়েছিল। এ দিন সে সব কিছু দেখা যায়নি দু’নম্বর গেটের কাছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই জায়গায় ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীর চেয়ে সিভিক ভলান্টিয়ার বেশি থাকেন। এ দিনও তেমনই ছিল। যাঁদের মধ্যে হেলমেটহীন আরোহীদের ঠেকাতে তৎপরতা এ দিন চোখে পড়েনি।
আয়ুষের মৃত্যুর ঘটনা বাসে বাসে রেষারেষির কারণে, না কি স্কুটারের চাকা পিছলে ঘটেছে, তা-ও খতিয়ে দেখছে বিধাননগর উত্তর থানার পুলিশ। তারা জানিয়েছে, কেন আয়ুষকে হেলমেট পরানো হয়নি বা আয়ুষের মা স্কুটার চালালেও তাঁর লাইসেন্স রয়েছে কিনা, তা ওই পরিবারটির কাছে জানতে চাওয়া হবে। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে আয়ুষের মায়ের লাইসেন্স চেয়ে পাঠাতে পারে পুলিশ।
মঙ্গলবার রাতে ওই পড়ুয়ার পরিবারের থেকে দু’টি ২১৫এ বাসের মধ্যে রেষারেষির অভিযোগ পেয়ে দুই চালককে গ্রেফতার করে বিধাননগর উত্তর থানা। দু’টি বাসই একই মালিকের। ধৃতদের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর মামলা রুজু করা হয়। বুধবার তাঁদের তিন দিনের পুলিশি হেফাজত দিয়েছে বিধাননগর এসিজেএম আদালত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy