নীহার আগারওয়াল। —ফাইল চিত্র।
রাস্তার দুই লেনের মাঝের পথ-বিভাজিকা ছুঁয়ে গাড়িটা আছড়ে পড়েছিল তার উপরে বসানো বিদ্যুতের খুঁটির গায়ে। সেটিকে উপড়ে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে গাড়িটি উল্টে যায়। পর পর চার বার উল্টেপাল্টে যাওয়ার পরে শেষে যখন গাড়িটি থামে, তখন তার সামনের অংশ বলতে আর কিছু অবশিষ্ট নেই! গাড়ির এক পাশ দুমড়ে গিয়ে ভিতরের দিকে ঢুকে এসেছে। খুলে বেরিয়ে গিয়েছে চাকা। উইন্ডস্ক্রিনও টুকরো টুকরো হয়ে কাচের গুঁড়ো মাখানো চাদরের মতো ইঞ্জিনের উপরে পড়ে রয়েছে।
শুক্রবার রাতে মা উড়ালপুলে এমন ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল গাড়িটির চালকের। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম নীহার আগারওয়াল (১৯)। জখম এক তরুণী-সহ গাড়িতে থাকা আরও চার জন। তাঁদের নাম প্রোজ্জ্বল আগারওয়াল, পার্থ গারোদিয়া, অনুরাধা দাগা এবং তনয় দাগা। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ দেখে, গাড়ির দরজা খোলা যাচ্ছে না। ভিতরে আটকে রয়েছেন চালক। যাত্রীদেরও নামার মতো অবস্থা নেই। দ্রুত সেখান থেকে খবর যায় কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কাছে। এর পরে তারা এসে গ্যাস কাটার দিয়ে গাড়ির দরজা কেটে নীহারকে বার করে আনে। দ্রুত তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। আহতদের মধ্যে বছর ছাব্বিশের প্রোজ্জ্বলকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বাকি তিন আহতকে প্রথমে এসএসকেএম হাসপাতালে নেওয়া হলেও পরে সেখান থেকে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। তাঁদের প্রত্যেকেরই বয়স ১৭ থেকে ১৮ বছর। তিন জন এখনও সেখানে চিকিৎসাধীন বলে রাত পর্যন্ত খবর।
পুলিশ সূত্রের খবর, নীহার পার্ক স্ট্রিটের একটি কলেজের ছাত্র ছিলেন। তাঁর পরিবারের গাড়িতেই বেরিয়েছিলেন সকলে। চালকের আসনে বসা নীহারের পাশে বসে ছিলেন পার্থ। পিছনে ছিলেন প্রোজ্জ্বল, অনুরাধা এবং তনয়। টালিগঞ্জ সার্কুলার রোড থেকে রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ বেরিয়ে এক রেস্তরাঁয় কিছু ক্ষণ দাঁড়িয়ে মা উড়ালপুলে ওঠেন তাঁরা। ইএম বাইপাস থেকে লেক টাউনে যাওয়ার উড়ালপুলের কাছে একটি ধাবায় যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। কিন্তু তার আগেই ঘটে দুর্ঘটনা। পুলিশের অনুমান, গাড়িটির গতি এতটাই বেশি ছিল যে, নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি নীহার। চিংড়িঘাটার দিকে নামার আগে উড়ালপুলের বাঁকের কাছে গাড়িটি পথ-বিভাজিকায় ধাক্কা মেরে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে উল্টে যায়। প্রগতি ময়দান থানা এবং তিলজলা ট্র্যাফিক গার্ডের কর্মীরা পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেন। আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটিকে প্রগতি ময়দান থানা চত্বরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানেই গাড়িটিকে পরীক্ষা করেন কলকাতা পুলিশের ফেটাল স্কোয়াডের কর্মীরা। গাড়িটির ফরেন্সিক পরীক্ষা হওয়ারও কথা রয়েছে।
টালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের আবাসনে পৌঁছে জানা যায়, ওই আবাসনেরই বাসিন্দা দুর্ঘটনাগ্রস্ত সকলে। আবাসনের নিরাপত্তাকর্মী জানান, প্রায়ই রাতে আড্ডা দেন নীহারেরা। এর পরে গাড়ি নিয়ে রাতে ঘুরতে বেরোন। তেমনই বেরিয়েছিলেন শুক্রবার রাতে। প্রোজ্জ্বলের ফ্ল্যাটে গেলে তাঁর বোন বলেন, ‘‘তিন দিদির পরে ছোট ভাই নীহার। ছেলের শোকে ওঁদের কারও কথা বলার মতো অবস্থা নেই। বাকিরা কোনও মতে বেঁচে ফিরেছে।’’ নীহারের ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর মা মাঝেমধ্যেই সংজ্ঞা হারাচ্ছেন। নীহারের এক দিদি শুধু বললেন, ‘‘ভাই গাড়ি চালাতে খুব ভালবাসত। সেই গাড়িই ওর জীবন কেড়ে নিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy