এই বুম লিফ্টারের চাকার নীচেই পিষ্ট হন ওই মহিলা। বুধবার। নিজস্ব চিত্র।
নির্মীয়মাণ উড়ালপুলের নীচে থাকা চায়ের দোকানি দুপুরেও তাঁকে বিস্কুট খেতে দিয়েছিলেন। পরে আর কেউই খেয়াল করেননি ধূলি-ধূসরিত, বছর চল্লিশের ভবঘুরে মহিলাকে। আচমকাই বিকট শব্দ আর লোকজনের চেঁচামেচি। এর কিছু পরেই জানা গেল, দোকানের অদূরে উড়ালপুলের কাজে ব্যবহৃত বুম লিফ্টার যন্ত্রের নীচে চাপা পড়েছেন ওই মহিলা। নিউ টাউনের মহিষবাথান এলাকার লোহাপুলের কাছে বুধবার বিকেলে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। বুম লিফ্টারের চাকার নীচ থেকে ওই মহিলাকে উদ্ধার করে পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
স্থানীয় সূত্রের খবর, কয়েক মাস ধরে লোহাপুল চত্বরের ফুটপাতে থাকছিলেন ওই মহিলা। স্থানীয়েরা এবং কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা জানাচ্ছেন, তাঁকে দিনভর এ দিক-সে দিক দেখা যেত। মাঝেমধ্যে উড়ালপুলের নীচে শুয়ে থাকতেন। পুলিশ জানিয়েছে, এ দিনও ওই মহিলা উড়ালপুলের নীচে চাদর চাপা দিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন। সেই সময়ে উড়ালপুলের কাজের জন্য বুম লিফ্টারটি চালু করেন চালক। অনেক উপরে উঠে কোনও কাজ করার জন্য এই যন্ত্রের বহুল ব্যবহার হয়। এর লিভারের সাহায্যে কর্মীকে উপরের দিকে তুলে দেওয়া যায়, যেখানে সহজে হাত পৌঁছয় না। স্থানীয়েরা জানান, এ দিনও যন্ত্রটির সাহায্যে উড়ালপুলের নীচের অংশের কাজ করা হচ্ছিল বলে সেটি সেখানে রাখা ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ওই মহিলা যে যন্ত্রটির পিছন দিকে শুয়েছিলেন, তা খেয়াল করেননি চালক। ফলে সেটি যখন এগিয়ে-পিছিয়ে কাজ করছিল, তখনই সেটি ওই মহিলার গায়ের উপরে উঠে যায়। ঘটনার পরে এলাকায় হইচই শুরু হয়। বুম লিফ্টারের চালক পলাতক বলে দাবি পুলিশের। লিফ্টারটি আটক করা হয়েছে।
নিউ টাউনের মহিষবাথান থেকে পোলেনাইট এলাকার মধ্যে যোগাযোগ রক্ষাকারী ওই উড়ালপুলটি তৈরি করছে হিডকো। এই কাজের বরাত পেয়েছে একটি ঠিকাদার সংস্থা। হিডকোর এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, চালক খেয়াল করেননি যে, মহিলা ওই যন্ত্রের পিছনেই ঘুমিয়ে রয়েছেন। পুলিশ তদন্ত করছে।’’
ঘটনায় স্তম্ভিত স্থানীয়েরাও। তাঁরা জানান, উড়ালপুলের নীচের চা-খাবারের দোকানগুলির সামনে মাঝেমধ্যে যেতেন ওই মহিলা। এক মাছ বিক্রেতার কথায়, ‘‘বিকেলে দোকান খুলতে এসে শুনি, উড়ালপুলের নীচে চাপা পড়ে মারা গিয়েছেন ওই মহিলা। গতকাল সন্ধ্যাতেও আমার দোকানে এসে বালতিতে হাত ডুবিয়ে মাছ নিয়ে খেলছিলেন।’’ ওই দোকানদারেরা জানান, ওই মহিলার ভাষা তাঁরা বুঝতেন না। ইশারা-ইঙ্গিতে তিনি মনের ভাব প্রকাশ করতেন।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে লেগে থাকা রক্তের দাগ সদ্য ধোয়া হয়েছে। দেখা নেই ঠিকাদার সংস্থার লোকজনের। তবে আটক করা বুম লিফ্টারটি থানায় নিয়ে যাওয়ার সময়ে তার সঙ্গে বাইকে করে সে দিকে যেতে দেখা যায় কয়েক জনকে। যদিও তাঁদের দাবি, তাঁরা ঠিকাদার সংস্থার লোক নন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy