হতাশ: কিছু কি বেঁচেছে আগুনের গ্রাস থেকে, ঘরের ধ্বংসস্তূপে খোঁজ এক বাসিন্দার। সোমবার, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে। ছবি: সুমন বল্লভ।
দাউদাউ করে জ্বলছে গোটা বাড়ি। দোতলার বারান্দায় দাঁড়ানো বাসিন্দা এক যুবকের সারা শরীরেও আগুন। ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করছেন তিনি। চেষ্টা করেও স্থানীয় বাসিন্দারা কাছে পৌঁছতে পারছেন না তাঁর। শোনা যাচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের শব্দ। অবশেষে বাঁচার জন্য মরিয়া হয়ে দোতলার বারান্দা থেকে লাফ দেন সেই যুবক। সোমবার ভোরে এই ঘটনা ঘটে লেক থানা এলাকার প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের একটি বস্তিতে। আগুন নেভাতে যায় দমকলের পাঁচটি ইঞ্জিন। সকাল ৮টা নাগাদ আগুন নেভে বলে জানায় দমকল। তত ক্ষণে ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে পাঁচ-ছ’টি বাড়ি। তারই একটির বাসিন্দা ওই যুবক।
সরু গলির ভিতরে আগুন লাগার এই ঘটনায় পাঁচ-ছ’টি বাড়ি ভস্মীভূত হওয়ার পাশাপাশি কয়েকটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে। গুরুতর ভাবে অগ্নিদগ্ধ ওই যুবকের নাম রানা নস্কর। ২৬ বছরের ওই যুবক এম আর বাঙুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এ দিন ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ আগুন লাগে। কয়েকটি সিলিন্ডার ফাটার শব্দ শোনা যায়। তাঁদের অভিযোগ, খবর পেয়েও দমকল দেরিতে যায়। স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি মৌসুমী দাসও দেরি করে ঘটনাস্থলে যান। এমনকি, ফোন করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ। এ নিয়ে স্থানীয়েরা বিক্ষোভও দেখান। অভিযোগ প্রসঙ্গে মৌসুমী বলেন, ‘‘আমার মোবাইল সাইলেন্ট হয়ে গিয়েছিল। তাই ফোন এসেছে যে, বুঝিনি। ফলে ঘটনাস্থলে সাড়ে ৮টায় পৌঁছই।’’ দমকলের দেরির প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘খবর পেয়ে আসতে তো সময় লাগেই।’’ ঘটনাস্থলে যান তৃণমূল বিধায়ক দেবাশিস কুমার। ভস্মীভূত বাড়িগুলি তৈরি করে দেওয়ার ও ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি সারানোর আশ্বাস দেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, একটি খাবার সরবরাহকারী সংস্থার ডেলিভারি বয় রানা। সকাল-সকাল কাজে বেরোতেন তিনি। তাই তাঁর মা ভোরে উঠে রান্না করছিলেন। পুড়ে যাওয়া একটি বাড়ির বাসিন্দা স্বপ্না মণ্ডল বলেন, ‘‘দেখলাম, বাড়ির দোতলায় দাঁড়িয়ে রানা, গায়ে আগুন জ্বলছে। তার পরেই লাফ দেন। মনে হল, আগুনের গোলা নীচে পড়ল।’’ রানার মা নীলিমা নস্কর বলেন, ‘‘ছেলে দোতলায় ঘুমোচ্ছিল। আমি, মা, আমার মেয়ে আর নাতনি ছিলাম নীচে। ছেলে নিজের ঘরে স্কুটারের ব্যাটারি চার্জ দিচ্ছিল। ওই ব্যাটারি থেকেই আগুন লেগে থাকতে পারে। সকলে বেরোতে পারলেও ছেলেটা পারেনি।’’ পুলিশের অনুমান, চার্জে বসানো স্কুটারের ব্যাটারি থেকে শর্ট সার্কিট হয়েই এই অগ্নিকাণ্ড।
ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ায় আগুন দ্রুত অন্য বাড়িগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে। ভোরে তখন বেশির ভাগ বাসিন্দাই ঘুমোচ্ছিলেন। আগুন লাগায় আতঙ্কিত বাসিন্দারা ঘুমচোখে বেরিয়ে আসেন। তেমনই এক জন জয়ন্ত হালদার বলেন, ‘‘ঘুমোচ্ছিলাম। চিৎকার শুনে বাড়ি থেকে বেরিয়ে দেখি, পাড়ার কয়েকটি বাড়িতে তত ক্ষণে আগুন লেগেছে। আমরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। রানাকেও বাঁচানোর চেষ্টা করি। প্রথমে রানার বাড়ি থেকে সিলিন্ডার ফাটার শব্দ পাই। তার পরে আরও তিন-চারটি সিলিন্ডার ফাটে। তখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় আগুন। রানা বারান্দা থেকে লাফ দেওয়ার পরে অটোয় করে ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, ধ্বংসস্তূপে ছড়িয়ে রয়েছে পুড়ে যাওয়া বাসনপত্র, প্রেশার কুকার, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস। ধ্বংসস্তূপের কাছেই মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিলেন বাসিন্দা আরতি হালদার। কান্না ভেজা গলায় বলেন, ‘‘আগুনে সব পুড়ে গিয়েছে। কিছু বাঁচাতে পারিনি।’’ বাড়ি পুড়ে গিয়েছে মিঠু মণ্ডলেরও। তাঁর অভিযোগ, ‘‘দমকল দেরিতে এসেছে। একটু আগে এলে এত ক্ষয়ক্ষতি হত না।’’
ঘটনাস্থল কোন থানা এলাকায়, তা নিয়ে প্রথমে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। মিঠু জানান, প্রথমে গল্ফ গ্রিন থানায় খবর দেওয়া হয়। সেখান থেকে বলা হয়, এলাকাটি লেক থানায় পড়ে। তখন লেক থানায় খবর যায়।
ভস্মীভূত এবং ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির বাসিন্দাদের স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং স্থানীয় স্কুলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরপ্রতিনিধি মৌসুমী জানান, পুরসভা থেকে বাসিন্দাদের খাবার, পোশাকের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy