সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ‘প্রচার’ করছেন দেখে ফ্ল্যাট কিনেছিলেন তাঁরা। কিন্তু সেই ফ্ল্যাট কিনে আজ তাঁরা ‘প্রতারিত’! প্রতিশ্রুতি মতো ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা তো মিলছেই না, উল্টে চুক্তি-বহির্ভূত ভাবে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছে মালিক পক্ষের তরফে। এমনই অভিযোগ তুলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলা থানার দ্বারস্থ হলেন আবাসিকেরা। আবাসন প্রকল্পের মুখ্য প্রচারক হিসাবে সৌরভের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ ও আবাসনে নিরাপত্তাজনিত সমস্যার সমাধান চেয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন তাঁরা।
আবাসিকদের অভিযোপত্রটি হাতে আসার পরেই সৌরভের সঙ্গে যোগাযোগ করে আনন্দবাজার অনলাইন। সৌরভ বলেন, ‘‘আমি ওই প্রোজেক্টের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর ছিলাম মাত্র। এর সঙ্গে আমার আর কোনও যোগ নেই। আমি এ বিষয়ে কিছু জানিও না। ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসাবে আমার যে টাকা পাওয়ার কথা ছিল, আমি নিজেই সেই টাকা এখনও পাইনি।’’
পুলিশের কাছে জমা পড়া অভিযোগপত্রে সব মিলিয়ে ১২৭ জনের সই রয়েছে। অভিযোগকারীরা জানান, তাঁরা মহেশতলা থানার অন্তর্গত ১ নম্বর বাটানগর রোডের আবাসনের বাসিন্দা। গোটা আবাসন প্রকল্পে কমবেশি পাঁচ হাজার ফ্ল্যাট রয়েছে। ২০১৩ সালের প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। অভিযোগকারী আবাসিকদের দাবি, এর পর ২০১৫ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে ছিলেন সৌরভ, তৃণমূলের অভিনেতা-সাংসদ দেব এবং আবাসন প্রকল্পের মালিক নিজে। সেই অনুষ্ঠানেই আবাসন প্রকল্পের সঙ্গেই ফিল্ম সিটি, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ক্রিকেট অ্যাকাডেমি ও হাসপাতাল উদ্বোধনের ঘোষণা করা হয়। সৌরভকেও নিয়োগ করা হয় প্রকল্পের ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’ হিসাবে। এর পর থেকেই শুরু হয় বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে, খবরের কাগজে প্রচার। শহর ছয়লাপ হয়েছে আবাসন প্রকল্পের পোস্টার, ফ্লেক্সে। অভিযোগকারীদের দাবি, সৌরভের কথায় ‘ভরসা’ পেয়ে, সৌরভের প্রতি আস্থা থেকেই তাঁরা ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। কিন্তু আবাসিক যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তার একটিও পূরণ হয়নি! শুধু তা-ই নয়, আবাসন প্রকল্পের প্রথম দফার যে কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল ২০১৭ সালের মধ্যে, তা এখনও অসম্পূর্ণ বলেই দাবি আবাসিকদের।
অভিযোগকারীদের দাবি, চুক্তি মতো আবাসিকদের যে সব ন্যূনতম সুযোগসুবিধা, স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তা পাওয়ার কথা ছিল, তা-ও মিলছে না। আবাসনে জলের সমস্যা রয়েছে। অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা সেই ভাবে নেই। আবাসনে সিসি ক্যামেরার সংখ্যাও কম। আর যেগুলি লাগানো রয়েছে, সেগুলির অধিকাংশই আবার খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। এমনকি প্রায়ই বিকল হয়ে যায় আবাসনের লিফ্টও। বেশ কয়েক বার আবাসিকেরা লিফ্টে আটকেও পড়েছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে। আবাসনে উপযুক্ত নিরাপত্তা-নজরদারি না থাকায় মধুচক্রের মতো বিভিন্ন অসামাজিক কাজকর্ম চলছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন আবাসিকেরা।
টাকাপয়সা নিয়েও মালিক পক্ষের সঙ্গে বিবাদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগপত্রে। অভিযোগকারীদের দাবি, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ফ্ল্যাট হস্তান্তরে দেরি হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ছিল মালিকপক্ষের। ২০১৭ সালে যাঁদের ফ্ল্যাট পাওয়ার কথা ছিল, সব টাকা মেটানোর পরেও তাঁদের অনেকেই এখনও ফ্ল্যাট হাতে পাননি। বাকিরা দেরিতে পেয়েছেন। চুক্তি মতো তাঁরা কেউই ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি। উল্টে, চুক্তি-বহির্ভূত ভাবে ফ্ল্যাটমালিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা চাওয়া হচ্ছে চাপ দিয়ে। আবার চুক্তি মতো ৮০ শতাংশ টাকা ক্রেতার থেকে নেওয়ার পরেও চুক্তি বাতিল করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করা হয়েছে।
অভিযোগকারী আবাসিকদের দাবি, যা পরিস্থিতি, তাতে এই আবাসন আর মোটেই বসবাসের উপযুক্ত নয়। ২০১৫ সালে যাঁরা ফ্ল্যাট কিনেছিলেন, তাঁদের অনেকেই কম দামে ফ্ল্যাট বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, এর দায় যদি মালিক পক্ষের হয়, তা হলে ‘প্রচারক’ হিসাবে সৌরভও এর দায় এড়াতে পারেন না। কারণ, তাঁর প্রতিশ্রুতিতেই অধিকাংশ লোক ফ্ল্যাট কিনতে আগ্রহী হয়েছিলেন। তাঁদের প্রতারিত করা হয়েছে বলে দাবি করেই প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন ফ্ল্যাটমালিকেরা।
অভিযোগপত্রে যাঁরা স্বাক্ষর করেছেন, তাঁদেরই এক জন কাজি মাসুম আখতার আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, এটা বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান। তাঁর কথা শুনে আমরা ফ্ল্যাট কিনেছি। আজ যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে এর দায় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের উপরেও বর্তায়। আমরা এর প্রতিকার চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy