শেখ আবদুল্লার মৃতদেহের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তাঁর স্ত্রী তাসলিমা খাতুন ও পরিজনেরা। মঙ্গলবার, পিজির মর্গের সামনে। —নিজস্ব চিত্র।
জীবন বিমা থেকে নেওয়া ঋণের টাকা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শোধ করতে হবে। তাই স্ত্রী বার বার বারণ করা সত্ত্বেও আত্মীয়ের সঙ্গে গার্ডেনরিচের ভেঙে পড়া বহুতলে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতে এসেছিলেন আবদুল্লা শেখ। দুর্ঘটনার রাতেও স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথোপকথন চলাকালীন বলেছিলেন, ‘‘জীবন বিমাটা না থাকলে, আমি মারা গেলে তোমার কী ভাবে চলবে?’’
গভীর রাতে এক আত্মীয়ের করা ফোনে, ঘণ্টাখানেক আগের সেই কথাই যে সত্যি হয়েছে, তা শুনে কার্যত জ্ঞান হারানোর অবস্থা হয়েছিল মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা তসলিমা খাতুনের। মাস চারেক আগে তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল আবদুল্লার। মঙ্গলবার বিকেলে এসএসকেএমের মর্গের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়ে তসলিমা বলেন, ‘‘ওঁর শেষ কথাই সত্যি হয়ে গেল! টাকা দিয়ে কী করব, আসল মানুষটাই যে চলে গেল।’’ বিয়ের পরে স্ত্রীকে নিয়ে জব্বলপুরে চলে গিয়েছিলেন আবদুল্লা। কিন্তু মাসে ১২-১৩ হাজার টাকা রোজগার হচ্ছিল। তাই সে সব ছেড়ে, আরও কিছু বেশি আয়ের আশায় ফিরে আসেন এ রাজ্যে। ছোট থেকে দিদিমার কাছে মানুষ হয়েছিলেন আবদুল্লা। জীবন বিমা থেকে ঋণ নিয়ে ঘরের ছাউনি মেরামত করেছিলেন। সেই টাকাই শোধ করতে ভগিনীপতি নাসিমুদ্দিনের সঙ্গে সম্প্রতি নির্মাণকাজে যোগ দিয়েছিলেন।
কিন্তু আবদুল্লার এই কাজে ঘোর আপত্তি ছিল তসলিমার। তরুণী কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘‘কত বলেছিলাম, এ সব ভারী কাজ তুমি পারবে না। বললেই ও শুধু বলত, কিছু হবে না। টাকা না থাকলে সংসার করব কী ভাবে?’’ প্রতিদিনের মতো রবিবারেও কাজ শেষের পরে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ তসলিমাকে ফোন করেছিলেন আবদুল্লা। রাত ৯টা পর্যন্ত কথা হয়েছিল ওঁদের। এ দিন কান্নাভেজা গলায় তসলিমা বলেন, ‘‘ভিডিয়ো কল করতে চেয়েছিল। আমি রাজি হইনি। আজ এ ভাবে ওঁকে দেখতে হবে, ভাবতে পারছি না।’’ জোগাড়ের কাজের জন্য দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরি মিলত আবদুল্লার। মাস তিনেক পরে আবারও চার মাসের জন্য সোনার কাজ করতে চলে যাবেন বলে স্ত্রীকে জানিয়েওছিলেন তিনি।
সোনার কাজ ছেড়েই মাস চারেক আগে হুগলির খানাকুলের পাতুলের ঈশানপাড়ায় মামার বাড়িতে ফিরে আসেন আবদুল্লা। শৈশব থেকে সেখানেই তিনি মানুষ। বাবা নিরুদ্দেশ। মা ফের বিয়ে করে বিহারে সংসার পেতেছেন। এ দিন দিদিমা মাসুরা বেগম বলেন, ‘‘বাইশ দিন হল, নাতি রাজমিস্ত্রির কাজের জন্য কলকাতায় গিয়েছিল। সোমবার ভোরে ফোন আসে, যে বাড়িতে নাতি কাজ করছিল, সেটি ভেঙে পড়েছে। তার পর থেকে আমার ছেলেরা ওকে ফোন করলে সেটা বেজে যাচ্ছিল। পরে খবর এল, নাতি আর নেই।’’ বিয়ের পরে কিছু দিন হুগলিতে শ্বশুরবাড়িতে থাকলেও, ফের মুর্শিদাবাদে চলে গিয়েছিলেন তসলিমা। এ দিন সকালে জামাইবাবু নাসিমুদ্দিনের দেহ কবর দিয়েই চলে আসেন এসএসকেএমে স্বামীর দেহ নিতে। মর্গ থেকে দেহ বার করতেই আছড়ে পড়েন তরুণী। বিলাপ করতে করতে শোনা গেল আক্ষেপ, ‘‘হাত-পা ভেঙেও যদি বেঁচে যেত, তা হলেও তো আমার কাছেই থাকত।’’
অন্য দিকে, এই দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম কয়েক জনের এসএসকেএমে চিকিৎসা চলছে। সেখানেই ভর্তি মইনুল হকের বাঁ পায়ের অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। সূত্রের খবর, তাঁর জন্য অস্থি, প্লাস্টিক সার্জারি, সিটিভিএস ও ইমার্জেন্সি মেডিসিনের চিকিৎসকদের নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ট্রমা কেয়ারের আইসিইউ-তে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে মইনুলকে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল রয়েছে। হাসপাতালের বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা ওয়ার্ডে ভর্তি মুশারত জাহানের মেরুদণ্ড ভেঙেছে। এ দিন তাঁর এমআরআই হয়েছে। আজ, বুধবার তাঁর অস্ত্রোপচারের পরিকল্পনা রয়েছে বলে খবর। আরও এক জন মহম্মদ সাহিলুদ্দিন গাজ়ির কোমরের নীচের অংশ ভেঙেছে। এ দিন তাঁকে ইউরোলজির চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy