Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Kanchanjunga Express Accident

কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় শনাক্ত করা হল দমদমের বিশ্বপ্রতাপকে

দক্ষিণ দমদম পুরসভার ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণদাঁড়িতে মা, স্ত্রী এবং সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া, ১২ বছরের ছেলেকে নিয়ে থাকতেন বিশ্বপ্রতাপ। আদতে বিহারের বাসিন্দা। তাঁর বাবা এখনও সেখানে থাকেন। তবে বিশ্বপ্রতাপ দীর্ঘদিন ধরেই দমদমে।

দুর্ঘটনার মুহুর্ত।

দুর্ঘটনার মুহুর্ত। —ফাইল চিত্র।

সৌমিত্র কুণ্ডু ও কাজল গুপ্ত
শিলিগুড়ি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২৪ ০৮:০৭
Share: Save:

দেড় মাস পরে গুয়াহাটি থেকে দক্ষিণ দমদমের বাড়িতে ফিরছিলেন বিশ্বপ্রতাপ মিশ্র (৩৬)। সোমবার সকালে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার খবর পেতেই খোঁজ শুরু করে তাঁর পরিবার। মেলেনি খোঁজ। সাড়া মেলেনি বিশ্বপ্রতাপের মোবাইলে। তাঁর এক ভাই অমিত আত্মীয় বিকাশ কুমারকে নিয়ে মঙ্গলবারই নিউ জলপাইগুড়িতে পৌঁছন। বুধবার বেলা ১১টা নাগাদ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের মর্গে বিশ্বপ্রতাপের দেহ শনাক্ত করেন তাঁরা। অমিত বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম, ট্রেন দুর্ঘটনায় পড়লেও দাদার হয়তো কিছু হয়নি। সে আশা নিয়েই স্টেশনে খুঁজতে গিয়েছিলাম। না পেয়ে শিলিগুড়ি এসেছি। ভেবেছিলাম, জখম হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। মর্গে গিয়ে ওকে দেখতে হবে, ভাবিনি!’’

দক্ষিণ দমদম পুরসভার ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণদাঁড়িতে মা, স্ত্রী এবং সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া, ১২ বছরের ছেলেকে নিয়ে থাকতেন বিশ্বপ্রতাপ। আদতে বিহারের বাসিন্দা। তাঁর বাবা এখনও সেখানে থাকেন। তবে বিশ্বপ্রতাপ দীর্ঘদিন ধরেই দমদমে। আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। টালির চালের ঘরে মৃত্যুসংবাদ পৌঁছতেই তাঁর সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া ছেলে, মা ও স্ত্রী কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁরা কোনও কথা বলতে চাননি। মৃতের দুই ভাই ওই এলাকাতেই বসবাস করেন। তাঁর আর এক ভাই অঙ্কিত মিশ্র এ দিন জানান, একটি নির্মাণ সংস্থায় কর্মরত ছিলেন বিশ্বপ্রতাপ। কর্মসূত্রে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হত তাঁকে। সেই সূত্রে দেড় মাস আগে গিয়েছিলেন গুয়াহাটিতে। সেখান থেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। সোমবার তাঁর বাড়ি ফেরার কথা ছিল।

ট্রেন দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পরিবারের উদ্বেগ বাড়ে। দুর্ঘটনায় পড়া কামরা ফেলে শিয়ালদহে ফেরা ট্রেনে বিশ্বপ্রতাপকে না পেয়ে অমিতরা রওনা হন শিলিগুড়ির উদ্দেশে। নিউ জলপাইগুড়িতে গিয়ে রেলের আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ছবি দেখান দাদার। জখমদের অনেকেই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন জেনে ভেবেছিলেন, সেখানেই দেখা পাবেন বিশ্বপ্রতাপের। কিন্তু জখমদের তালিকায় তাঁর নাম পাওয়া যায়নি। হাসপাতালের ওয়ার্ডেও তন্ন তন্ন করে খুঁজে দাদাকে পাননি। মঙ্গলবার রাতে অমিত ফের দাদার ছবি দেখান হাসপাতালের আধিকারিকদের। জানতে পারেন, অশনাক্ত একটি দেহ রয়েছে মর্গে। তা দেখতে এ দিন সকালে অমিত এবং বিকাশকে আসতে বলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দেহ দেখে সন্দেহের অবসান হয়।

হাসপাতালের সুপার সঞ্জয় মল্লিক বলেন, ‘‘ওই মৃতদেহের পরিচয় এ দিন জানা গিয়েছে। পরিবারের লোকেরা এসেছেন। নিয়ম মেনে ময়না তদন্তের পরে দেহ বাড়িতে পাঠানোর বন্দোবস্ত করা হয়েছে।’’

মৃত্যুর খবর পেয়ে এ দিন শোকার্ত পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু, স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি মায়া মাইতি, দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ পার্থ বর্মা। তাঁদের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন মৃতের মা ও স্ত্রী। পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন মন্ত্রী। এলাকায় শোকের ছায়া নেমেছে। কী ভাবে পরিবারটির চলবে, তা নিয়ে চিন্তায় প্রতিবেশীরা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy