প্রিয়া কুমারী। — নিজস্ব চিত্র।
যেন মেঘে ঢাকা তারা! অন্ধকার ভেদ করে ছড়িয়ে যাওয়া তারার দীপ্তির মতোই এই মেয়েরা। দূর আকাশের নয়, ওরা থাকে দমদম স্টেশন চত্বরে গত দেড় দশকের পরিচিত নাম, কান্তা দিদিমণিরই ঘরে। তাঁর তারাগুলির মধ্যে এখন সব থেকে চর্চিত প্রিয়া কুমারী। কারণ, বছর কুড়ির প্রিয়া চলতি বছরে একবারেই পাশ করেছেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সির ইন্টারমিডিয়েট পর্ব।
বৃহস্পতিবারেই ফল বেরিয়েছে ‘দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব ইন্ডিয়া’ (আইসিএআই) পরিচালিত সর্বভারতীয় ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার। সারা দেশে এ বছর এই পরীক্ষায় সাফল্যের হার ১৮.৪২ শতাংশ। প্রিয়ার প্রাপ্ত নম্বর ৫৪ শতাংশ।
অথচ, প্রিয়ার জীবনের কাহিনি অন্য দিকে মোড় নেওয়ার সব রসদ মজুত ছিল। লোকের দোকানে কয়লা ভাঙতেন প্রিয়ার বাবা। তিন মেয়েকে নিয়ে নাজেহাল দশা ছিল তাঁর। স্কুলে পড়ানো তো দূর, দু’বেলা খাবার তুলে দিতে পারতেন না তিন মেয়ের মুখে। পাড়াতুতো জেঠিমার কথায় পড়ার বিনিময়ে খাবারের টানেই বড় বোন প্রীতির সঙ্গে ছোট্ট প্রিয়া এসেছিল কান্তা দিদিমণির পাঠশালায়। সেই থেকে দুই বোনের ঠিকানা ‘কেয়ার অব কান্তাদি’। দিদি প্রীতিও মোটে পিছিয়ে নেই। এ বছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম কম পরীক্ষা দিয়ে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি শুরু করেছেন তিনি।
মেয়েদের কাছে কান্তা দিদিমণি ডাকটা এখন অতীত। ওদের আদর-আবদার যত ঘন হচ্ছে, সংক্ষিপ্ত হচ্ছে ডাকের দৈর্ঘ্য। মণি ঠেকেছে ণি-তে এসে। ১৭ বছর ধরে প্রিয়াকে কোলে-পিঠে করে গড়ে তোলা কান্তা বলছেন, “আর যাই হোক, পড়াশোনা নিয়ে বকতে হয়নি ওদের। এক জন অন্য জনের ভাল গুণগুলো দেখেই এগিয়ে যাচ্ছে। আমি তো আছিই। তবে ওদের পরিশ্রম ও একাগ্রতা ছাড়া সম্ভব হত না।” ২০ জন মেয়েকে নিয়ে এই লড়াইয়ে কান্তা তাঁর পাশে পেয়েছেন দমদম স্টেশনের হকার, সিঁথি থানার পুলিশ, দমদম জংশন ও মেট্রোর আধিকারিকদের এবং জিআরপি ও আরপিএফ-কে।
প্রিয়ার সাফল্যও তার পরিশ্রমের কথাই বলছে। মাধ্যমিকে ৫৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেছিলেন তিনি। উচ্চ মাধ্যমিকে সব বিষয়ে লেটার নিয়ে বাণিজ্য বিভাগে ৮৯ শতাংশ নম্বর পান। শ্যামবাজারের মহারানি কাশীশ্বরী কলেজে বি কমের (অনার্স) চতুর্থ সিমেস্টার দিয়েছেন এ বার। একই সঙ্গে সিএ-র প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে কলেজ যাওয়া। সেখান থেকেই পার্ক স্ট্রিটে আইসিএআই-এর দফতরে রাত আটটা পর্যন্ত চলে ক্লাস। বাড়ি ফিরে এসে ফের এক বার ঝালিয়ে নেওয়া দিনের পড়াশোনা। তবে সাফল্য নিয়ে ভাবিত নন প্রিয়া। তিনি বলছেন, “আমি শুধু পড়াশোনা করেছি। বাকি সব চিন্তা ণি করেছে। পরীক্ষার ভয় কাটাতে সাহস দেওয়া, খারাপ ফলাফলে বকুনি না দেওয়া। জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ আমরা পেয়ে গিয়েছি।”
পড়াশোনায় মুখ গুঁজে থাকা গ্রিন বেল্ট প্রিয়ার অবসর কাটে ক্যারাটে আর জল-রং তুলি হাতে। জীবনের জলছবিতেও রং ভরার স্বপ্ন দেখা শুরু করছেন তরুণী। লক্ষ্য একটাই, এক দিন ফার্ম গড়বেন। যেখানে তাঁর মতো ছেলেমেয়েরা কাজ করবেন। স্বপ্ন সত্যি হবেই, ভরসা রাখেন প্রিয়ারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy