পুলিশের গাড়িতে আগুন। ছবি: সংগৃহীত।
নিয়ম করে পুলিশ তুলে নিয়ে যাবে। এর পরে আদালতে তুলে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে চালাবে কয়েক দিনের জিজ্ঞাসাবাদ। ভুল হয়ে গিয়েছে বা অন্যদের পাল্লায় পড়ে করে ফেলেছি, বলে দিলেই জামিন হয়ে যায়। ছাড়া পেয়ে কেউ আগের মতোই রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন, কেউ জমায়েতে গিয়ে দেখে নেওয়ার, পুলিশের ‘কালো হাত গুঁড়িয়ে দেওয়া’র স্লোগান তোলেন। অর্থাৎ, পরিস্থিতির বদল হয় না!
সাম্প্রতিক অতীতে আন্দোলনের নামে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, উর্দিধারীকে মারধরের মতো একাধিক ঘটনার ক্ষেত্রে এমনটাই হয়েছে বলে অভিযোগ। কড়া ধারায় মামলা করা হয়েছে, শাস্তি যাতে কঠোর হয় সেই বন্দোবস্ত করা হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করলেও সাধারণত জামিন হয়ে যায় দ্রুত। পরবর্তী ঘটনায় সামনে আসে সেই বেপরোয়া ভাব। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভাঙচুর এবং পুলিশকর্মীদের মারধরের ঘটনার পরে এমন দাবি করছেন এক ধৃতের মা। অভিযুক্তের খোঁজে আসা পুলিশকে আড়াল করে অনেকেই পরিজনকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেন বা লুকিয়ে রাখেন। কিন্তু ওই মহিলা ছেলেকে ধরিয়ে দেন পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অপরাধে।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের ঘটনা সেটি। বিজেপির নবান্ন অভিযানের নামে ওই দিন রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের একাংশ। দেবজিৎ চট্টোপাধ্যায় নামে পুলিশের এক সহকারী নগরপাল গুরুতর আহত হন। ঘটনার একটি ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যায়, আন্দোলনকারীরা মারমুখী হয়ে উঠলে হাতে আঘাত লাগে দেবজিতের। সেই অবস্থায় তিনি ছুটতে শুরু করলে সাদা পাঞ্জাবি পরা এক ব্যক্তি তাঁর কলার ধরে মারমুখী ভিড়ের সামনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন। জানা যায়, সাদা পাঞ্জাবি পরা ওই ব্যক্তি পূর্ব কলকাতার বাসিন্দা। দেবজিৎ পালাতে গেলে তাঁকে পুলিশের ব্যারিকেডের সামনে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়। রবিকান্ত সিংহ নামে এক জন দলবল নিয়ে দেবজিৎকে হেনস্থা করেন। সেই সময়ে পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ দীপ সরকার নামে এক যুবককে চিহ্নিত করে। লালবাজার থেকে দাবি করা হয়, নিজের পোশাক খুলে তাতে আগুন ধরিয়ে গাড়ির সঙ্গে অগ্নিসংযোগ করেছিল দীপ। ওই ঘটনায় ২২ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
হালতুর প্রসন্ন দাস রোডে বাড়ি দীপদের। তার বাবা অসিত সরকার আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক হিসাবে এলাকায় পরিচিত। তাঁর মেয়ে এবং স্ত্রী রয়েছেন। পুলিশ সেখানে দীপের খোঁজে গেলে, ছেলেকে ধরিয়ে দেন তার মা পলি সরকার। বাড়ির সকলে ঠিক করে রেখেছিলেন, ছেলেকে আপাতত দূরে আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সব ঠান্ডা হলে ফেরানো হবে কলকাতায়। কিন্তু বেঁকে বসেন পলি। তিনি বলেন, ‘‘ছেলের ভুল ঢাকলে অন্যায় হবে। তাই ধরিয়ে দিলাম। অপরাধ করলে, দোষ স্বীকার করে নেওয়ার চেয়ে ভাল কিছু হয় না।’’ এক মাস হাজতবাস করে ছাড়া পায় দীপ। একই ব্যাপার হয় রবিকান্ত-সহ বাকি ধৃতদের। সকলেই এখন জামিনে রয়েছে। রবিকান্ত আবার কলকাতা পুরসভার নির্বাচনে ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিজেপির টিকিটে লড়েছে। তার ওয়ার্ডেই ভোটের দিন বোমা পড়েছে দু’জায়গায়!
২০২৩ সালের জানুয়ারিতেও একই ভাবে ধর্মতলায় আন্দোলনের নামে হাঙ্গামা করে ‘ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট’ (আইএসএফ)। পুলিশকে লক্ষ্য করে লাঠি, বাঁশ নিয়ে হামলার অভিযোগ ওঠে। দেদার ছোড়া হয় ইট-পাথর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকেও একের পর এক কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটাতে হয়। গুরুতর জখম হন বৌবাজার থানার ওসি এবং অতিরিক্ত ওসি। ওসিকে কাঁধে করে সরিয়ে নেন সহকর্মীরা। ওই সময়ে প্রশ্ন উঠেছিল, একের পর এক এমন ঘটনা ঘটে কী ভাবে? যেমন প্রশ্ন উঠছে, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে হামলা এবং পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনার পরে। সে দিন ছেলেকে ধরিয়ে দেওয়া পলি এ দিন বলেন, ‘‘সব বাবা-মায়ের উচিত অভিযুক্ত ছেলেকে নিজেই পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া। অন্যায় ঢাকলে অন্যায় বাড়ে। আমার ছেলে কিন্তু আর ওই রকম কিছু ঘটানোর সাহস করেনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy